মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলাকালে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে সাতদিন বয়সী কন্যাশিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা দায়েরের ৩৪ দিন পর দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
Advertisement
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার মহদিকোনা গ্রামের হবীব আলীর ছেলে আলীম উদ্দিন (৪৮) এবং একই এলাকার জহির উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন রাজন (২৪)।
গত সোমবার আলীম উদ্দিনকে এবং মঙ্গলবার জাকির হোসেন রাজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য নিহত শিশুর মরদেহ আগামীকাল বৃহস্পতিবার কবর থেকে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার সাতদিন বয়সী শিশুকন্যা অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৮ অক্টোবর সকালে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ১০টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হন অভিভাবকরা। যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার পুরাতন বড়লেখা বাজার, দাসেরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অ্যাম্বুলেন্সটি পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে।
চান্দগ্রাম এলাকায় গেলে পরিবহন শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্স আটকে চালককে মারধর করে। প্রায় দেড়ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সটি আটকা রাখে তারা। অ্যাম্বুলেন্স আটকা অবস্থায় শিশুটি সেখানে মারা যায়। দুপুর দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি ছাড়ে শ্রমিকরা। পরে শিশুটিকে পাশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে ৩১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।
একই সঙ্গে শ্রমিকদের বিশৃঙ্খল এসব কর্মকাণ্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চান আদালত। পরদিন ৩১ অক্টোবর ওই শিশুর চাচা আকবর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৬০ থেকে ১৭০ জনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় একটি মামলা করেন।
Advertisement
এদিকে, শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে ১০ জানুয়ারির মধ্যে পুলিশের মহা-পরিদর্শককে (আইজিপি) ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
২৯ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় নবজাতকের মৃত্যু শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের পক্ষে রিট করা হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান, পুলিশের মহা-পরিদর্শক, মৌলভীবাজার বড়লেখা উপজেলার ওসি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বলেন, ধর্মঘটে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার ওই শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হবে।
রিপন দে/এএম/পিআর