খেলাধুলা

শুরুটা ভালো হলে ৩০০ রানও ব্যাপার না : সৌম্য

এইতো মাস দেড়েক আগে (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার নম্বর মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন সৌম্য সরকার। সেটাও অনেক ধকল সহ্য করে।

Advertisement

জাতীয় লিগ খেলে খুলনা থেকে রাতে ঢাকায় ফিরে, পর দিন ভোরে টিম বাসে বিকেএসপি এসে জিম্বাবুয়ানদের বিপক্ষে প্র্যাকটিস ম্যাচে দারুণ শতরান করে সবাইকে অবাকই করে দিয়েছিলেন সৌম্য। ১১৪ বলে ১০৩ রানের হার না মানা ইনিংস বেড়িয়ে এসেছিল তার ব্যাট থেকে।

কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে অমন শতরানের পরও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ছিলেন উপেক্ষিত। খেলা বহুদূর, স্কোয়াডেই জায়গা পাননি। পরে তিন নম্বর ম্যাচে সুযোগ পেয়েই মাঠ মাতানো আর আলো ঝড়ানো শতক।

এবার ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে আবারো বিকেএসপিতে প্রস্ততি ম্যাচ। এবারো দারুণ সেঞ্চুরি সৌম্যর। তারপরও প্রশ্ন , এবার কি একাদশে জায়গা মিলবে এ ড্যাশিং বাঁহাতি ওপেনারের?

Advertisement

বৃহস্পতিবার খেলা শেষে বিকেএসপিতে যখন প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে ঠিক তখন মাঠে দাড়িয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বললেন সৌম্য। আসুন পড়ি সে প্রশ্নোত্তর পর্ব:

প্রশ্ন : কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ, সেঞ্চুরি না আপনি যেভাবে খেলতে চেয়েছেন সেভাবে খেলতে পারা?

সৌম্য : দুটিই আসলে গুরুত্বপূর্ণ । যদি শট ভালো মতো না হতো তাহলে হয়তো বাজে শট খেলে আউটও হয়ে যেতে পারতাম। চেষ্টা করেছি যে সঠিকভাবে খেলার। আর শেষ সময় পর্যন্ত যেন উইকেটে থাকা যায়, ওদের সেরা বোলারকে খেলা যায় সে চেষ্টাও ছিল।

প্রশ্ন : বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করার পরিকল্পনা ছিল কতটা?

Advertisement

সৌম্য : আসলে শুরুতে আমার তেমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। তামিম ভাই অনেক ভালো করছিলেন। প্রত্যেক ওভারে অনেক রান আসছিলো। আমি চেষ্টা করেছি যতটুকু সময় থাকি ততক্ষণ তাকে সাপোর্ট দেয়ার। আর বোলারগুলোকে ভালমত দেখি। তামিম ভাই আমাকে কিছু কথা বলছিলেন যেগুলো আমার জন্য হেল্পফুল ছিলো। তো সেই অনুসারেই ব্যাটিং করেছি। একটা ভুল শট খেলেছি। এর মধ্যে উনি একটি কথা বলেছেন, তখন আরো মাথা খুলেছে। উইকেটের মধ্যে কিছু কিছু কথাও আসলে অনেক হেল্পফুল। আমারও উচিৎ ছিল পরিস্থিতি বোঝা। রান অনেক আসছিলো। প্রথম দশ ওভারে অনেক রান ছিলো। প্রায় ৮০-৯০ এর মতো রান ছিলো। সেই অনুসারেই খেলছিলাম যে ইনিংসটি বড় করি। আর শেষের দিকে যেয়ে মনে হয়েছিল যে আমি যদি উইকেটে থাকি তাহলে অবশ্যই ম্যাচটি জিতবো। সুতরাং ঐ আত্মবিশ্বাস নিয়েই শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা।

প্রশ্ন : ওয়ানডে সিরিজের আগে প্রস্তুতি কেমন হলো? উইন্ডিজদের বিপক্ষে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব কি-না?

