আইন-আদালত

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনারোধে হাইকোর্টের রুল

পাইপলাইনে ও সিলিন্ডারে প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকসহ ছয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

জনস্বার্থে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন।

পাইপলাইনে ও সিলিন্ডারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

Advertisement

গত ১৯ নভম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘মৃত্যুফাঁদ থেকে সাবধান, গ্যাস পাইপ লিকেজ ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানি, দায় নিচ্ছে না কেউ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বরে যাত্রাবাড়ীতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে লিকেজ হওয়া গ্যাসে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু ও পাঁচজনের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২ নভেম্বর গ্যাসের আগুনে আশুলিয়ায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তবে গ্যাসের আগুনের কারণে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে না কেউ। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা যন্ত্রণাকাতর জীবনের দায়ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে গ্যাস দুর্ঘটনায় ১০৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে গ্যাসলাইন লিকেজে ৫৫টি এবং এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে ৪৮টি। এতে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে শিশুসহ ছয়জন এবং গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৩১ জনকে।

অবশ্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় যেসব দগ্ধ হাসপাতালে মারা যায়, তাদের হিসাব ফায়ার সার্ভিস রাখে না। সে কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে।’

Advertisement

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গ্যাসলাইন লিকেজ, গ্যাস সিলিন্ডার ও সিলিন্ডারের হোসপাইপ লিকেজ থেকে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড বেশি ঘটছে। প্রশ্ন উঠেছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের মান নিয়েও।’

পত্রিকার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪০-৪৫ বছরের বেশি সময়ের পুরনো গ্যাস বিতরণ লাইন রয়েছে ঢাকায়। এসব গ্যাসলাইনের ব্যাপারে তেমন তদারকি নেই তিতাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। গ্যাসলাইনে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের অসাবধানতা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে সঠিকভাবে গ্যাসলাইন সংযোগ, এলপিজি সিলিন্ডার এবং চুলার ফিটিংস সঠিকভাবে না হওয়ার কারণেও অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।’

এ প্রতিবেদনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন এ আইনজীবী। পরে আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারির আদেশ দেন।

এফএইচ/এসআর/জেআইএম