কক্সবাজারে খাদ্য শস্য সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জেলার রামু খাদ্য গুদামে ৪৩ মেট্রিক টন নিম্নমানের চালসহ দুটি ট্রাক জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার রাতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বোরো (আতপ) চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের আওতায় কক্সবাজার জেলায় ৮ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৫৩৩ মেট্রিক টন, চকরিয়ায় ৩৫০ মেট্রিক টন, পেকুয়ায় ৩৫৪ মেট্রিক টন, মহেশখালীতে ২০৯ মেট্রিক টন, রামুতে ৩০৭৬ মেট্রিক টন, উখিয়ায় ৩৪৭২ মেট্রিক টন ও টেকনাফে ৪৯৮ মেট্রিক টন। এ সকল চাল সরবরাহের জন্য কক্সবাজার জেলার ২২ জন রাইচ মিল মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। গত ১ আগস্ট থেকে নির্ধারিত পরিমাণ চাল সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তানভীর হোসেন এর যোগসাজসে সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট করে খাদ্য গুদামগুলোতে উত্তরাঞ্চল থেকে আনা নিম্নমানের কম দামের চাল মজুদ করা হয়। এ সকল বিষয়ে অভিযোগ উঠার পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য শস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মো. আলী হোসেন তা তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু খাদ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে নীতিমালা লঙ্ঘনের মাধ্যমে খাদ্য গুদামগুলোতে দেদারছে নিম্নমানের চাল মজুদ অব্যাহত রাখে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট সোহাগ চন্দ্র সাহা রামু খাদ্য গুদামে অভিযান চালিয়ে ৪৩ মেট্রিক টন চালসহ দুটি ট্রাক জব্দ করে।সূত্র জানিয়েছে, অভিযান চলাকালে খাদ্য গুদামের পাশে (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৬৬২৭) ও (যশোর-ট-১১-২৬৮৮) নম্বরের চালভর্তি দুটি ট্রাক রেখে চলে যায় চালকরা। পরে চালকদের খোঁজে বের করা হয়। এর মধ্যে একটিতে ২০ মেট্রিক টন ও অপরটিতে ২৩ মেট্রিক টন চাল রয়েছে। ট্রাক দুটি বগুড়া ও ময়মনসিংহ থেকে চাল নিয়ে আসে বলে জানান চালকরা। বগুড়া থেকে আনা (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৬৬২৭) ট্রাকের গাড়ির চালক ওবায়দুর রহমান জানান, রামু খাদ্য গুদামের জন্য বগুড়া থেকে ২৩ টন চাল নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় ম্যাজিস্ট্রেট তা জব্দ করে। ময়মনসিংহ থেকে আসা (যশোর-ট-১১-২৬৮৮) ট্রাকের গাড়ির চালক মনিরুল ইসলাম জানান, ২০ টন চাল নিয়ে রামু খাদ্য গুদামে আসি। কিন্তু চাল খালাসে দেরি হওয়ায় গাড়ি গুদামের বাইরে রাখতে বলা হয়। পরে আমরা ধরা পড়ি।অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিরস্ট্রট সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, অভিযান চালিয়ে বগুড়া ও ময়মনসিংহ থেকে আসা চাল ভর্তি দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। ট্রাক দুটির চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা সব কিছুই স্বীকার করেছেন। এছাড়া চালের বস্তায় খাদ্য বিভাগের নাম ও রামুর গর্জনিয়া এলাকার মা মনি অটো রাইচ মিল এবং রামুর ফয়জিয়া অটো রাইচ মিলের সিলমোহর যুক্ত চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তানভীর হোসেন তার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঘটনা জানার পর রাতেই আমি রামু গিয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে। কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য শস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মো. আলী হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে নীতিমালা অনুযায়ী মানসম্পন্ন চাল সময়সীমার মধ্যে সংগ্রহের জন্য চিঠিও ইস্যু করা হয়। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে চাল ভর্তি দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সায়ীদ আলমগীর/এসএস/আরআইপি
Advertisement