সাত দশকেরও বেশি সময় পরে নিজভূমে সমাহিত হলেন। যার কথা বলছি তিনি হলেন, সার্জেন্ট রিচার্ড মার্ফি জুনিয়র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিখোঁজ ৭২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনার মধ্যে একজন। ১৯৪৪ সালের জুন মাসে নর্দার্ন মেরিয়ানার সাইপানের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে নিহত হন মার্কিন নৌসেনা বাহিনীর এই সদস্য। তার বয়স তখন মাত্র ২৬। দেহাবশেষের যতটুকু পানিতে ভেসে ছিল, তা উদ্ধার করা হলেও শনাক্ত সম্ভব হয়নি তখন।
Advertisement
মার্ফির সেই দেহাবশেষ ঠাঁই পায় ফিলিপাইনের এক সমাধিক্ষেত্রে। এত বছর সেখানেই শায়িত ছিলেন তিনি। চলতি বছর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শনাক্ত না হওয়া এমন অনেক সমাধি খুঁড়ে শুরু হয় পরিচয় বের করার কাজ। আধুনিক বিজ্ঞান, সেনা-ইতিহাসের এক নিয়োজিত গবেষক ও মার্ফির পরিবারের সদিচ্ছা সব মিলিয়ে অসাধ্য সাধন হয়েছে। দীর্ঘ সাত দশক পর মার্ফি ফিরে এসেছেন মেরিল্যান্ডে, যেখানে তার জন্ম। সিলভার স্প্রিং-এর এক সমাধিক্ষেত্রে গত শনিবার মায়ের সমাধির পাশেই ফিরে এলেন তিনি।
মার্ফির ৬৮ বছর বয়সী ভাইপো জেরি বলেন, এ এক অদ্ভুত যাত্রা। তিনি বরাবরই আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। কিন্তু যা ঘটল, সেটা অভাবনীয়। ভীষণ সুন্দর। ঠিক এক শতক আগে কলম্বিয়ায় জন্ম রিচার্ড মার্ফি জুনিয়রের। জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মার্ফি পড়াশোনা শেষে ‘ইভেনিং স্টার’ খবরের কাগজে যোগ দেন। স্থানীয় খবর লিখতেন যুবক মার্ফি। ধীরে ধীরে যুদ্ধসংক্রান্ত রিপোর্টার হয়ে ওঠেন। আর এভাবেই একদিন মার্কিন নৌসেনা বাহিনীর সদস্য হওয়া। এক চোখে দেখতে না পেলেও তাকে রণক্ষেত্রে পাঠানো হত।
ওই কাজে এক বছর পরেই বিপদের মুখোমুখি হন মার্ফি। প্রশান্ত মহাসাগরে এমন একটি যান চালিয়ে তিনি এগোচ্ছিলেন, যেটি জল-স্থল দু’টিতেই এগোতে পারে। নর্দার্ন মেরিয়ানার দিকে যাচ্ছিলেন মার্ফি। সাইপান তখন জাপানিদের ঘাঁটি।
Advertisement
মার্ফিদের যান দেখেই শুরু হয় মর্টার বর্ষণ। এক প্রত্যক্ষদর্শী পরে মার্ফির মাকে জানিয়েছিলেন সেদিনটার কথা। মর্টারের তোড়ে প্রবাল প্রাচীরে আটকে যায় মার্ফিদের যান। বাকি সঙ্গীরা লাফিয়ে নেমে গেলেও আহত একজনের জন্য যান ছেড়ে যাননি মার্ফি। এরপরেই ছুটে আসে শেল, পুরো যানটাই তলিয়ে যায় পানিতে। নিখোঁজ হন মার্ফি।
তিন মাস পরে তার মায়ের কাছে টেলিগ্রাম আসে যে, তার ছেলে যুদ্ধে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। তারও এক বছর পরে আর একটি টেলিগ্রামে জানানো হয়, ‘ধরে নেওয়া হচ্ছে সার্জেন্ট রিচার্ড জুনিয়র আর বেঁচে নেই।’ ২২টি বই ভরা মার্ফির ট্রাঙ্ক, চারটি খাতা, আর দু’টি তামাকের প্যাকেট পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাবা-মায়ের কাছে।
বাকি জীবনটুকু বাবা-মা ছেলের ফ্রেমবন্দি ছবি নিয়েই কাটিয়ে দেন। ছবিটা ভাইপো জেরির হাতে আসে। ২০১৪ সালে ফোন পান এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে। তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিখোঁজ সেনাদের দেহাবশেষ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। তারপরে দীর্ঘ যাত্রা পেরিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরলেন সার্জেন্ট রিচার্ড মার্ফি জুনিয়র, মৃত্যুর ৭৪ বছর পর।
টিটিএন/জেআইএম
Advertisement