গণমাধ্যম

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধক আইন পরিবর্তন করতে হবে

সমাজের মঙ্গল ও সাংবাদিকতার স্বার্থেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জরুরি। তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধক হয় এমন আইন প্রয়োজনে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করতে হবে। দরকার হলে পুরনো আইন বাতিল করে নতুন গণমাধ্যমবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮ ঘোষণা করা হয়। এতে 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ' বিষয়ক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপনে টিআইবির সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম। প্রবন্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।

Advertisement

পরে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, দৈনিক প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন, ঢাকা বাংলা চ্যানেলের (ডিবিসি) সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং ইউএনবি’র সাবেক নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, আমরা নাগরিকের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা সেই সংগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আইন করে সব বন্ধ করে দিতে হবে। এতে মনে হচ্ছে সরকার কিছুটা ছাড় দিলেও আবার কঠিন হচ্ছে। আমরা চাই সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আরও বৃদ্ধি পাক। এ জন্য নাগরিক সমাজকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে এই আইনটা কতটা তথ্যপ্রকাশবান্ধব হবে তা নির্ভর করবে নাগরিক সমাজের ভূমিকার ওপর।

সাংবাদিক রিয়াজ আহমদ বলেন, আইন তো পাথরে খোদাই করা কোনো বিষয় নয় যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। সরকার চাইলেই তা পরিবর্তন করতে পারে। তাই হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করতে হবে অথবা আইনের অস্পষ্ট বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়নে বিধি প্রণয়ন করতে হবে।

আইন প্রণয়নের আগে অংশীজনদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার আলোচনা করে ঠিকই কিন্তু অংশীজনদের সুপারিশ আমলে নেয় না। তার মানে তারা বিশ্বকে দেখাতে চায় যে আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেই আইন করি।

Advertisement

প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্যই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করে আমাদের উচিত এ ব্যাপারে ‘প্রতিক্রিয়া’ না দেখিয়ে ‘সাড়া’ দেয়া। কারণ, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এমনিতেই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এই পেশাকে আরও কতটা সহজ করা যায় সে চেষ্টাই করা উচিত।

ঢাকা বাংলা চ্যানেলের (ডিবিসি) সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, এই আইন কোনোভাবেই গণমাধ্যমবান্ধব নয়।

জেডএ/পিআর