গণপিটুনি বা বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।বিভিন্ন স্থানে একদিনেই গণপিটুনিতে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় চারজনকে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডাকাত সন্দেহে নরসিংদীর মনোহরদীতে পিটিয়ে মারা হয়েছে দুজনকে। এ ধরনের গণপিটুনির ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। মানুষ যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা হারায় তখনই নিজের হাতে আইন তুলে নেয়। এটা অশনি সংকেত।বিষয়টি অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাকে ‘গণ’ বলে চালিয়ে দিয়ে পার পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কী কারণে মানুষের মধ্যে এই রোষ সৃষ্টি হয় সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। অপরাধীর বিচার না হওয়া এবং সময়মত এবং ঠিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা না পাওয়া, অপরাধীরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা এসব কারণেই মানুষ আইন-আদালতের প্রতি আস্থা হারায়। তখনই গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটে।কুষ্টিয়ায় সবুজ হত্যা মামলার আসামী জাকির হোসেন ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। এছাড়া হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া র্যা বের সাথে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনাও কোনো সমাধান নয়। অপরাধ দমনে ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুক যুদ্ধের’ শর্টকাট রাস্তায় না গিয়ে অপরাধ যেন সংঘটিত হতে না পারে এবং হলেও যাতে অপরাধীরা প্রশ্রয় না পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।এক্ষেত্রে অপরাধীরা যাতে প্রশ্রয় না পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে র্যা ব-পুলিশকেও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক প্রভাব এক্ষেত্রে কাম্য নয়। অন্যদিকে মামলা জটের কারণে অপরাধের বিচার সঠিক সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। প্রধান বিচারপতিও বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এর সমাধানের জন্য সকলের সহযোগিতা চাইছেন। ‘জাস্টিস ডিলে জাস্টিস ডিনাই’ বলে একটি কথা আছে। অর্থ্যাৎ সময়মত বিচার না পাওয়া এবং বিচার না হওয়ার একই অর্থ দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত। এ জন্য সঠিক সময়ে মানুষ যাতে বিচার পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।আমরা আশা করবো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইন-আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট রাখতে যার যা করণীয় আছে সেটা তারা করবেন।এইচআর/আরআইপি
Advertisement