খেলাধুলা

তামিমে শুরু, সৌম্যয় শেষ

বৃহস্পতিবার সকালে খেলা শুরুর কিছুক্ষণ পর ঢাকা থেকে বিকেএসপিতে আসা এক সাংবাদিকের কৌতূহলি প্রশ্ন, ‘সে কি ভাই তামিম ইকবাল খেলছেন না?’ উত্তর পেলেন, কেন? খেলবে না কেন, প্লেয়ার্স লিস্টে তো নাম আছে। না খেলার কোন কারণ নেই।’

Advertisement

পাল্টা জবাব, ‘কিন্তু খেলছে যে, বুঝবো কি করে? দল ফিল্ডিংয়ে আর তামিম ড্রেসিংরুমের সামনে দড়ির ওপারে রিজার্ভ প্লেয়ার আর কোচিং স্টাফদের সাথে বসে খোশগল্পে ব্যস্ত।’

ঐ কথোপকোথন অমূলক নয়। সকালে বিসিবি একাদশ টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামলেও তামিম মাঠে নামেন এক ঘন্টারও কিছু সময় পর। ফিল্ডিংয়ে নেমেও বেশী সময় ছিলেন না মাঠে। একবার নেমে আধঘণ্টার একটু বেশী সময় ফিল্ডিং করে চলে আসেন ড্রেসিংরুমে। তারপর অল্প কিছুক্ষণের জন্য মাঠে গিয়ে আবার সাজঘরে ফিরে আসা।

হাতের কব্জির আঘাতে ভুগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পুরো সিরিজ মিস করেছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে টেস্ট সিরিজে ফেরার সম্ভাবনা জেগেছিল, আর ঠিক তখনি পেটের মাংস পেশীতে টান (সাইড স্ট্রেইন) ধরায় আর খেলা হয়নি।

Advertisement

নির্বাচকরা তাকে এ প্রস্তুতি ম্যাচে ডাকেননি। আড়াই মাসের দীর্ঘ সময় পর ওয়ানডে সিরিজের আগে নিজের ম্যাচ ফিটনেসটা একটু ঝালিয়ে নিতে নিজে যেচে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা তামিম ইকবালের।

এ ম্যাচে তার ফিল্ডিং-ক্যাচিংটা মূল ছিল না। তাই তামিম ফিল্ডিংয়ে কতটা সময় মাঠে ছিলেন? সেটা দেখার বিষয় নয়। আসল কথা হলো, তামিম ব্যাটিংটা কেমন করেছেন?

ব্যাটিংটাই তার আসল কাজ। আর দিনের দ্বিতীয় অংশে সে কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে দেখিয়েছেন দেশ সেরা ওপেনার। জানিয়ে দিলেন, আমি নিজের ব্যাটিংটা ঝালিয়ে নিতেই নির্বাচকদের কাছে চেয়ে এই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। আর সেই ঝালাইটা দারুণ ভাবেই করেছেন। একেবারে যাকে বলে নিখুত।

এমন আস্থা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট করেছেন যে দেখে মনেই হয়নি তিনি আড়াই মাস মাঠের বাইরে ছিলেন। ঠিক দুই মাস ২১ দিন পর মাঠে ফিরে যতটা ভাল খেলা সম্ভব, ততটাই ভাল খেলেছেন। আড়াই মাসের বেশী সময় পর মাঠে ফিরেও একজন ব্যাটসম্যান কতটা স্বচ্ছন্দ, সাবলীল ও স্বপ্রতিভ রাখতে পারেন, আজ বিকেএসপি মাঠে তামিম তা দেখিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

এ যেন সেই চিরচেনা তামিম। শুরু থেকেই অফ ও অন ড্রাইভে কটি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। একটু লেন্থে কমতি থাকলেই ডেলিভারিগুলোয় পয়েন্ট ও গালির আশপাশ দিয়ে সজোরে কাট। যা বিদ্যুৎগতিতে সীমানার ওপারে। অনসাইডে কিছু ফ্লিক খেললেন পায়ের পাতার ওপর ভড় করে কব্জির মোচড়ে। তুলনামূলক কম খেললেও কয়েকটিও পুলও করলেন সপাটে।

মোদ্দা কথা, আজ তামিমের ব্যাটে মিললো এক পরিস্কার বার্তা! মাঝে ক’মাস ইনজুরির কারণে খেলতে পারিনি। এখন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে তিন ম্যাচের সিরিজে খেলতে চাই। তাতে ভাল খেলতে আছি মুখিয়ে। ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্পও অনেক। শীতের কুয়াশা ভেজা সকালের পর সোনা ঝড়া রোদেলা দুপুরে তামিমের ব্যাট থেকে বেড়িয়ে আসা শটগুলোও ছিল যেন এক একটি সোনার টুকরো।

