ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে গত তিনদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একাংশ। এবার ক্লাস বর্জন করে ‘অনশনে’ বসেছে তারা। তবে ক্লাস বর্জন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
রোববার সকাল ১০টা থেকে প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসের গেটের সামনে বসে প্রায় দু’শ শিক্ষার্থী এ ‘অনশন’ কর্মসূচি পালন করছে।
ভিকারুননিসার কলেজ শাখার ছাত্রী লামিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিচার চাইতে গিয়ে কেন অবিচার হবে? আমরা অরিত্রির আত্মহত্যার প্ররোচনার বিচার দাবি করেছি, অথচ বিচারের নামে করা হচ্ছে অবিচার। আমাদের মায়ের মতো ক্লাস শিক্ষক হাসনা হেনা আপাকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হয়েছে। তার মুক্তি ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমারা হাসনা হেনা আপার মুক্তির দাবিতে আমরা আজ (রোববার) সকাল থেকে অনশন আন্দোলন শুরু করেছি। যতক্ষণ আমার মাকে (শিক্ষক) ফিরে না পাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অনশন ও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।’
Advertisement
শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবিতে গত তিনদিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল শনিবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাস বয়কট করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে কলেজ ইউনিফর্ম পরে বেইলি রোডের ১নং গেটের সামনে রাস্তার পাশে বসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
দেখা গেছে, ‘আইন তোমাকে ধিক্কার, যদি নির্দোষ শিক্ষিকার স্থান হয় কারাগারে’; ‘ফিরব না ফিরব না, মাকে ছাড়া ফিরব না’; ‘মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, আমার মায়ের মুক্তি চাই’; ‘মাকে ছাড়া ফিরব না’; ‘বিচার করতে গিয়ে কেন অবিচার’- এমন নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের চারপাশে অবস্থান করছেন অভিভাবকরা। তারাও শিক্ষার্থীদের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।
দুপুরে দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা।
তবে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন নিয়ে বিচলিত নয় এ প্রতিষ্ঠান শিক্ষকরা। স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি শিক্ষক মুশতারী সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার টানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। এখানে আমাদের বাধা দেয়া বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার পরামর্শ দেয়নি বা তাদের বাধাও দেইনি, তারা নিজ উদ্যোগে আন্দোলন শুরু করেছে। তাই এই বিষয় নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
সহকর্মী গ্রেফতারে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে তাই আইনিভাবে এটি মোকাবেলা করা হবে।’
এ ছাড়া স্কুল শাখার একজন ও কলেজ শাখার দু’জন শিক্ষার্থী শিক্ষামন্ত্রী বরাবর তাদের একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নুসরাত মম নামে ভিকারুননিসা নূন কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আখতার ও প্রভাতী শাখার শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা।
এমএইচএম/এমবিআর/পিআর