খেলাধুলা

ভালো খেলে টেস্ট জয়ের পরিতৃপ্তি অনেক বেশি : সাকিব

ঠিক অভিযোগ বলা যাবে না। তবে একটা কথা শোনা যায়, ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন আছে যে সাকিব আল হাসান নাকি দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাট খেলতে পছন্দ করেন না। একদিনের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের প্রতিই নাকি তার ঝোঁক বেশী। কেউ কেউ বলেন, সাকিবের প্রথম পছন্দ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। বিশেষ করে আইপিএল, বিপিএল, বিগ ব্যাশ, সিপিএল আর পিএসএলের মত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার প্রতিই নাকি তার ঝোঁক-আকর্ষণ বেশী।

Advertisement

তবে সেটা যে আমলোকের ভিত্তিহীন, অসাঢ় কথাবার্তা- তাতে সন্দেহ নেই। কারণ তার ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান ও রেকর্ডই বলছে ভিন্ন কথা। তার প্রোফাইল সাক্ষী দিচ্ছে অন্য দুই ফরম্যাটের মত সাকিব টেস্টেও সফল। বরং টেস্ট পরিসংখান আরও বেশী সমৃদ্ধ। দলের অন্যতম প্রাণ ও চালিকাশক্তি সাকিব যে টেস্ট ব্যাটিং ও বোলিংয়ে প্রধান নির্ভরতা।

ওয়ানডে মানে ৫০ ওভারের ম্যাচ ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বোলিং দূর্বলতা ও ঘাটতি পুষিয়ে ব্যাটিং দিয়ে ম্যাচ জেতা যায়। কিন্তু টেস্টে বোলিং দূর্বলতা থাকলে বা কমজোরি বোলিং দিয়ে কোনভাবেই ম্যাচ জেতা যায় না। কারণ প্রতিপক্ষকে দুই বার অলআউট হলো টেস্ট জয়ের পূর্ব ও প্রধান শর্ত।

বোলিং কার্যকরিতা ছাড়া প্রতিপক্ষের ২০ উইকেটের পতন ঘটানো সম্ভব না। আর সেই জায়গায় সাকিবই বাংলাদেশের প্রধান বোলিং অস্ত্র। সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিই বাংলাদেশের বোলিংয়ের সবচেয়ে কার্যকর ও ধারালো অস্ত্র। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যত টেস্ট জিতেছে, তার বেশীর ভাগ জয়ের রূপকার সাকিব।

Advertisement

ব্যাটিং দৃঢ়তার পাশাপাশি বোলার সাকিব বার বার বাংলাদেশকে দেখিয়েছেন আলোর সন্ধান। তার বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ ঘায়েল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাইতো পরিসংখ্যান জানাচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সর্বাধিক পাঁচবারের সিরিজ সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসান।

সমালোচকরা যত নেতিবাচক কথাই বলুক না কেন, আসলে টেস্টে বাংলাদেশের চালিকাশক্তিই সাকিব। তিনি নিজেও টেস্ট উপভোগ করেন। ঘন্টায় ঘন্টায়, সেশনে সেশনে রং, গতি-প্রকৃতি বদলানো টেস্টে ভাল করার গুণাবলি তার মাঝে বিরাজমান।

তাইতো মিডল অর্ডারে নেমেও ৫ শতক সহ ৩৮০৭ রান আর দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২০৫ উইকেট শিকারী সাকিবই টেস্টে বাংলাদেশের সব সময়ের সেরা অলরাাউন্ডার। সাকিব জানেন, কখন কোন সময়ে কি করতে হবে? মন থেকে টেস্ট উপভোগ না করলে এটা সম্ভব হতো না কখনোই।

তাই সাকিব দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাট পছন্দ করেন না বা তেমন উপভোগ করেন না মার্কা কথার কোনই যুক্তি নেই। আসলে সাকিব টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করেন। টেস্ট ক্রিকেটের চিরায়ত সৌন্দর্য্যটাও তার খুব পছন্দের। সবচেয়ে ভাল কথা যে কারো টেস্ট ক্রিকেটটা ভাল বোঝেনও।

Advertisement

তাইতো টি টোয়েন্টি আর ওয়ানডের চেয়েও তার টেস্ট পরিসংখ্যান আরও সমৃদ্ধ। রেকর্ড অনেক ভাল। টেস্টে ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। সেশন থেকে অন্য সেশনে চালচিত্র পাল্টে যায়। তাই এপ্রোচ-এপ্লিকেশনও হয় ভিন্ন। সে কারণেই টেস্ট শুরুর আগে নানা রকম চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন এপ্রোচ ও এপ্লিকেশন এবং মানসিক ও ক্রিকেটীয় প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হয়।

কখন কোন অবস্থায়, কোন সেশনে কি করতে হবে? কখন কোন এপ্রোচ হবে? সেগুলো আগে থেকে ঠিক করে না রাখলে শুধু উপস্থিত বুদ্ধি আর ক্রিকেট প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব না। আগে থেকে নিজেকে সম্ভাব্য সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরী রাখতে হয়। তাই টেস্টে শারীরিক, মানসিক ও ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি নিতে হয় বেশী।

সাকিব তা খুব ভাল জানেন। শুরুর আগের কষ্ট, শ্রম বেশী ক্ষয় হয়। চিন্তা-ভাবনা বেশী করতে হয়। সর্বোপরি কাজটাও বেশী। তাই টেস্ট ক্রিকেটে জয়ের পরিতৃপ্তি ও আনন্দ বেশী। সাকিব তাই টেস্ট জয়ে সবচেয়ে বেশী খুশি হন। তার টেস্ট জয়ের অনুভূতিটা দারুণ রোমাঞ্চের।

তাইতো মুখে অমন কথা, ‘টেস্টটা শুরু হওয়ার আগে সবচেয়ে কষ্ট লাগে। টেস্ট জিতে গেলে সবচেয়ে আরাম লাগে। কালকেই ড্রেসিং রুমে বলছিলাম, টেস্ট জেতার যে মজা, যে সন্তুষ্টি সেটা অন্য কোনো ফরম্যাটে নেই। ওয়ানডেতে বড় বড় ম্যাচ তো জিতেছি কিন্তু ওই মজাটা তো টেস্টের মতো লাগে না।’

‘তবে টেস্ট শুরুর আগে অনেক কষ্ট লাগে, টেনশন হয়। পাঁচ দিন খেলা, বয়স হয়ে যাচ্ছে (হাসি) । সব কিছু মিলিয়ে খেলার আগে কষ্ট লাগে। যখন খেলার ভেতরে ঢুকে পড়ি, ব্যাটিং রান করি, বোলিংয়ে উইকেট পাই তখন অনেক বেশি মজা লাগে। সেটা ওয়ানডে বলি, টি-টোয়েন্টি বলি তার চেয়ে অনেক বেশি লাগে।’

এআরবি/এসএএস/জেআইএম