শিক্ষকদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা ও ক্লাসে ফিরছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বৈঠকে বসেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা।
Advertisement
প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আনুষকা ও অধরা বিকেল সাড়ে ৪টার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকরা আমাদের কথা দিয়েছেন। যেগুলো পূরণ করা সম্ভব সেগুলো শিক্ষকরা পূরণ করবেন। আর যেগুলো আইনি বিষয়, সেগুলো আইনের মাধ্যমে সমাধান হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
তারা বলেন, আমরা শিক্ষকদের আশ্বাসে আস্থা রেখেছি। আগামীকাল (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় আমরা অংশগ্রহণ করব এবং ক্লাসে ফিরে যাব।
সহপাঠীকে ‘আত্মহত্যার প্ররোচণায়’ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিন বুধবার ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- অধ্যক্ষসহ বাকি শিক্ষকদের পদত্যাগের লিখিত আদেশ প্রকাশ করা, আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, স্কুলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা, কথায় কথায় টিসির ভয় দেখানো বন্ধ করা, মানসিক সুস্থতার জন্য মানসিক চিকিৎসক দিয়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং গভর্নিং বডির সকল সদস্যকে অপসারণ করা।
Advertisement
এসব দাবি আদায়ের বিষয়ে আনুষকা ও অধরা বলেন, আমরা আমাদের ছয় দফা দাবি লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে (শিক্ষা) দিয়েছি। যেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় শিক্ষকরা সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেগুলো তারা বাস্তবায়ন করবেন। আমাদের ১ ও ৫নং দাবি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। এগুলো শিক্ষকদের আওতার বাইরে। আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখিত দিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
শিক্ষার্থীদের ৬নং দাবিটি ছিল গভর্নিং বডির সকল সদস্যকে অপসারণ। এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বৃহস্পতিবার বলেন, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি।
অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করেন গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়টি আমরা গভর্নিং বডির সভায় তুলব। এটা সদস্যদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, তারা পদত্যাগ করবেন কিনা?’
নিজের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে রাজি। তবে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে নিতে দু-একদিনের মধ্যে গভর্নিং বডি সভায় বসবে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির মধ্যে প্রথম চারটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। দুটি দাবি সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা আগেও বলেছি, অরিত্রির ঘটনার জন্য আমরা মর্মাহত। আমরা গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে এমন ঘটনার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।’
সোমবার দুপুরে অরিত্রির আত্মহত্যার পর মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল তার সহপাঠীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই ঘটনায় অরিত্রির বাবার দায়ের করা মামলায় বুধবার রাতে গ্রেফতার হন হাসনা হেনা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন এবং তাদের ছয় দফা দাবি লিখিত আকারে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেন অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী বলেছিলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করেন। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।
ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর পল্টন থানায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা দায়ের করেন অরিত্রির বাবা।
এমএএস/এমএআর/আরআইপি