গ্রেফতারের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির (প্রভাতী) বরখাস্ত শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনাকে বুধবার বিকেলে রাজধানীর সিএমএম (মুখ্য মহানগর হাকিম) আদালতে নেয়া হয়। তাকে আদালতের হাজতখানায় রেখে শুরু হয় শুনানি।
Advertisement
আদালতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হন। তবে শুনানি শুরুর আগে আইনজীবী ও সাংবাদিক ছাড়া বাকিদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয় পুলিশ।
প্রথমে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে হাসনা হেনাকে জামিন দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের পরপরই কথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তবে শুনানির শেষের দিকে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হট্টগোল হয়।
শুনানিতে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন হিরণ আদালতকে বলেন, অরিত্রি কোনো অন্যায় করলে তাকে কাউন্সিলিং করতে পারতো। কিন্তু তাকে টিসি দেয়া কোনো সমাধান নয়। এ ছাড়া এটা সবাই জানে যে ভিকারুননিসায় ভর্তি হতে কমপক্ষে এক লাখ টাকা লাগে। এরপরও স্টুডেন্টদের কোনো কথা বলতে দেয়া হয় না। আমার সন্তান ক্লাস-ওয়ান থেকে ভিকারুননিসায় পড়ে। সেখানকার দারোয়ান থেকে শুরু করে শিক্ষকরা বিশাল পণ্ডিত। সারাবিশ্ব এই ঘটনায় (অরিত্রির আত্মহত্যা) হতভম্ব হয়েছে।
Advertisement
তিনি বলেন, ভিকারুননিসার ভর্তি দুর্নীতির কথা সবাই জানে। ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। অরিত্রির মৃত্যুর প্ররোচনাকারী শিক্ষক নামে পাষণ্ড, শিক্ষক নামে কলঙ্ক।
এরপরই দুইপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উচ্চস্বরে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। তারা হাসনা হেনার ওপর বাদীপক্ষের আইনজীবীর ঢালাও বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। দুইপক্ষের কথা কাকাটির একপর্যায়ে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের আদেশের পরেও চলতে থাকে তাদের তর্ক।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী আদালতকে বলেন, মামলার এজাহারে অভিযুক্ত হাসনা হেনা কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এমন কিছু লেখা হয়নি। এ ছাড়া এ ঘটনা যেদিন ঘটেছে সেদিন শিক্ষিকা হাসনা হেনার ডিউটি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছিল। পরবর্তী শিফট বিকেল ২টা থেকে সাড়ে ৪ টায়, যার দায়িত্ব হাসনা হেনার ছিল না। এ ছাড়া শিক্ষিকা হাসনা হেনা অরিত্রি কিংবা তার বাবা-মা’কে সেদিন কিছু বলেও নাই, বকাও দেয় নাই। তিনি শুধু তাদের অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন।
Advertisement
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী বলেন, হাসনা হেনা তার শিক্ষাজীবনে কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার কটূক্তি করেন নাই, কিছুই করেন নাই। বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামি নারী এবং অসুস্থ। তাই তাকে জামিন দেয়ার আবেদন করেন তারা।
তবে তাদের আবেদন নাকচ করে হাসনা হেনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী’ হিসেবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আরা ও প্রভাতী শাখার শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা। এ ঘটনায় বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
মামলার এজাহারে অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী উল্লেখ করেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।
এআর/জেএ/জেডএ/এমকেএইচ