অনেক জনপ্রিয় শিল্পীকে শেষ জীবনে অর্থ সংকটে ভুগতে দেখা যায়। অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা নিতে হয় অন্যের। অথচ সেই গানের মানুষরা অজস্র জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তারা তাদের গানের সঠিক রয়্যালিটি পেলে কোনো দিনও তাদের অভাবে পড়ার কথা না। এই বিষয় নিয়ে অনেকেই আন্দোলন করেছেন। প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী আইয়ু্ব বাচ্চু মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। স্বাধীনতার এত বছর পরেও সংগীতশিল্পের রয়্যালিটি-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়নি।
Advertisement
এ দিকে গান বিপণনে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ক্যাসেট সিডির যুগ পেরিয়ে এখন অনলাইনে এসেছে গান। গানের মানুষরা এখনো ঠিক মতো বুঝে পাচ্ছেন না তাদের নায্য পাওনা। এমন কি শ্রোতাদেরও ফ্রি তে গান শোনার প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। এসব বিষয়ের কঠোর সমালোচনা করলেন জনপ্রিয় ব্যন্ড গানের শিল্পী মাকসুদ।
ঢাকা ব্যান্ডের কর্ণধার মাকসুদুল হক বলেন, ‘আমরা যারা রক মিউজিক করি, অনেকেই মনে করেন আমাদের অঢেল টাকা পয়সা। আসলেই কি তাই। মিউজিসিয়ানদেরও পেট আছে। আমরা এটা করেই বাঁচি। সবাইকে অনুরোধ করবো এই পেশাকে সম্মান করুন। একটা অসমাপ্ত যুদ্ধ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সেটা হলো কপিরাইট, কপিরাইট আন্দোলন। আমরা শিল্পীরা যখন অসুস্থ হই, তখন তার জন্য একটা তহবিল গঠন করা হয়। যেই সরকারই আসুক দুস্থ শিল্পীদের জন্য একটা ফান্ড থাকে। আমি বলি দুস্থ শিল্পীদের এই ফান্ড বাদ দেন। শিল্পীরা হচ্ছে দ্য এক্সপেনসিভ পোডাক্ট অব কান্ট্রি। আমরা কিছুই চাই না আমাদের নায্যটা বুঝিয়ে দিন। এই লড়াই, আমি, বামবা, হামিন আহমেদ, আইয়ুব বাচ্চু, টিপু আরও অনেকেই ১৪ বছর ধরে লড়ছি।’
মাকসুদ আরও বলেন,‘ খুব কষ্ট হয় যখন আমাদের ফ্যানরা বলে নতুন গানের ফ্রি ডাউন লোড লিংকটা দেন। খুব লজ্জা লাগে। আমি বলি আপনারা অনলাইনে কাপড় কিনতে পারছেন, পয়সা খরচ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, বাড়ি কিনছেন, গাড়ি কিনছেন এমন কি কোরবানির গরুও কিনছেন । কিন্তু শিল্পীদের ১০টাকা দিয়ে একটা গান কিনতে আপনাদের খুব কষ্ট হয়। আমাদের গান কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ফ্রি দেওয়া হয়েছে আর ফ্রি হবে না। এই লড়াইটা আমাদের জিৎতেই হবে।’
Advertisement
আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে তিনি বললেন, ‘শিল্পীদের গানের রয়্যালিটি নিয়ে সব সময় কথা বলেছেন আইয়ুব বাচ্চু। জীবনের শেষ দিকের সাক্ষাৎকারেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। অর্থের জন্য শরীরের উপর অত্যাচার করে গান গেয়েছেন। অনেক দুঃখ কষ্ঠ নিয়ে আইয়ুব বাচ্চু ওপারে চলে গেছেন। আমরা যারা জীবিত আছি, আমাদের, আপনাদের সচেতন হতে হবে।’
প্রয়াত রক কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) আয়োজন করেছিল ‘ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’। রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে হয়ে গেল এ আয়োজন। এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন মাকসুদ। এখানেই তিনি কথা বলেন রয়্যালিটি নিয়ে।
‘ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’ কনসার্টে আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানগুলো গেয়েছন বামবার সদস্যরা। রোববার সন্ধ্যার আগে শুরু হয়েছিল কনসার্ট চলেছে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
এমএবি/এলএ/এমএস
Advertisement