একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে 'তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা' প্রকাশ করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
Advertisement
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়ামের সামনে এ ইশতেহার ভাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা। এরপরই 'তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা– ২০১৮' আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে দেয়া শুরু করেন তারা।
ইতোমধ্যে সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে তরুণদের ইশতেহার ভাবনা তুলে দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছেও এই ইশতেহার ভাবনা দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেল কোটা আন্দোলনকারীদের এই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর ও রাশেদ খানের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে ইশতেহার ভাবনা তুলে দেন।
Advertisement
এ বিষয়ে নূরুল হক বলেন, আমরা আমাদের ইশতেহার ভাবনা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়েছি। তাকে আমরা অনুরোধ করেছি যেন আমদের ইশতেহার ভাবনাগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যোগ করা হয়। কোটা আন্দোলন ও সড়ক আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের করা হয়।
তিনি আমাদের বলেছেন ‘ইশতেহার ভাবনাগুলোতে ভালো দাবি দাওয়া উঠে এসেছে। আমরা এটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। আমি এটা পুরোটাই আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির কাছে পাঠাবো। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির সঙ্গে কথা বলে মামলার বিষয়টি দেখবো।’
একই সময়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর হাতে ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা- ২০১৮’ তুলে দেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে তারুণ্যের ভাবনাগুলো যোগ করার অনুরোধ করেন।
রুহুল কবির রিজভীও তরুণদের দেয়া ইশতেহারের বিষয়গুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়গুলো শতভাগ যোগ করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
Advertisement
বিএনপি কার্যালয় থেকে ফিরে ফারুক হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য আ হ ম শফিক উল্লাহর কাছে ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা- ২০১৮’ তুলে দেন।
ক্ষুধা-দারিদ্র্য-বেকারমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ, শোষণ-বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের দাবির আলোকে ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা- ২০১৮’ তৈরি করা হয়েছে।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা- ২০১৮’ এ বিসিএস পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ এবং শিক্ষায় জিডিপির ৫ ভাগ বা জাতীয় বার্ষিক বাজেটের ২০ ভাগ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফল প্রকাশের দাবি রয়েছে এতে। পাশাপাশি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিন ও লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
ইশতেহারে তরুণদের আরও যে দাবি রয়েছে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের নিশ্চয়তা প্রদান; বেকার তরুণদের সহজ শর্তে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকার ঋণ প্রদান; ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কার; চাকরির আবেদন সম্পূর্ণ ফ্রি করা; প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে এবং লিখিত পরীক্ষার ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ; মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে সর্বোচ্চ ৫০ নির্ধারণ; তথ্য যাচাইয়ের নামে হয়রানি বন্ধ; বেসরকারি চাকরি আইন প্রণয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক নিয়োগ পরীক্ষা প্রণয়ন; শিক্ষা খাতে বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ; বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা; প্রশ্ন ফাঁসবিরোধী সেল গঠন; শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে কঠোর আইন এবং মেধাপাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ; ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা; আবাসনের কৃত্রিম সংকট দূর করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ১০ শতাংশ গবেষণা খাতে বরাদ্দ; শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা; শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেতন কাঠামো তৈরি; মাদক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা; যুব সমাজকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে উন্নত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে প্রতি বছর যুব অ্যাসেম্বলির আয়োজন এবং সেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই হয় ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর আর প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর।
এমএইচ/জেডএ/আরআইপি