খেলাধুলা

দেড়যুগ পর সেই বিকেএসপিতে মাশরাফির অন্যরকম ফেরা

তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক। কেন তিনি দেশের মাটিতে বিসিবি একাদশের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন? অধিনায়কত্বও করবেন? সাধারণতঃ জাতীয় দলের অধিনায়ক কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন না।

Advertisement

ক্রিকেটে অতিথি দল বিদেশ সফরে মূল ম্যাচের (টেস্ট আর ওয়ানডে) আগে গা গরমের ম্যাচ খেলে নিয়মিতই। সেখানে সাধারণতঃ জাতীয় দলের বাইরে থাকা সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদেরই প্রাধান্য থাকে বেশি। অনেক সময় আবার জাতীয় দলের কাউকে কাউকেও রাখা হয় প্রস্তুতি ম্যাচে, যাতে তারা নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারেন। তবে জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক কোন সফরকারী দলের সাথে বোর্ড একাদশের হয়ে ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলেন, এমন নজির খুব কম। খুঁজে পাওয়াই কঠিন।

আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেএসপিতে ঘটছে সেই বিরল ঘটনাই। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেএসপিতে বিসিবি একাদশের অধিনায়ক হিসেবে সফরকারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।

প্রথমে এ ম্যাচ হওয়া কথা ছিল ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে; কিন্তু মাঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচ উপযোগি না হওয়ায় প্রস্তুতি ম্যাচটি ফতুল্লা থেকে বিকেএসপিতে স্থানান্তর করা হয়।

Advertisement

ফতুল্লার প্র্যাকটিস ম্যাচ বিকেএসপিতে, যেহেতু তিনি অন্য ফরম্যাট খেলেন না, তাই ম্যাচ প্র্যাকটিসের জন্য এ ম্যাচে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিকে রাখা। সঙ্গে ইনজুরিমুক্ত তামিম ইকবালও থাকছেন বিসিবি একাদশে।

খালি চোখে এটাই মূল ঘটনা; কিন্তু আসলে কি তাই? নাহ মোটেই তা নয়। কেউ কেউ হয়ত বলবেন, এটা নিছকই কাকতালীয়! আসলে তা নয়।

জীবন নাটকের নাট্যকার ‘বিধাতা’ মাশরাফির ক্যারিয়ারে চিত্রনাট্যটা ঠিক এভাবেই লিখে রেখেছেন। কারণ তার ক্যারিয়ারের উত্থানের সাথে জড়িয়ে আছে বিকেএসপি। তাই বিদায় বেলায় ক্যারিয়ার সায়াহ্নে আবার সেই বিকেএসপিতে ফেরা মাশরাফি বিন মর্তুজার।

আঠারো বছর আগে যে বিকেএসপিতে সূচিত হয়েছিল ক্রিকেটার মাশরাফির অগ্রযাত্রা, ৩৫ বছরে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিদায়ের প্রহর গোনা মাশরাফি ঘুরেফিরে সেই বিকেএসপিতেই! বিসিবি একাদশের পক্ষে খেলতে নামবেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কান্ডারি সবার প্রিয় মাশরাফি।

Advertisement

হয়তো এ মাঠে এটাই তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। মনে হচ্ছে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তিনি। তারপর হয়তো কয়েক মৌসুম ক্লাব ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন। আজকাল যেহেতু বিকেএসপি ক্লাব ক্রিকেটের নিয়মিত ভেন্যু, তাই ঢাকা লিগ খেলতে মাশরাফি হয়ত আগামিতেও যাবেন সেখানে। বল হাতে আগুন ঝরাবেন, ব্যাটেও তান্ডব চালাবেন।

কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের কোন দলের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে বিসিবির লোগো চাপিয়ে সম্ভবত আর খেলা হবে না। সে সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু ওই যে শুরুতে বললাম, ভাগ্য বিধাতা তাকে ঠিক সেই জায়গায় নিয়ে এসেছেন, যে বিকেএসপিতেই দেড় যুগ আগে সবাই তাকে চিনেছিল।

২০০১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি; ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব কষলে আজ থেকে ১৭ বছর ১০ মাস আগের কথা। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগী মহল সে দিনটিকে হয়ত মনে রাখেন না। রাখার কথাও নয়। কারণ সেটা কোন বড় ক্রিকেটারের জন্ম দিন নয়। আবার ওই দিনে কোন বড় তারকার ক্যারিয়ারও শুরু হয়নি। তবে দিনটির রয়েছে অন্যরকম তাৎপর্য্য।

