>> চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল>> সব আসনে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের বিকল্প প্রার্থী>> শূন্য আসনে সমমনা না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন
Advertisement
দলীয় মনোনয়নপত্র দেয়ার শুরুতে আসন ভিত্তিক চূড়ান্ত প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সারাদেশে ৩০০ আসনে ৮০০ এর বেশি প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ‘এক আসনে একাধিক প্রার্থী’কে মনোনয়ন দেয়ায় রাজনৈতিক মহলে দলটিকে নিয়ে নানা নেতিবাচক আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু গতকাল মনোনয়ন বাছাই শেষে মনে হচ্ছে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন >> ২৭ বছর পর বগুড়ার কোনো আসনে জিয়া পরিবারের কেউ নেই
গতকাল রোববার চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বিএনপি, জামায়াত, এলডিপি ও গণফোরাম মিলিয়ে ২৩ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের মোট ১৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়। বাতিলের তালিকায় বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও রয়েছেন। কিন্তু একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় এসব আসনের সবগুলোতে বিএনপি-জামায়াতের বিকল্প প্রার্থী রয়েছেন।
Advertisement
বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতারা শুরুতেই খেয়ালা করেছিলেন যে, সরকার খুব সহজে বিএনপিসহ ২৩ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের সুযোগ দেবে না। বিশেষ করে আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলে তার ওপর মিথ্যা মামলা, হামলা, নির্যাতনসহ নানা ধরনের নিপীড়নের খড়গ নেমে আসতে পারে। তাই ক্ষমতাসীনদের বিভ্রান্ত করতেই এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় বিএনপিসহ ২৩ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট।
আরও পড়ুন >> মনোনয়ন বাতিলের সব খবর
শুধু ওই কারণেই সব ঠিক থাকার পরও ২৩ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টনের বিষয়টি মনোনয়ন বাছাইয়ের আগে সামনে আনেনি বিএনপি। এখন অনেক স্থানে জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারায় কিংবা মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় বিএনপির হাতে বিকল্প প্রার্থী দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
যদিও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিলের কারণে দেশের ছয়টি আসন বিএনপির প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। আসনগুলো হলো বগুড়া–৭, ঢাকা-১, শরীয়তপুর–১, মানিকগঞ্জ-২, রংপুর-৫, জামালপুর-৪ আসন।
Advertisement
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দলের কৌশলী সিদ্ধান্তে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনা ছিল সারাদেশে অন্তত ১০০টি আসনে বিএনপিকে প্রার্থীশূন্য করে ফেলা। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি বুঝতে পেরে পাল্টা চালে সে পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই ভালো ভালো প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। এছাড়া অন্তত ছয়টি আসেন বিএনপি, ২৩ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই। এ কারণে জোট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকল্প প্রার্থী পরিকল্পনা সেই ক্ষতি অনেকটাই মিনিমাইজ করা যাবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীর চাইতে প্রতীকে বেশি আস্থা রাখেন ভোটাররা। তাই আগামী ৯ তারিখের পর সবাই ধানের শীষ প্রতীকের জন্য কাজ করবেন।’
আরও পড়ুন >> যেসব কারণে বাদ পরলেন চট্টগ্রামের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার বাতিল বললেই প্রার্থিতা বাতিল হয় না। আরও দুটি ধাপ বাকি আছে। আশা করছি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনের মাধ্যমে অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। এছাড়া প্রার্থী বাতিল হতে পারে সেই আশঙ্কায় আমরা প্রতিটি আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখেছিলাম। সেই দিক দিয়ে এটিকে বিএনপির কৌশলের বিজয় বলা চলে।’
সারাদেশে অন্তত ছয়টি আসনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। ওই আসনগুলোতে কী করবে ঐক্যফ্রন্ট- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এখনও আপিলের সময় আছে, আসনশূন্য থাকার পরিস্থিতি এখনও আসেনি। ঠুনকো কারণে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। আশা করছি তারা প্রার্থিতা ফিরে পাবেন।’
‘আর যদি শূন্য আসনে ঐক্যফ্রন্টের সমমনা লোক পাওয়া না যায় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া হবে। সরকার যাই করুক এবার মাঠ ছাড়ছি না’- যোগ করেন তিনি।
যাদের মনোনয়ন বাতিল, বিকল্প প্রার্থী যারা
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যানের নুরুল আমিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগপত্রের কপি জমা দিতে না পারায়। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী প্রফেসর কামাল উদ্দিন ও মুনিরুল ইসলাম ইউসুফ।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণ খেলাপির কারণে। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী নুরী আরা সাফা, আজিম উল্লাহ বাহার, ছালাহ উদ্দীন ও খুরশীদ জামিল চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৫৪ হাজার টাকার টিএন্ডটি বিল বকেয়া থাকায়। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী নুরুল মোস্তফা খোকন ও মো. বেলায়েত হোসেন।
আরও পড়ুন >> সারাদেশে ৭৮৬ জনের মনোনয়ন বাতিল
চট্টগ্রাম-(সীতাকুণ্ড) আসেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ঋণ খেলাপির কারণে। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী মো. ইসহাক চৌধুরী, এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মীর মো. নাসির উদ্দিন দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় এবং তার ছেলে মীর মো. হেলাল উদ্দিন ঋণ খেলাপির কারণে প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা এবং ২৩ দলীয় জোট প্রার্থী ও কল্যাণ পার্টির প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সামীর কাদের চৌধুরীর মনোনয়পত্রও বাতিল করা হয় ঋণ খেলাপির কারণে। রিটানিং কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকে সামির কাদের চৌধুরীর ঋণ আছে। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী জসীম উদ্দীন সিকদার।
বাছাইয়ে বাতিল হওয়া বিএনপি প্রার্থীরা চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আলিম ব্র্যাক ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ঋণ খেলাপি হওয়ায় মনোনয়পত্র বাতিল করা হয়। এছাড়া আবু আহমেদ হাসনাত প্রাইম ব্যাংক ও লংকা বাংলা ফাইন্যান্সে ঋণ খেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়পত্রও বাতিল হয়। তবে আবু হাসনাত জানান, তার ঋণ আছে শুধুমাত্র লংকা বাংলায়। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী মুহাম্মদ শওকত আলী নুর ও কুতুব উদ্দিন বাহার।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে ঋণ খেলাপি হওয়ায় বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এম মোরশেদ খান ও বিকল্প প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ ব্যাংক হিসাব না খোলায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী আবু সুফিয়ান। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী মোহাম্মদ সামশুল আলমের বিভিন্ন ব্যাংকে শত শত কোটি টাকা ঋণ পাওনা থাকায় মনোনয়পত্র বাতিল করা হয়। এ আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে এলডিপির প্রার্থী এম ইয়াকুব আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালেব বেলালীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ আসনে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান ও মো. এনামুল হক।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ জামাল আহমদ, বিএনএফ প্রার্থী নারায়ন রক্ষিত এবং গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিকের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও সরওয়ার জামাল নিজাম। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এক শতাংশ ভোটারের তথ্যের গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়। এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াতের নায়েবে আমির মো. জহিরুল ইসলামের মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে মন্ত্রণালয় থেকে কপি আনতে না পারায় মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা তিনদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।
আবু আজাদ/এমএআর/পিআর