আপিল শুনানিতে আইনগত বিবেচনায় নিয়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন গ্রহণ করার পক্ষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালকুদার রায় দেয়ার পর ইসির আপিল বিভাগের কক্ষে হট্টগোল শুরু হয়। মাহবুব তালকদারের রায়ের পর নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, না এটা হবে না। এটা একজনের রায়। একজনের রায় ইসির রায় নয়। এটা ফোর কোর্টের রায় নয়। এরপরই শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি।
Advertisement
শনিবার দুপুরে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফের শুনানি শুরু হয়।
আপিলে শুনানি ঘিরে সকাল থেকেই ছিল ইসিতে উত্তেজনা। বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী শতাধিক আইনজীবী ইসিতে আসেন। শুনানিতে অংশ নেন। দুপুরে আপিল শুনানিতে বিএনপির আইনজীবীরা নানা রেফারেন্স ব্যবহার করেন। শুনানি দীর্ঘ হওয়ায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত শুনানি স্থগিত করা হয়।
বিকেলে ফের শুনানি শুরু হলে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি একপর্যায়ে বলেন, ‘আমার কিছু বলার আছে। আমার কথা বলা শেষ করার পর যেন রায় দেয়া হয়। এরপর তিনি আর্টিকেল ৬৬ এর বি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইটস নট এ আরপিও অর্ডার। আমার কথা আগে শোনা হোক। রং কনসেপ্ট উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।’
Advertisement
শুনানিতে সিইসি বলেন, ‘আপনার একই কথা চার বার শুনলাম। আর কত বার শুনব।’ এরমধ্যই খালেদার পক্ষেই যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যান আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তবে বারবার সিইসি ও ইসি কমিশনাররা তার কথায় হস্তক্ষেপ করেন।
তখন খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘জাস্ট এ মিনিট। নো নো আই এম নট ফিনিশড।’মাসুদ আহমেদ তালুকদারের এমন বক্তব্যের মধ্যে রায় ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘আমার রায়, আপিল নম্বর ৩৮৫/২০১৮, আপিল নং ৪৪০/২০১৮, আপিল ৫৮৭/২০১৮। আপিলকারীর নাম বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রার্থীর আসন যথাক্রমে ২৬৫ ফেনী-১, ৪১ বগুড়া-৬ ও ৪২ বগুড়া-৭। আমার রায়, আইনগত বিবেচনায় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন মঞ্জুর করার পক্ষে আমি রায় প্রদান করলাম। আমি মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার।’
এরপর আপিল শুনানির কক্ষে হট্টগোল শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘নো নো ডিসিশন একজনের। একজনের ডিসিশনই সবার ডিসিশন না। আমাদেরও রায় রয়েছে।’
Advertisement
এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন বলে ওঠেন, ‘এটা হলো একজনের রায়। একজনের রায় ইসির রায় নয়। এটা ফোর কোর্টের রায় নয়। এটা ফোর কোর্টের রায় নয়।’ এরপরই শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি।
এ সময় মাইক নিয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ ধারা অনুযায়ী যেকোনো দণ্ডপ্রাপ্তদের আমরা বিবেচনা করতে পারি না। আমাদের রায় হলো, আমার রায় হলো, এ রায় (তালুকদারের রায়) মঞ্জুর করা যায় না, এ আপিল মঞ্জুর করা যায় না।’ এরপরই উপস্থিত আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা উল্লাস প্রকাশ করেন।
এ সময় আরেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘যে আপিল এখানে উত্থাপন করা হয়েছে সংবিধানের ৬৬ ধারায় এ রায় না মঞ্জুর করা হলো।’
এরপর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আমি বেগম কবিতা খানম বলছি, ‘যেহেতু তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত দণ্ড বহাল আছে। আর যে রিটার্নিং অফিসারের অর্ডারের ওপর বক্তব্য রাখা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার অর্ডারের স্প্রিরিটও আমরা দেখেছি। সেখানে সবগুলো মামলার বক্তব্য রয়েছে। এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে বক্তব্য রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরপিওর রেফারেন্সও ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আমরা তার (খালেদা) আপিলটা না মঞ্জুর করছি।’
এরপর সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আমি আমার তিনজন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাহাদাত হোসেন, কবিতা খানম ও রফিকুল ইসলাম সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দণ্ড বহাল আছে সে কারণে আপিল করেছিল। সে আপিল আমি নামঞ্জুর করলাম।’
এরপর ইসি সচিব ফের বলেন, ‘যেহেতু পাঁচজন নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন কমিশনার আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেছেন এবং একজন কমিশনার আপিল মঞ্জুর করেছেন বিধায়, ৪-১ ভোটে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন না মঞ্জুর করা হলো।’
জেইউ/এএস/এনডিএস/জেআইএম