জাতীয়

চিটিংয়ের পানিশমেন্ট মৃত্যু কবে থেকে?

অসুদপায় অবলম্বন কিংবা নকল করার শাস্তি মৃত্যু কবে থেকে? সহ-এ রকম নানা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড মঙ্গলবার সকাল থেকেই দৃশ্যমান উত্তাল রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল প্রাঙ্গণে। শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় স্কুলের অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিতে স্কুলের ভেতর ও বাইরের সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

Advertisement

তাদের হাতে রয়েছে নানা ধরনের প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে ‘নো স্টুডেন্ট ডিজার্ভ টু বি ইনসালটেড (শিক্ষার্থীদের অপমান করা যাবে না)’;‘প্রিন্সিপালের পদত্যাগ চাই’; ‘এডুকেশন এনলাইটেন আস, ইট ডাজ নট কিলস আস (শিক্ষা আলো দেয়, হত্যা করে না)'; ‘প্রত্যেকটি আত্মহত্যা কি একটা হত্যা নয়?’; ‘চিটিংয়ের পানিশমেন্ট মৃত্যু কবে থেকে?’; ‘উই ডিমান্ড অ্যানসার্স ফরম দ্য অথরিটি (প্রশাসন জবাব চাই)’; ‘এডুকেশন মেড অরিত্রি হ্যাং’ (অরিত্রির মৃত্যুর জন্য দায়ী শিক্ষাব্যবস্থা)’; ‘এটি আত্মহত্যা না এটি হত্যা’।

প্ল্যাকার্ড হাতে নবম শ্রেণির ছাত্র তানজিল আহমেদ বলে, আমরা ছোটকাল থেকে নানা কারণে শিক্ষকদের কাছে শাস্তি পেয়ে আসছি। তবে অরিত্রির অপরাধ প্রমাণিত ছিল না। তার কাছে মোবাইল পাওয়া গেছে বলে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে। সে বলে, অরিত্রি যদি চিটিং করেও থাকে তাহলে এর শাস্তি মৃত্যু কেন? স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই জবাব দিতেই হবে। এভাবে আমরা আর কেউ মরতে পারব না।

অরিত্রির সহপাঠী সুলতানা বিলকিস জাগো নিউজকে জানায়, ভিকারুননিসায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত নানা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। কারও কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা করা উচিৎ। সেজন্য পরিবারকে বিব্রত করার তো কোনো কারণ নেই। আমাদের বাবা-মা এমনিতেই জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত, আমরা তাদের আর বিব্রত করতে চাই না। বিষয়টি সুরাহা করা দরকার।

Advertisement

দশম শ্রেণির রাত্রি চৌধুরী বলে, একজন মেয়েকে অনেকের সঙ্গে সংগ্রাম করে পড়ালেখা করতে হয়। এরপরও স্কুলগুলো আমাদের নানাভাবে চাপে রাখে। অরিত্রি এই চাপ সইতে না পেরে পৃথিবী থেকে চলে গেছে। তবে যারা তাকে মৃত্যুর পথে ধাবিত করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও। অভিভাবক এস এম ইশতিয়াক বলেন, আমরা আমাদের মেয়েদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। ভিকারুননিসা স্বনামধন্য স্কুল হতে পারে কিন্তু এর মানে এই না যে, তারা কোনো শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। আমরা জড়িতদের পদত্যাগ চাইছি।

এ ঘটনায় ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, ‘সোমবার রাতে আমরা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছি। সেখানে এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আতাউর রহমান, খুরশিদ জাহান, ফেরদৌসী বেগমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষার্থীরা তার সামনে স্কুলের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে। অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করতে মন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিভাবকরা মিছিল-টিছিল করছেন, বিষয়টা জটিল হয়ে গেল। আমি সেখানে যাচ্ছি। গতকাল (সোমবার) শুনেই আমি যথাসম্ভব তথ্য নিয়েছি। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। আমি তাদের বলেছি, আপনারা আইনগত দিকটা দেখেন, কারণ এর মধ্যে ক্রিমিন্যাল ব্যাপার আছে একটা। আর আমরা আমাদের বিষয়টা দেখব।’

Advertisement

সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার (২ ডিসেম্বর) সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।’

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে এবং আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে তিন সদস্যের পৃথক একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর) ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফ এই কমিটির প্রধান। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এআর/এসআর/জেআইএম