আজ যিনি দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, টিম বাংলাদেশের সব সময়ের সফল ও সেরা অধিনায়কের তকমা যার গায়ে, ক্রিকেটের মাঠ ছাপিয়ে যার জনপ্রিয়তা সর্বসাধারণ মানুষের মাঝেও বিরাজমান- সেই গণমানুষের প্রিয় তারকা ‘মাশরাফি বিন মর্তুজাকে’ দেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা প্রথম চিনেছিল সেদিন।

ঠিক উত্থান বলা যায় না। যাবেও না। আর জাতীয় দলে অভিষেকেরও প্রশ্ন আসে না। তবে আগমন ধ্বনী শোনা গিয়েছিল, তা বলা যায় অনায়াসে। নিশ্চিতভাবেই অসামান্য প্রতিভার অধকিারী মাশরাফির প্রতিভার প্রথম স্ফুরণ ঘটেছিল এই বিকেএসপিতেই।

সবাই জেনেছিলেন, কেউ একজন আসছেন বল ও ব্যাট হাতে মাঠ মাতাতে। প্রতিপক্ষ দলগুলোর ভিত কাঁপাতে। দেশের ক্রিকেটকে আলোকিত করতে। মোটা দাগে বললে, আজকের সফল, আলোচিত ও নন্দিত ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা এই বিকেএসপি থেকেই প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন। পত্রিকার খেলার পাতায় শিরোনামে প্রথমবার লেখা হয়েছিল কৌশিকের নাম।

আজ মধ্য তিরিশের মাশরাফি তখন ১৭ বছরের এক উচ্ছল তরুণ। নড়াইলের মানুষ আর ক্রিকেট পাড়ার লোকজন তাকে তখন মাশরাফির চেয়ে কৌশিক নামেই চিনতো বেশি। এখনো স্মৃতির আয়নায় দাঁড়ালেই দেখতে পাই বিকেএসপি মাঠে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সঙ্গে খেলা কুয়েত কিশোর দলের।

সেটা ছিল এশীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট আসরের গ্রুপ ম্যাচ। সেই ম্যাচেই প্রথম দেখলাম ছয় ফুটের ওপরে লম্বা, ফর্সা ধবধবে সদ্য কৈশোর পার হওয়া এক উচ্ছল, চপল ও চিতার মত দৃঢ়তায় আত্মপ্রত্যয়ী এক তরুণকে।

এখন মাশরাফি মানেই দুর্দান্ত পেস বোলার। ইনজুরি, ছোট বড় মিলে মোট ১১টি অপারেশনের ধকল আর বয়স- সব মিলে গতি কমেছে খানিকটা। তাই বলে বলের তেজ ও ধার কমেনি একচুলও। বুদ্ধি খাটিয়ে নিখুঁত লাইন ও লেন্থে বল ফেলে সর্বাধিক সমীহ আদায় করা এক বোলার। দলকে একসুতোঁয় গেঁথে রাখা, সাহস ও উদ্যম জাগাতে ওস্তাদ এক আদর্শ ও সফল অধিনায়কের প্রতিচ্ছবিও মাশরাফি।

শুনলে হয়ত অবাক হবেন, আবার কেউ কেউ হয়ত বিশ্বাসও করতে চাইবেন না; কিন্তু চরম সত্য হলো- মাশরাফি প্রথম মিডিয়ায় হাইলাইটেড হয়েছিলেন, পরিচিতি পেয়েছিলেন এবং সবাই তাকে প্রথম চিনেছিল এক ড্যাশিং উইলোবাজ হিসেবে।

আমরা সাংবাদিকরা যেদিন বিকেএসপি মাঠে প্রথম কৌশিক নামের মেধাবী ক্রিকেটারকে মাঠের নায়ক হিসেবে প্রথম দেখেছিলাম, সেদিন তিনি বল হাতে নয়, ব্যাট হাতে ঝড় তুলে সবার মন কেড়েছিলেন। নিজের আগমনী বার্তা জানান দিয়েছিলেন।

কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন জাতীয় দলের কোন প্রস্তুতি ম্যাচের কথা বলছি। নাহ! তা নয়। মাশরাফি প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন এশীয় অনূর্ধ-১৭ ক্রিকেটে। এখনো পরিষ্কার মনে আছে সেই এশীয় অনূর্ধ-১৭ ক্রিকেটে বাংলাদেশ আর কুয়েতের কিশোরদের ম্যাচ কাভার করতে দৈনিক জনকন্ঠের হয়ে বিকেএসপি গিয়েছিলাম।

