রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অমানবিক নিষ্ঠুর নির্মম বিচারের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল। তিনি বলেছেন, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন শিশুছাত্রীর মনোজগত আমলে নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের যেভাবে অপরাধের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে সামাল দেয়ার কথা ছিল সেভাবে সেটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। শিশু না ভেবে মেয়েটির সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করে অপমান অপদস্ত করেছে। তার বাবাকে অপমান করা হয়েছে। শিক্ষিকার পায়ে ধরে মাফ চাওয়ার পরও মাফ করা হয়নি। অপমান সইতে না পেরে অরিত্রি আত্মহত্যা করেছে।’
Advertisement
মঙ্গলবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তবে তিনি এও বলেন, আত্মহত্যা কখনও প্রতিবাদের ভাষা বা অপমানের প্রতিবাদ হতে পারে না।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি শত ঘা খাব, পরাজিত হবো, আঘাত পাব, ব্যর্থ হবো, পড়ে যাব, হোঁচট খাব, চিৎ হয়ে পড়ে যাব কিন্তু আমি উঠে দাঁড়াবো ও আমি হাটবো- এটাই আমার জীবন। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইতিবাচক জীবন গড়বো। কিন্তু আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত কখনও নেয়া কারও উচিত নয়।’
Advertisement
ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘যেসব সামাজিক ক্ষত বা ঘটনা কাউকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করে বা উসকে দেয় সেসব ক্ষতকে চিহ্নিত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে জোরালো প্রচারণা চালাতে হবে। কেউ যখন আত্মহত্যা করে ফেলে তখন আর তার পক্ষে কথা বলে লাভ নেই।’
তিনি বলেন, ‘অরিত্রির বিষয়টিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভালভাবে ম্যানেজ করতে পারেনি। তারা শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি উপলব্ধি না করে তার সঙ্গে প্রাপ্তবয়ষ্কদের মতো নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করেছে। তাকে ও তার বাবা-মাকে অপমান করে বিদায় করা হয়েছে। পায়ে ধরে মাফ চাওয়ার পরও মাফ না করে বদলি সনদ (টিসি) দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।’
এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, তারা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কাউন্সিলিং করেনি। সে এর আগেও এ ধরনের অপরাধ (নকল করার অভিযোগ) করেছিল কিনা, করে থাকলে ওই সময় অভিভাবককে জানানো হয়েছিল কিনা, তাকে কাউন্সিলিং করে এ ধরনের অপরাধ না করতে তাকে কাউন্সিলিং করা হয়েছিল কিনা, কাউন্সিলিং এরপর সংশোধন না হয়ে থাকলে কেন হয়নি তা নির্ণয় করা হয়েছিল কিনা, তার বাবা-মায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন রয়ে যায়। এটি হয়তো শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানের জোরালো অবস্থান থেকে করেছেন, তারা হয়তো অনেক যুক্তি দেখাবেন কিন্তু কারণটি যথার্থ নয়। শিশুর মনস্তত্ত্ব বুঝতে হবে। শিশুদের সহনশীলতা কম। সব পরিস্থিতির সাথে শিশুরা মানিয়ে নিতে পারে না।
অরিত্রিকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।
Advertisement
এমইউ/এমবিআর/জেআইএম