জাতীয়

বিশ্বজুড়ে কচ্ছপ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা!

বিশ্বজুড়ে মিঠা পানির কাছিম এবং কচ্ছপ চোরাচালানের লাখ লাখ ডলারের ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ঢাকা। তথ্যটি আঁতকে ওঠার মতো হলেও আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা ‘ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন (ডাব্লিউজেসি)’ দু‘বছর ধরে চালানো এক অনুসন্ধানের পর এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

Advertisement

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাব্লিউজেসি ২০১৬ সালে ‘অপারেশন ড্রাগন’ নামে এ তদন্ত শুরু করে। ছদ্মবেশি কর্মীরা বিভিন্ন দেশ ঘুরে চোরাচালান নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। দু’বছর ধরে চলা এ অনুসন্ধানে অনেক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে এসেছে এবং এ চোরাচালান ব্যবসায় উচ্চ পর্যায়ের অনেক অপরাধীকে চিহ্নিত করতেও সম্ভব হয়েছে।

কীভাবে চলে এ ব্যবসামিঠা পানির কাছিম এবং কচ্ছপের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে চীন এবং হংকং। সেখানে এসবের অনেক কদর। যারা বেআইনিভাবে চীন এবং হংকং-এ এসব পাচার করে তাদের রয়েছে পুরো দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিশাল নেটওয়ার্ক। ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড জুড়ে বিস্তৃত এ নেটওয়ার্ক।

ডাব্লিউজেসি বলছে, মোট আটটি বড় অপরাধী চক্র মূলত এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বড় বড় বিমানবন্দর এবং সড়ক ও রেল পরিবহন কেন্দ্রে তারা লোকজনকে হাত করে রেখেছে, যাতে নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা চালানো যায়।

Advertisement

ডাব্লিউজেসির তদন্তে নেটওয়ার্কগুলো এবং তাদের সঙ্গে জড়িত অনেককে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এসব চক্রের ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর উদ্ধার করা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি কাছিম এবং কচ্ছপ।

চোরাচালানের রুটওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন তাদের রিপোর্টে তুলে ধরেছে, কিভাবে ঢাকায় বিশ্বের নানা জায়গায় কাছিম এবং কচ্ছপ পাচারের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে হিসেবে পরিণত করা হয়েছে।

# প্রথম ধাপে পাচারের জন্য কাছিম ও কচ্ছপ সংগ্রহ করা হয় ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে। সেখানে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে পর্যন্ত রয়েছে পাচারকারীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।

# সংগ্রহ করা এসব বন্য কাছিম ও কচ্ছপ এরপর সড়ক ও রেলপথে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। এরপর সেখান থেকে আবার যশোর রোড ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি কোনো জায়গায় নেয়া হয়।

Advertisement

# কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে পাচারকারীরা সীমান্তের অদূরে বনগাঁও একটি নদীর কাছে অবস্থান করে। সেখান থেকে কাছিম এবং কচ্ছপ তোলা হয় নৌকায়। তারপর নদীপথে বাংলাদেশে।

# বাংলাদেশে আবার সড়ক পথে ট্রাক, প্রাইভেটকার বা ট্যাক্সিতে এসব নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার একটি ‘সেফ হাউসে’।

# পাচার হওয়া কাছিম ও কচ্ছপের শেষ গন্তব্য বিশ্বের নানা দেশ ও নগরী। ঢাকার ‘সেফ হাউস’ থেকে এগুলো নেয়া হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখান থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নেয়া হয়, (যে সব বিমানবন্দরে পাচারকারী চক্রের নিজস্ব লোকজন আছে)। ঘুষ দিয়ে হাত করা কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এগুলো চলে যায় বিমানবন্দরের বাইরে।

ঢাকার ‘সেফ হাউজ’:ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন তাদের দু’বছরব্যাপী অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছে, এশিয়া জুড়েই বেশকিছু কেন্দ্র রয়েছে এ চোরাচালান নেটওয়ার্কের।তবে এর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ‘সেফ হাউস’। এটি মূলত পাচার করে আনা কচ্ছপ এবং কাছিম রাখার জায়গা।

যারা বাংলাদেশ থেকে এগুলো বাইরে রফতানি করে তাদেরকে রিপোর্টে ‘পার্সন অব ইন্টারেস্ট’ (পিওআই) বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। রিপোর্টে পিওআই-১২ বলে একজনের উল্লেখ আছে, যাকে ঢাকা ভিত্তিক পাচারকারীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করা হয়।

ওয়াইল্ডলাইফ জাস্টিস কমিশন তাদের তদন্তে পাওয়া তথ্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করেন। এরপর ওই ব্যক্তিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে বলেও জানানো হয়।

আরএস/এমএস