দালালিকে সিস্টেমের মধ্যে আনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Advertisement
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস র্যাংকিংয়ে উন্নতির লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি’র প্রথম সভায় এ পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘তদবির জিনিসটা তো খুব একটা খারাপ না। এটাকে সিস্টেমের মধ্যে আনলেই কেউ আর বলবে না যে দালালি করে টাকা নিচ্ছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে সার্ভিস পেতে অফিসে গেলেও দালালদের সহায়তা নিতে হয়। এজন্য তাদেরকে (দালালদের) টাকাও দিতে হয়। তারা সার্ভিস দেয়ার বিনিময়ে টাকা নেয়।’
Advertisement
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি নিজে দিল্লিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমাদের অ্যাম্বাসির একজন সেখানে নিয়ে গেলো। হাসপাতাল উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা লোক হাজির। তিনি (দালাল) নিজেই বললেন যে আমার কাজ হলো দালালি করা। আমি এ অফিস খুব ভালোমতো চিনি। আপনি আমার সঙ্গে আসেন, আমি আপনাকে যত জায়গায় নিয়ে যাওয়া লাগবে নিয়ে যাব, তারপর আপনাকে ছেড়ে দেব। এরপর যতগুলো রিপোর্ট সবগুলো আমি আপনার কাছে নিয়ে যাব। পরে একটা সময় দেব তখন আপনি এসে ডাক্তার দেখাবেন।’
মুহিত বলেন, ‘আমি এটা ইন্ডিয়ার উদাহরণ দিলাম। কিন্তু এটা অনেক দেশেই প্রতিষ্ঠিত। নিউইয়ার্কে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতেও দালালের সহায়তা নিতে হয়। পরীক্ষা কোথায় কোন দিন কখন যেতে হবে সেটা দালালরাই ঠিক করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দেই। যেটার কোনো হিসাব হয় না সেটাকে সিস্টেমে ঢুকায়া ফেললে এটা লিগ্যাল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে সার্ভিস পাওয়াটাও সহজ হয়ে যাবে।’
‘আমার উপদেশ হবে এ ধরনের সার্ভিসকে সিস্টেমের মধ্যে ঢুকায়ে দাও। এ জন্য যে সার্ভিস দেয় তাকে নিয়মিত পয়সা দেয়া হয় সেটাও দেয়া হোক। এটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসলে দালালের আয়ও বৈধ হয়ে যাবে।’
Advertisement
'আমরা সবাই সচেতন হলে সমাজে একটা পরিবর্তন আসবে। তখন কেউ আর বলবে না যে দালালি করে পয়সা নিচ্ছে। তখন মানুষ বলবে সার্ভিসের কারণে পয়সা নিচ্ছে। এটাকে সিস্টেম আনতে সংশ্লিষ্টদের বিবেচনা করার পরামর্শ দেন তিনি।'
তিনি বলেন, ‘মেইন আপিলটা হচ্ছে আমরা যারা সরকারি চাকরি করি আমাদের ভাবা উচিত যে সেবা দেয়াটা আমাদের কর্তব্য। এ জন্য সরকার পয়সা দেয়। একইভাবে যারা অন্য লোকের পক্ষে কাজ করে তাদেরও মনে রাখা দরকার কাজের বিনিময়ে তার কাছে কিছু নিচ্ছি।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করাটা খুব সহজ। একটা ঠেলা গাড়ি দিয়েও ব্যবসা শুরু করা যায়। সেটা আইনি হোক কিংবা বেআইনি। যখন কেউ ট্রেড লাইসেন্স পাবে, এর পরে যেন তাকে আর কোথাও যেতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘মালপত্রের আমদানি নিয়ে বন্দরে সমস্যা আছে। রিলিজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও বন্দর থেকে মালপত্র খালাস করতে সমস্যা আছে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। নৌমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কাস্টমসকে আরও চাপে রাখার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও বক্তব্য তুলে ধরেন।
এমইউএইচ/এএইচ/এমএস