সৌম্য : অবশ্যই। তামিম ভাই যেভাবে ইনজুরি থেকে ফিরে ব্যাটিং করছিলেন মনে হচ্ছিলো না উনি বাইরে ছিলেন। উনার আত্মবিশ্বাস দেখে নন স্ট্রাইক থেকে আমারও মনে হয়েছিল যে যেহেতু উনি ভালো করছেন, আমি যদি উনাকে সাপোর্ট দিয়ে যেতে পারি তাহলে আরো সহজ হবে রান করা। কারণ দুই সাইড থেকে যদি রান আসতে থাকে তাহলে অনেক এগোতে থাকে রান। আমি সেটাই চেষ্টা করেছি ওনাকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়ার।

প্রশ্ন : এই জয় ওয়ানডে সিরিজের আগে কতটা আত্মবিশ্বাস যোগাবে?

সৌম্য : এই ধারবাহিকতা যদি সবাই ধরে রাখতে পারি কিংবা এই আত্মবিশ্বাসটি যদি সবার মধ্যে থাকে তাহলে তা সবাইকে সাহায্য করবে যে পরবর্তী ম্যাচগুলোর জন্য। প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা ৩০০ এর উপরে রান তাড়া করতে গিয়েছি, প্রায় আট নয় ওভার বাকি ছিলো, এর মধ্যে আমরা ম্যাচটি শেষ করতে পেরেছি। তো মূল ম্যাচেও যদি আমরা এভাবে ভালো শুরু করতে পারি তাহলে ৩০০ রান কোন ব্যাপার হবে না। মানে সহজ হবে আরকি।

প্রশ্ন : ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতাই কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাল খেলায় কার্যকর অবদান রেখেছে?

সৌম্য : তেমন কিছু না। যেটি বললাম যে উইকেটে বেশীক্ষণ থাকার চেষ্টা করছি। উইকেটে যতক্ষণ থাকতে পারবো চেষ্টা করবো। তামিম ভাই যেমন একটি কথা বলেছিল উইকেটের ভেতরে। এই কথাটি হয়তো বাইরে উনার কাছে পেতাম না। তো উইকেটে থেকে এই কথাগুলা শেখা সহজ। অথবা পরিস্থিতি বুঝে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলে যা করা যায় তা অনেক হেল্পফুল। আর আমি এখন চেষ্টা করছি উইকেটে বেশীক্ষণ থাকার। নিজের শট গুলো আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলার।

প্রশ্ন : তামিমের ব্যাটিং কেমন দেখলেন?

সৌম্য : আমার কাছে উনার ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি যে উনি বাইরে থেকে আসলেন কিংবা কয়েকটি ম্যাচ বাইরে ছিলেন। আমার দেখে খুব ভালো লেগেছে যে উনি অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আর শুরুতে একটি ভালো স্টার্ট পেয়েছে। এমন স্টার্ট সবসময় হয় না। আমি চাইবো যে এমন স্টার্ট সবসময় উনি দিতে পারবেন, এটি বাংলাদেশের জন্যও ভালো, উনার জন্যও ভালো।

প্রশ্ন : আগামী দিনে আপনার প্রত্যাশা কি?

সৌম্য : আশা তো সবসময় বড়ই থাকে। আর স্বপ্ন বড় থাকাই তো ভালো। স্বপ্ন আমারও বড় থাকে। চেষ্টা করবো যে ম্যাচগুলোতে সুযোগ পাবো ধারাবাহিকতা বজায় রাখার। যেমনটা যাচ্ছে এমনটা রাখতে, সবসময় তো সবার সবকিছু হয় না। চেষ্টা করবো যে সুযোগ পেলে শেষ ম্যাচটি যেভাবে খেলেছি তেমনভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলতে।

প্রশ্ন : তামিমের সাথে আপনার পার্থক্য?

সৌম্য : তামিম ভাই তো দলের জন্য সবসময়েই একটি অনুপ্রেরণা। উনি থাকলে সবার একটি আত্মবিশ্বাস থাকে যে সিনিয়র ক্রিকেটার, উনি ভালো টাচেও আছেন। উনি থাকলে একটি বিষয় থাকে যে, একটি ভাল শুরু হয়। তাতে করে আমরা পেছনের দিকের ব্যাটসম্যানেরা আছি তারা সহজেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে।

এআরবি/এসএএস/পিআর