ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে দুষ্ট ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক এক সঙ্গে কাজ করবে বলে সূত্রে জানা গেছে।সূত্র মতে, বিষয়টি এখনও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে খুব শিগগিরই এর কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এজন্য চার সংস্থার একটি সম্বনিত কর্ম কৌশল নিয়ে চিন্তুা ভাবনা চলছে।সূত্র আরো বলছে, এফবিসিসিআই এর নতুন নেতৃত্ব চাচ্ছে দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে। এ জন্য সংস্থাটি এক অংকে ঋণ নিশ্চিত করতে চায়। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, দেশে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা এক অংকে ঋণ দিতে পারবে না।সূত্র বলছে, এফবিসিসিআই এবং এবিবি বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আর বিষয়টি যেহেতু বড়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএবিকে সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। জানতে চাইলে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চাই ব্যবসায়ীরা এক অংকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করুন। বিনিয়োগ করুন। সেটি করতে হবে। এজন্য এফবিসিসিআই এর পক্ষে ব্যাংকের জন্য যেভাবে সহযোগিতা করা দরকার সেটি করতে প্রস্তুত।তিনি আরো বলেন, খেলাপি ঋণ কিভাবে কমানো যায়, সেটি নিয়ে খুব শিগগিরই আমরা বৈঠকে বসতে যাচ্ছি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান সম্প্রতি জাগো নিউজকে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর উদ্যোগের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এই ঋণ আরো কমাতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে রাখার যে উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছিল, তাতে খুব একটা সফলতা আসছে না। নীতিমালা শিথিল করে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনলেও চলতি বছরের সর্বশেষ হিসেবে তা দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশে। এর বড় অংশই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। জানা গেছে, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, এবিবি এবং বিএবি এক সঙ্গে দেশের ঋণ খেলাপিদের নিয়ে প্রয়োজনে আলাদা আলাদা ভাবে বসবে। ২০১৩ সালের শেষ প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঋণ নীতিমালায় বিশেষ ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ ছাড়ে ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আবারো অস্থিরতা শুরু হওয়ায় বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর ড. আতিউর রহমান জানিয়ে দেন, ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ যে কোনোভাবে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এর পরই ব্যাংকগুলো তড়িঘড়ি করে ঋণ নবায়ন করে। এতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের শ্রেণিকৃত ঋণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা; যা বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে নবায়ন করা ঋণ আবার খেলাপি হয়ে যাওয়ায় মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি, যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোয় (সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও বেসিক) খেলাপি ঋণের হার ছিল ২২ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে এ বছরের মার্চ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৪৯ শতাংশে।অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ডিসেম্বর শেষে ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ থাকলেও মার্চে তা বেড়ে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি থেকে বেড়ে মার্চে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকায়। এদিকে ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু মার্চে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা; যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ৩২ দশমিক ৮১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। কিন্তু মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।এসএ/এসকেডি/আরএস/আরআইপি
Advertisement