বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অসংখ্য মনোনয়ন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বেগম জিয়া আরও একটি আক্রোশের শিকার হলেন শেখ হাসিনার।’
Advertisement
সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলে রিজভী।
তিনি বলেন, বিনা অজুহাতেই টার্গেট করে ৫০ জনের মতো দলের হেভিওয়েট জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক এমপিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারদের কক্ষ সংলগ্ন ‘ছোট রুম’টিই এখন টক অব দি কান্ট্রি। বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে, কি হবে না সেটি জানার জন্য বারবার রিটার্নিং অফিসার ওই ছোট রুমে ছুটে যান। মূলত সরকারের নির্দেশ শোনার জন্যই রিটার্নিং অফিসারকে বার বার ওই রুমে যেতে হয়।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীদের অনেকেরই মনোনয়নপত্র নির্ভুল থাকার পরেও উক্ত ছোট রুম থেকে ফিরে এসে রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) বলেন- ওপরের নির্দেশ আছে বলেই এই মনোনয়নপত্রটি বাতিল করতে আমি বাধ্য হচ্ছি। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর একজনেরও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। কারণ তাদেরকে সাধু-সন্যাসী বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন।’
Advertisement
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না করা সত্ত্বেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্রে টিপসই দেয়া হয়েছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অচেতন হয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। কেউ বিদেশে অবস্থান করলে তার স্বাক্ষর কিংবা টিপসই সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসির একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে, যার মর্যাদা হবে প্রথম শ্রেণির একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সমমানের। এ ধরনের কর্মকর্তার দ্বারা সত্যায়িত হয়নি সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র। তার মনোনয়নপত্র নোটারি করা হয়েছে বাংলাদেশে, যা আইনসিদ্ধ নয়। সৈয়দ আশরাফের নামে নির্বাচনী কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই, যেখান থেকে নির্বাচনী খরচ চালানো হবে। তাহলে সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র বৈধ হলো কীভাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষীপুর-৩ আসনে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল কাগজপত্র ও অন্যান্য তথ্য দাখিল না করলেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। এটি নিয়ে নিউজ করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অনেক দণ্ডিত নেতারও মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতি নির্বাচন কমিশনের ভালবাসা, প্রশ্রয়, সমর্থন প্রতিদিনই গভীর হচ্ছে। শেখ হাসিনা জনগণকে মনে করেন অনুকম্পার বস্তু। তাই আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে যতো পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনা আছে সেগুলো শেখ হাসিনার ইচ্ছানুযায়ী বাস্তবায়ন করছে। কারণ বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী সরকার একই স্পিসিজ’র (প্রজাতির)। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী গ্ল্যামারই ধারণ করে আছে। তারা প্লেয়িং ফিল্ড সমতল করা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। নির্বাচনী প্লেয়িং ফিল্ড এখন বরেন্দ্র ভূমির ন্যায়।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের পরিব্যাপ্ত ছায়া। সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন নির্দেশেই ইসি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডেই বোঝা যায় যে, তারা কোন জাতের। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নেতিবাচক চরিত্র হলেন এইচ টি ইমাম। তিনি নির্বাচনকে নিয়ে যত রকমের কারিগরি করা দরকার তাই করছেন। আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে এও জানতে পারছি- ভোটের দিন ইন্টারনেট, থ্রি-জি, ফোর-জি, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হবে। আজ থেকে মনিটরিং করা হবে ফেসবুকসহ সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিব।’
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে বিএনিপর ভাইস চেয়াম্যান বেগম সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহিদা রফিক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমবিআর/এমকেএইচ