চার ছক্কার ফুলঝুরি সহ উইকেটের সামনে-পিছনে আর চারপাশে বাহারি স্ট্রোক প্লে’র অনুপম প্রদর্শনীতে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠ মাতিয়ে দারুন এক (৭২ বলে ১৩ চার আর ৪ ছক্কায় সাজানো ১০৭) ঝড়ো শতক উপহার শেষে তামিম যখন সাজঘরের পথে, তখন বিসিবি একাদশের অবস্থা বেশ ভাল।

বোর্ডে রান দু উইকেটে ১৯৫। ২২.৫ ওভারে প্রায় দুশোর দোরগোড়ায় মানেই ম্যাচ হাতের মুঠোয়। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে তামিম আউট হবার পর এক ছোট্ট মোড়কে সে রমরমা অবস্থায় হঠাৎ ছন্দপতন।

সেই অবস্থায় হাল ধরেন সৌম্য সরকার। তামিম যেখানে শেষ করেন, সেখানে শুরু সৌম্যর । তারপর অধিনায়ক মাশরাফিকে সাথে নিয়ে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফেরা। এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে কাজের কাজ মানে ঠিক সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন বাঁহাতি সৌম্য সরকার। দারুণ এক শতরান। যার পরতে পরতে ছিল আস্থা, আত্মবিশ্বাস। যে শট যেখানে খেলতে চেয়েছিলেন, সেখানেই খেলতে পেরেছেন। শট নির্বাচনে রেখেছেন দক্ষতা ও মুন্সিয়ানার ছাপ।

উইকেটে টিকে গেলে যে সৌম্যর ব্যাট থেকে অনেক বড় বড় শটস বেড়িয়ে আসে, তা আরও একবার প্রমাণ হলো। তার ইনিংস ছিল ছয় ছটি বিশাল ছক্কা।

এদিকে বিকেএসপিতে প্রস্তুতি ম্যাচে শতরান করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে সৌম্যর। মাস খানেক আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিকেএসপির এই তিন নম্বর মাঠে একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ১১৪ বলে ১৩ বাউন্ডারি আর চার ছক্কায় ১০৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। আর আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনামূলক তেজি ও ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষেও বাঁহাতি সৌম্যর ব্যাটে ঝিলিক।

মাত্র তিন দিন পর ৯ ডিসেম্বর শেরে বাংলায় প্রথম ওয়ানডে। সে ম্যাচে টিম বাংলাদেশের গঠনশৈলি আর একাদশ কেমন হবে? তামিম ফিরছেন, তার সাথে ওপেন করবেন কে? তিন নম্বরে কাকে দেখা যাবে? সাকিবই থাকবেন? না অন্য কেউ? অন্যদিকে মিডল অর্ডারে মিঠুন আর আরিফুলের মধ্যে কার অবস্থা কেমন? তাও পাখির চোখে পরখ করার ছিল। তাই তো প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু সকালে খেলা শুরুর আগে অধিনায়ক মাশরাফির সাথে এক গাড়ীতে বিকেএসপি এসেছেন। প্রধান কোচ স্টিভ রোডসও আসেন সকালে এক ঘন্টা যেতেই। তারা দেখলেন, তামিম দুরন্ত, দূর্বার। তার ব্যাট যেন আস্থার প্রতীক। একই ভাবে সৌম্যও ঠিক জ্বলে উঠে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন।

প্রথমে তামিমের সঙ্গী হিসেবে ইমরুলের আর পরে মিডল অর্ডারে মিঠুন ও আরিফুলের সামনে ভাল খেলে এবং দীর্ঘ ইনিংস সাজানোর পর্যাপ্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল । কিন্তু তারা কিছুই পারেননি। মিঠুন ৫ ও আরিফুল ২১ রানে আউট। সাথে দুই তরুণ তৌহিদ হৃদয় ০ আর শামিম পাটোয়ারি ৯ রানে সাজঘরে ফিরলে সাজানো বাগান তছনচ হবার উপক্রম হয়েছিল বিসিবি একাদশের।

নিশ্চিত জয়ের বদলে পড়ন্ত বিকেলে পরাজয়ের শঙ্কা এসে ভর করেছিল। সেই জায়গায় হাল ধরেন সৌম্য। শেষ পর্যন্ত প্রায় একা লড়াই চালিয়ে যান। অবশ্য শেষ দিকে তাকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। এ দুজন ঠিক উইকেট আগলে ওভার পিছু প্রয়োজনীয় রান তুলে নিলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বিসিবি একাদশ।

এআরবি/এসএএস/আরআইপি