খেলাধুলা

মাশরাফির মতে টেস্টের মতো সহজ হবে না ওয়ানডে সিরিজ

এমনিতেই টেস্টের চেয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ড অনেক ভাল, সমৃদ্ধ। আর ইতিহাস বলছে, সাধারণত টাইগাররা দেশের মাটিতেও টেস্টের তুলনায় ওয়ানডেতে ভাল খেলে। ট্র্যাক রেকর্ডও তুলনামূলক ভালো। তার প্রমাণ ২০১৫ সালে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজ জয়।

Advertisement

ঐ তিন পরাশক্তির মধ্যে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২-১’এ সিরিজ জেতা বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানিদের ‘বাংলাওয়াশ’ করে ছেড়েছিল। কিন্তু তিন দলের কারো সাথেই টেস্ট সিরিজ জেতা সম্ভব হয়নি।

ভারতের সাথে ফতুল্লায় হওয়া একমাত্র টেস্ট সিরিজটি বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটিও বৃষ্টির কারণেই আসলে ড্র থেকে গেছে।

আর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে খুলনায় তামিম ইকবালের ডাবল সেঞ্চুরি আর ইমরুল কায়েসের টেস্ট ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বীরের মত ড্র করলেও পরের টেস্টে ঢাকায় ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ।

Advertisement

সেখানে এবার টেস্টে বিপরীত চিত্র। জিম্বাবুয়ের পর এই প্রথম টেস্টে কোন দলকে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করেছে সাকিবের দল। টেস্টে পাত্তাই পায়নি ক্যারিবীয়রা। দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০’তে হারই শুধু নয়, রীতিমত খাবি খেয়েছে। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচ ৬৪ রানে জেতা সাকিব বাহিনী ঢাকায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পেয়েছে ইনিংস জয়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই টেস্টে টাইগারদের অমন বীরোচিত পারফরমেন্স ও একচেটিয়া প্রাধান্য দেখে অনেকেই ওয়ানডেতেও বাংলাদেশকে ফেবারিট মেনে উইন্ডিজকে আন্ডারডগ ভাবতে শুরু করেছেন। তাদের বিশ্বাস, রভম্যান পাওয়লের ক্যারিবীয় বাহিনীকে তুলোধুনো করবে মাশরাফির দল।

বেশীরভাগ বাংলাদেশ সমর্থক এমনটাই ভাবছেন। তাদের ধারণা ও বিশ্বাস, একদিনের সিরিজেও একচেটিয়া জিতবে বাংলাদেশ। কিন্তু দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কি ভাবছেন? বাংলাদেশ অধিনায়কও কি নিজেদের ফেবারিট মানছেন?

সিরিজ সম্পর্কে তার ধারণা কি? আবার ভাববেন না মাশরাফি নিজেদের ফেবারিট ভেবে ক্যারিবীয়দের নাকাল করার চিন্তায় বিভোর। মাশরাফির ভাবনা ভিন্ন। টাইগার অধিনায়ক অনেক বেশী বাস্তববাদী।

Advertisement

তার অনুমান, দুই দলের সম্ভাবনা সমান। কেন সমান? তার ক্রিকেটীয় ব্যাখাও আছে। মাশরাফি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন টেস্ট আর ওয়ানডে এক নয়। ওয়ানডেতে তার দলের ট্র্যাক রেকর্ড ভাল হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে হলে বাড়তি কিছু করে দেখাতে হবে। শুধু স্পিন দিয়ে ক্যারিবীয়দের ঘায়েল করাও হবে কঠিন। কেন কি কারণে কঠিন? তারও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাশরাফি।

মাশরাফির ব্যাখ্যায় যাবার আগে খুব সংক্ষেপে টেস্ট সিরিজের চালচিত্রটা পরখ করে দেখে নিন। বলার অপেক্ষা রাখে না ব্যাটসম্যানরা বিশেষ করে মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিম ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেও টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের রুপকার ছিলেন স্পিনাররা।

চার স্পিনার ফর্মূলা ক্লিক করেছে। মিরাজ (১৫টি), তাইজুল (১০টি), সাকিব (৯টি) ও নাঈমের (৬টি) বিষাক্ত স্পিন ছোবলেই কুপোকাত ক্যারিবীয়রা। দুই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০ উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা। মাশরাফি কথায় ও যুক্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছেন, ওয়ানডেতে শুধু স্পিনারদের ওপর ভর করেও জেতা সম্ভব না। তাই তার ধারণা টেস্টে জিততে হলে আরও বাড়তি কিছু করতে হবে।

তাইতো দু’দলের সম্ভাবনার কথা বলতে বলা হলে মাশরাফি বলে বসেন, ‘আমি বলবো সমান সম্ভাবনা। আর আমার মনে হয় না, টেস্টের মতো বা আগে পরে যেসব ম্যাচ জিতেছি, ওয়ানডে সিরিজটি অত সহজ হবে।’

কারণ কি?- ‘কারণ যেটা বললাম যে, ওদের ক’জন দূর্দান্ত ফাস্ট বোলার আছে। যারা জোরে বোলিং করবে। যেটা হয় যে, জোরে বোলারদের বলে অনেক সময় হুটহাট করে উইকেট পড়ে গেলে শুরুতে চাপ এসে লাগে।’

এছাড়া মাশরাফির ধারণা টেস্টের মত স্পিন দিয়ে ক্যারিবীয়দের ঘায়েল করাও হবে কঠিন। এ সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা, ‘আজকাল ওয়ানডেতে ৪০ ওভার পর্যন্ত ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতাও আছে। কাজেই পাওয়ার প্লে’তে যখন তখন স্পিনার ব্যবহারে আছে বড় ধরনের ঝুঁকি। আপনি পাওয়ার প্লে’তে ৩০ গজের ভিতরে অতগুলো ফিল্ডার রেখে স্পিন আক্রমণ করে সফল হওয়া বেশ কঠিন। কারণ স্পিনে সব জায়গা নিরাপদ রেখে বল করা সম্ভব না। সেটা বরং পেস দিয়ে সম্ভব।’

‘পাওয়ার প্লে’তে তাই স্পিনারদের চেয়ে পেসারের ব্যবহার বেশী। তারা তুলনামুলক নিরাপদও। আপনি পেস বোলিংয়ে কোন জোনকে অক্ষত রেখে সুনিয়ন্ত্রীত বোলিং করলেই চলে। স্পিনারদের বলে ইম্প্রোভাইজ করার সুযোগ ও সময় বেশী। তাই কোন বিশেষ অঞ্চল বা জায়গা আটকে বোলিং করা কঠিন।’

তাই মাশরাফির সাবধানবাণী, ক্যারিবীয়রা যাতে জুটি বড় করতে না পারে- সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। টাইগার অধিনায়কের শেষ কথা, ‘এমনি এমনি তো জেতা সম্ভব না। অবশ্যই হোমওয়ার্কটা খুব ভাল হতে হবে। তার সাথে মাঠে সেই লক্ষ্য-পরিকল্পনার যথাযথ ও শতভাগ বাস্তবায়ন দরকার। অন্তত ৮০ ভাগ ঠিক থাকলেও হয়তোবা ভালো ম্যাচ হবে।’

এআরবি/এসএএস/জেআইএম