বাংলাদেশ তখন সবে টেস্ট খেলা শুরু করেছে। টেস্ট জগতে সদস্যজাত শিশু। তাতে কি! টেস্ট খেলুড়ে দেশ তো! আর কুয়েত হলো আইসিসির সহযোগী সদস্যদের মধ্যে দুর্বলতম দলগুলোর একটি। তাদের কিশোরদের সঙ্গে বাংলাদেশের কিশোররাতো জিতবেই।

তাই টাইগারদের জয় নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না আমাদের। লক্ষ্য ছিল কে কেমন খেলে সেটা দেখা। কোন প্রতিভাবান তরুণের দেখা মেলে কি না? কয়েকজনের ওপর চোখ ছিল। প্রথম নামটি অবশ্যই মোহাম্মদ আশরাফুল। তারপর নাফিস ইকবাল। এরপরের নামটিই ‘কৌশিক’।

আজকের মাশরাফি বিন মর্তুজা। ওই দিনের ম্যাচে অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় যুব দলের হয়ে আরও ছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিকী, জহুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ শরীফ এবং তালহা জুবায়ের। বলার অপেক্ষা রাখে না, এরা সবাই জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন।

কুয়েতের সাদামাটা ও দুর্বল বোলিং কি আর মেধাবী এবং ওই বয়সেই প্রায় হাত পাকিয়ে ফেলা আশরাফুলকে টলাতে পারে? আশরাফুল ঠিক সেঞ্চুরি করে ফেললেন অনায়াসে। উইকেটের চারিদিকে ১০টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারির অনুপম প্রদর্শনীতে ১০৩ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস বেরিয়ে আসলো তার ব্যাট থেকে। আকরাম খানের ভাইপো আর তামিম ইকবালের বড় ভাই নাফিস ইকবাল খেললেন ৩৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। জুনায়েদ সিদ্দিকীর ব্যাট থেকেও আসলো ৪০ বলে ৩৬ রানের আরও একটি মাঝারি ইনিংস। বাংলাদেশ জিতলো ২১৬ রানের বিরাট ব্যবধানে।

কিন্তু সব ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং ম্লান হয়ে গেল কৌশিকের উত্তাল উইলোবাজিতে। মাত্র ১৭ বলে ৬০ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেললেন চিত্রা নদীর পাড়ের কিশোর ছেলেটি। দলে তার পজিসন মূলতঃ পেস বোলার। নীচের দিকে নেমে হাত খুলে খেলতে পারেন। বড় বড় ছক্কা হাঁকানোর সামর্থ্যও নাকি আছে তার।

যার হাত ধরে মাশরাফি ঢাকার ক্রিকেটে প্রথম খেলতে নামেন সেই বন্ধুপ্রতীম পাভেল ও মাশরাফির খুব কাছের মানুষ আরেক বন্ধু জাহিদ রেজা বাবু ভাইয়ের মুখে আগেই শুনেছিলাম, প্রচন্ড জোরে বল করার পাশাপাশি শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার ক্ষমতা আছে কৌশিকের; কিন্তু তাই বলে এতটা! ভাবিনি। অবাক বিস্ময়ে কৌশিকের ব্যাটিং ঝড় দেখলাম। তার ব্যাটের তান্ডবে দুমড়ে মুচড়ে গেল কুয়েতিদের বোলিং-ফিল্ডিং। আট নম্বরে নামলেন কৌশিক। বাংলাদেশ ইনিংস তখন একদম শেষের দিকে। বল বাকি মাত্র ২২টি।

স্কোর বোর্ডে রান ২৫৭। অতটুকুন বয়েসের ছেলেদ; কিন্তু নিজের সামর্থ্যের ওপর কি অসাধারণ আস্থা! বুঝে ফেললেন, আমি যত বেশি বল খেলবো, ততই রানের চাকা দ্রুত হবে। স্কোরবোর্ড হবে মোটাতাজা। ওই অনুভব থেকেই, ওই ডেলিভারিগুলোয় একাই প্রায় ৯০ ভাগ স্ট্রাইকে থাকলেন কৌশিক। মাত্র ১৬ মিনিটের একটি ছোট্ট ঝড়। তাতেই বিকেএসপির এক নম্বর মাঠ উত্তাল। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি। গুণে গুণে হাফ ডজন ছক্কা হাঁকালেন কৌশিক। আর চারটি বাউন্ডারি। মানে ৫২ রান শুধু ছক্কা ও চার দিয়েই এলো। শেষ ২২ বলে টিম বাংলাদেশ পেলো ৭০ রান।

