হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভ্রমণগুলো আসলেই অনেক সুন্দর হয়, তা আরেকবার প্রমাণ পেলাম। ১১ নভেম্বর চা খেতে খেতে বন্ধু পাপ্পু বলছিল, ইন্ডিয়া যাবি? বললাম, কবে? সে বলল, ২০ নভেম্বর রাতে। আমি বললাম, কয় দিনের ট্যুর? পাপ্পু বলল, সেখানে দুই রাত থাকবো। শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকা পৌঁছে অফিস করবো। এরপর জানতে চাইলাম, কী করতে হবে তাহলে? বন্ধু বলল, প্রথমেই ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে।
Advertisement
যেই কথা; সেই কাজ। সাথে সাথে কমলাপুর গিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। দুর্ভাগ্যবশত এসির টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় শোভন চেয়ারের টিকিট কিনলাম ৫৫০ টাকা করে। রিটার্ন টিকিটের জন্য কথা বলতে গেলে, তারা জানালো- পঞ্চগড়ের স্টেশন এখনো অনলাইন না হওয়ায় এখান থেকে পঞ্চগড়-ঢাকার টিকিট কাটা যাবে না। সাথে সাথে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে পঞ্চগড় থেকে ঢাকার টিকিট কেটে শান্ত হলাম।
এর পরে প্রধান কাজ ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়া। আমরা যেহেতু তিন জন, তাই সবার পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে পরদিন গেলাম সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়। ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা দিয়ে রশিদ বুঝে নিলাম। ডলার ও ইন্ড্রোসমেন্ট করে নিলাম।
> আরও পড়ুন- কলকাতায় ঘুরতে কোথায় কেমন খরচ
Advertisement
এখন শুধু বাকি দিন গোনা আর ব্যাগ গোছানো। এর মাঝেই বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপে দার্জিলিংয়ের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম! যাওয়ার আগের দিন জানলাম, সেখানে নাকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কীভাবে কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। শেষে ব্যাগ খুব বেশি বড় করলাম না। তবে পায়ের বড় মোজা ও হাত মোজায় রক্ষা পেয়েছিলাম।
যাত্রা শুরু কমলাপুর থেকে। ট্রেন ছুটে চলছে নিজস্ব গতিতে। আমরাও গল্প করছিলাম কিন্তু একটু পরেই টের পেলাম, পেছনে দলছুট ধরনের ৬-৭ জন। শরীর যখন ঘুমে কাতর; তখনো তাদের গল্প, চিল্লা-পাল্লা থামছেই না। এর মাঝে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, টেরও পাইনি।
সকাল সাড়ে আটটায় পঞ্চগড় পৌঁছলাম। নামার সময় পেছনের দলছুট গ্রুপের একজনকে বললাম, ভাই, আজ সারাদিনে যখনই আমার ঘুম আসবে; তখনই আপনার কথা মনে পড়বে। উত্তরে সে বলল, জীবনে বহুদিন আপনার মত কাউকে নাক ডাকতে দেখিনি। শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম।
> আরও পড়ুন- ভুটানের কোথায় কী দেখবেন?
Advertisement
স্টেশন থেকে বের হয়ে অটোতে বাংলাবান্ধা যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে গেলাম। দেরি দেখে সকালের নাস্তাটা সেরে নিলাম। বাসে চড়ে সোজা বাংলাবান্ধা। ১১টা নাগাদ বাংলাবান্ধা পৌঁছে ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে বর্ডার অতিক্রম করলাম। এরপর ভারতীয় ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে সাড়ে ১২টায় শিলিগুড়ির অটোতে উঠলাম।
বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিসে এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা, তিনি যাবেন শিলিগুড়ি। এখন আমরা চার জন হয়ে গেলাম। একটার মধ্যেই শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার জন্য জিপ স্ট্যান্ডে হাজির। এক জিপে নয় জন করে নেয়। সামনে একজন, মাঝখানে চার জন আর পেছনে চার জন। আমাদের বড় ভাই শিলিগুড়ি নেমে যাওয়ায় আমরা তিন জনই মাঝখানের চার সিট নিয়ে আরামে চলে যাই।
জিপ ছাড়ার চল্লিশ মিনিট পরেই টের পাই শীতল বাতাস। পাহাড়ি পথও শুরু হয়ে গেছে। সাপের মত আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি এগিয়ে চলছে। নিচের দিকে তাকালে ভয়ও হচ্ছে। মাঝে মাঝে মেঘের ভেলা এসে আমাদের ছুঁয়ে শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে।
> আরও পড়ুন- কলকাতায় ট্রাম ভ্রমণে একদিন
বিকেল সাড়ে চারটায় পৌঁছে গেলাম পাহাড়ি জেলা দার্জিলিং। নতুন এক দেশ, নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি। হোটেল ঠিক করে রুমে ব্যাগ রেখেই বেরিয়ে পড়লাম মুসলিম হোটেলের সন্ধানে। পেট পুরে খেয়ে নিলাম গরুর মাংস দিয়ে। তখন সাতটা বেজে গেছে। দার্জিলিং যেন মৃত্যুর যন্ত্রণায় ধুঁকছে।
ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে গিয়ে দরদাম ঠিক করে হোটেলের ঠিকানা দিয়ে যখন চলে এলাম; তখন দার্জিলিং মৃতপ্রায়। সব দোকান বন্ধ। হোটেলে এসে মনে হচ্ছে- শরীর যেন বিধ্বস্ত হয়ে আছে। একটু ফ্রেশ হয়ে ঘুমের জন্য বিছানায় গেলাম। কারণ ভোর চারটায় উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে টাইগার হিলে যেতে হবে।
চলবে...
এসইউ/এমএস