বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার ‘হংসবলাকা’ পরিদর্শনে আসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।
Advertisement
বৃহস্পতিবার বাপা সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান ও ক্যাপ্টেন নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই অভিনন্দন জানানো হয়।
অভিনন্দন বার্তায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি বিমানের ‘হংসবলাকা’ পরিদর্শনে আসায় আমরা পাইলট সমাজ অত্যন্ত আনন্দিত, অভিভূত ও অনুপ্রাণিত। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় এয়ারলাইন্সের প্রতি আপনার অগাধ ভালোবাসা, সহযোগিতা আমরা সবসময়-ই দেখে আসছি। প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্বে আজ ‘জিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি আমরা। তারই ধারাবাহিকতায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিমান।
‘আপনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বিমান বহরে সর্বমোট ১০টি সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ ক্রয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে। অষ্টম উড়োজাহাজটি সংযোজিত হলো। আরও দুটি উড়োজাহাজ সংযোজনের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’র উন্নয়নে অতীতে যেমন আপনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও আপনার সুদৃঢ় ভূমিকা থাকবে বলে আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি।’
Advertisement
‘আপনার বিচক্ষণতার কারণে আজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সমৃদ্ধ এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। আগামীতে আপনার দেখানো পথ ধরে বিশ্ব মানচিত্রে বিমান নতুন পরিচিতি পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিমানসহ এ দেশের প্রতিটি দিক ও বিভাগে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে। আপনার প্রতি পাইলট সমাজের গভীর শ্রদ্ধা ও শুভ কামনা অব্যাহত থাকবে’,- বলা হয় অভিনন্দন বার্তায়।
গতকাল বুধবার দুপুরে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিভিআইপি টার্মিনালের টারমার্কে জাতীয় পতাকাবাহী বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘হংসবলাকা’ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা ২৭১ আসনের এ উড়োজাহাজটিতে উঠে ককপিটসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। একপর্যায়ে তিনি বিমানের ককপিটে পাইলটের আসনে বসেন। বিমানটির হংসবলাকার নামকরণও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করবে হংসবলাকা। রেজিস্ট্রেশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সব প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের মধ্য দিয়ে এটি প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল শুরু করবে।
Advertisement
উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)। উড়োজাহাজটির শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন প্রযুক্তি যুক্ত রয়েছে।
উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেকট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমের মাধ্যমে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই উড়োজাহাজটি ওজনে হালকা। ভূমি থেকে উড়োজাহাজটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট। এর মোট ওজন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ কিলোগ্রাম, যা ২৯টি হাতির সমান! এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে।
হংসবলাকা দিয়ে লন্ডন, দাম্মাম ও ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম উড়োজাহাজটি চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ কম জ্বালানি খরচ হবে। ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারবে। এর আসন রয়েছে ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস।
বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো বানিয়েছে অ্যাসটেলা। আর ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলো হেইকোর বানানো। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো ৬৫ ইঞ্চি পিচ, ইকোনমি ক্লাসের আসন৩১ ইঞ্চি পিচ। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়কভাবে বিশ্রাম নিতে পারবেন।
দুপাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একসঙ্গে জানালার শাটার বন্ধ করা ও খোলা যাবে বোতাম টিপে। জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। ফলে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কমপ্রেসর সিস্টেম অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় উন্নত।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। হংসবলাকা যোগ হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫টি।
আরএম/জেডএ/পিআর