কিছু শট এখনো চোখে ভাসে। একটু খাট লেন্থে পিচ পড়া ডেলিভারি পেলেই চকিতে পিছনের পায়ে গিয়ে কিংবা সামনের পা শূন্যে তুলে কোমরের জোরে স্কোয়ার লেগ আর মিড উইকেটের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে প্রচণ্ড জোরে পুল। কামানের গোলার মতো যা বাতাসে ভেসে গিয়ে একের পর এক আছড়ে পড়ছিল সীমানার ওপারে।

এখন যেমন উইকেট ছেড়ে দু’পা বেরিয়ে এসে লং অফ-লং অন আর ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে অবলিলায় তুলে মারেন মাশরাফি, সে দিনের কৌশিকের ব্যাট থেকেও তেমন কিছু শট বেরিয়ে এসেছিল। যতবার ‘ডাউন দ্য উইকেটে’ গেলেন, প্রতিবারই হয় এক বা দুই ড্রপে চার, না হয় ছক্কা হলো।

দৃষ্টি নন্দন ব্যাটিংশৈলি দিয়ে সাজানো শতরান করা আশরাফুল হলেন ম্যাচ সেরা। আর নাফীস ইকবালের মাখনে ছুরি চালানোর মতো পেলব মসৃন ব্যাটিং ব্যাকরণ সম্মত উইলোবাজির কথা বেমালুম ভুলেই গেলাম কৌশিকের ঝড়ো ব্যাটিং দেখে।

বলতে পারেন ১৮ বছর আগে বিকেএসপি মাঠে একজন জেনুইন হার্ড হিটারের আগমণ ধ্বনি শুনেছিলাম। তার ব্যাটের ছোঁয়ায় বল বিদ্যুৎ গতিতে চলে যাচ্ছিল সীমানার দিকে। মোস্তফা মামুন আর আমি বারবার বলাবলি করছিলাম- অনেক দিন পর একজন হাত খুলে খেলা উইলোবাজ আসছে। আমাদের দলে তখন পেস বোলিং অলরাউন্ডার বলতে খালেদ মাহমুদ সুজন। আর মুশফিক বাবুও আসি আসি করছিলেন। তারাও ব্যাটিং ভালোই করতেন। সুজন ছয়-সাত নম্বরে নেমে বেশ বিগ শট খেলতেন; কিন্তু তারপরও ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে ‘ক্লিন হিটার’ বলে তার অভাব ছিল।

আশাবাদী হলাম, এ কৌশিকই হয়ত জাতীয় দলের আগামীর বিগ হিটার। তাকে দিয়েই স্লগে রানের চাকা সচল করা যাবে। পরে বোলিংটাও দেখলাম। ৬ ওভার মোটে বল করলেন কৌশিক। ফিগারটা আহামরি ছিল না; ২৩ রানে ১ উইকেট। কুয়েত ওপেনার হামজা আরিফ ক্যাচ দিলেন নাফীস ইকবালের হাতে। কিন্তু তাতে কি! প্রচণ্ড গতি। তখন তো আর স্পিড মাপার মিটার ছিল না। তবে মনে হয়, ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে বল করলেন। মসৃণ অ্যাকশন। ১৭-১৮ স্টেপের লম্বা রানআপ। চমৎকার ফলো থ্রু। দু’দিকে সুইং। বল ক্যারিও করলো বেশ। কিছু ডেলিভারি গ্লাভসে নিয়ে হাত ঝাঁকালেন তখনকার উইকেটকিপার বাবেল।

দেড়যুগে পদ্মা, মেঘনা-যমুনা-বুড়িগঙ্গা আর চিত্রায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। আকাশে মেঘ বদলেছে হাজার বার। সেদিনের প্রাণোচ্ছল কৌশিক আজ পরিণত। ৩৫ বছরের। অনেক বড় মাপের ক্রিকেটার। বাংলাদেশের সব সময়ের সেরা অধিনায়ক। বিশাল হৃদয়ের মানুষ। আবাল-বৃদ্ধ বণিতা সবাই মাশরাফি বিন মর্তুজার ভক্ত।

বিদায়ের করুণ রাগিনী বাজার পূর্বক্ষণে সেই বিকেএসপিতে বিসিবি একাদশের হয়ে খেলতে নেমে নিশ্চয়ই সেই ১৭ বছর ১০ মাস আগে অনুর্ধ্ব- ১৭ দলের হয়ে মাঠ মাতানোর কথা মনে পড়বে মাশরাফির। টাইম মেশিনে হয়ত ফিরে যাবেন সেই দিনটিতে। মুহূর্তকাল হয়ত আবেগতাড়িৎ হবেন। স্মৃতির আয়নায় নিজেকে খুঁজে বেড়াবেন; সেই ১৬ বছরের আমি, আর আজকের মধ্য তিরিশের আমি'র মধ্যে কতটা তফাৎ!

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি