আন্তর্জাতিক

ইভিএম নিয়ে নানা অভিযোগ ভারতেও

বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি ও সমালোচনার পরও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনের সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

Advertisement

ইসির এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটারদের মাঝেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

অনেকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার ইতিবাচক বলে দাবি করছেন।

তবে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতাকারীদের দাবি, অধিকাংশ ভোটারই গ্রামের বাসিন্দা। সাধারণ ভোটাররা ইভিএম সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত নয়। তাদের মধ্যে ইভিএমের ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই বললেই চলে। এ ছাড়া ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি ও কারসাজি করা সম্ভব। এই যন্ত্রকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করা যায়। ভোট কারচুপি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইভিএস ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী দলের।

Advertisement

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে- এতে কারচুপি সম্ভব নয়।

একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও। কংগ্রেসসহ অনেকগুলো বিরোধীদল দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাছে ইভিএম বাতিল করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি জানালেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশটির মধ্যপ্রদেশে সাগর জেলায় ভোট শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর কালেকশন সেন্টারে পৌঁছেছে ইভিএম। এখানে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস।

অন্যান্য রাজ্যের ভোটেও ইভিএম নিয়ে উঠেছে নানা অভিযোগ। এতে করে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের অস্বস্তি বাড়িয়ে ইভিএম-বিরোধিতাও ক্রমশ একজোট করছে বিরোধীদের।

Advertisement

তেলঙ্গানা রাজ্যে ভোট এখনও পাঁচ দিন বাকি। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধিকে পাশে নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু আগাম সতর্ক করেছেন, কারচুপি হতে পারে। স্ট্রংরুমের সামনে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন রাহুল।

মধ্যপ্রদেশের ভোটের দিনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) ত্রুটি হলে কমিশনকে দায় নিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে সরব সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি থেকে শুরু করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। সামনের সপ্তাহে বিরোধীদলগুলোর বৈঠকেও এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

লোকসভায় ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট গহণের দাবি আগেই তুলেছে কংগ্রেস। রোববার কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল দিল্লিতে কমিশনে গিয়ে অভিযোগ জানায়। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘হারের ভয়ে ভোটের পর ইভিএমে ব্যাপক কারচুপি করতে মরিয়া বিজেপি।’

অভিযোগ উঠেছে, ছত্তিশগড়ে এবারের ভোটে কমিশনের হিসাবের পরেও রাজ্যের বিজেপি সরকার ইভিএমে পড়া ভোটের অঙ্ক আরও ৪৬ হাজার বাড়িয়ে দেখিয়েছে। তার পরও সেই সব আসনে কংগ্রেস-বিজেপির পার্থক্য ছিল সামান্য। এ ছাড়া মধ্যপ্রদেশে ভোটের দিনই ৩ শতাংশ ইভিএমে গরমিল দেখা যায়। আর ভোটের পর ইভিএম পাওয়া যাচ্ছে বিজেপি নেতার হোটেলে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় স্ট্রং-রুমের ভিতরের ‘লাইভ-ভিডিও’ বন্ধ ছিল দেড় ঘণ্টা।

আরও অভিযোগ- দুদিন পরে নম্বর প্লেট ছাড়া স্কুলবাসে করে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে ইভিএম। এর আগে কর্নাটকের গ্রামে ইভিএমের বাক্স পাওয়া যায়। তাতে ঠাসা জামাকাপড়।

কেজরিওয়ালের দলের বিধায়ক ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ ভরদ্বাজ আগেই দেখিয়েছিলেন, ১৫-২০ মিনিট সময় হাতে পেলেই ইভিএম বদলে দেওয়া যায়। গত বছর মধ্যপ্রদেশের ভিন্দেই কমিশন নতুন ‘ভিভিপ্যাট’-এর কাজ দেখাতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। যন্ত্রে যে বোতামই টেপা হচ্ছিল, ভোট পড়ছিল পদ্মফুলে।

তবে দেশটির সদ্য সাবেক একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার দাবি করে বলেন, ‘ইভিএমে কারচুপি অসম্ভব।’ আরেক সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তিরও একই মত। তবে তার বক্তব্য, ‘ইভিএমের হেফাজত নিয়ে প্রশাসনিক গলদ থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। না হলে কমিশনের ভাবমূর্তি খারাপ হবে।’

এমবিআর/জেআইএম