অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান ও পরীমনি জুটির প্রথম ছবি ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ ছবিটি। কিন্তু সে অনুযায়ী সাফল্য পায়নি এস এ হক অলিক পরিচালিত এই ছবিটি। সরেজমিন ঘুরে ও দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে খবর নিয়ে জানা গেছে, ছবিটি মুক্তির প্রথম দিন ভালো ব্যবসা করেছে। কিন্তু পরদিন থেকেই হলবিমুখ দর্শক। ছবির ব্যর্থতা, আলোচনা ও সমালোচনায় বিদ্ধ অলিককে মঙ্গলবার এফডিসিতে দেখা গেল ভার মুখে। ছবিটি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। নিজে থেকে পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মুখ না খুললেও ছবিটির ব্যর্থতায় নানা কারণ খুঁজে বার করছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। কেউ বলছেন হৃদয়ের কথা ও আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসার মতো জনপ্রিয় দুটি ছবি উপহার দেয়া পরিচালক তার তৃতীয় ছবিতে নিজস্বতা ধরে রাখতে পারেননি। বিশেষ করে আগের দুটি ছবির গল্পের মতো জমজমাট নয় আরো ভালোবাসবো তোমায়। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নির্মাণে মুন্সিয়ানা দেখালেও ছবির গানগুলো প্রভাব ফেলেছে ছবিটির ভরাডুবিতে। অলিকের আগের দুটি ছবিতে গানগুলো ছিলো সুপারহিট। সর্বত্রই ঘুরে ফিরে বাজত হৃদয়ের কথার ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু’ ও ‘যায় দিন যায় একাকী’ আর আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা ছবির ‘হাওয়ায় হাওয়ায়’ গানগুলো। কিন্তু এই ছবিটাতে তেমন কোনো গান তৈরি হয়নি যা দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া জাগাতে পেরেছে। ছবির নায়ক-নায়িকা হিসেবে শাকিব ও পরী তাদের অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেছেন। কিন্তু ছবির প্রচারে হঠাৎ করেই ‘এটি শাকিবের জীবনের গল্প’ দাবি করে ছবিটিকে নিজের অজান্তেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঠেলে দিয়েছে ব্যর্থতার দিকে। বেশিরভাগ দর্শকই এই তথ্য বিশ্বাস করেনি। যারা ছবিটি একবার দেখেছেন তারা বাজারে প্রচলিত শাকিবের জীবনী ও চলচ্চিত্রটিতে শাকিবের জীবনের গল্পের আকাশ পাতাল ব্যবধান পেয়েছেন। স্বভাবতই তারা বিরক্ত হয়েছেন। যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ ছবির সাফল্যে। পাশাপাশি সমালোচনায় উঠে এসেছে আরো একটি বিষয়। সেটি হলো অলিকের আগের দুটি ছবিতে নায়ক-নায়িকা হিসেবে কাজ করেছিলেন রিয়াজ ও পূর্ণিমা। তাদের পরিবর্তে এবার তিনি বেছে নিয়েছেন শাকিব ও পরীকে। এখানে বিবেচ্য বিষয়টি হলো, অলিকের ছবির দর্শক আর শাকিবের ছবির দর্শক আলাদা। শাকিব অনেক জনপ্রিয় হলেও তিনি এখনও নিম্নবিত্ত ও কম শিক্ষিত দর্শকদের কাছেই অধিক গ্রহণীয়। কিন্তু অলিকের ছবির দর্শক হলো মধ্যবিত্ত-শিক্ষিত শ্রেণির। সেই হিসেবে অলিকের ছবির জন্য রিয়াজ-পূর্ণিমাই ছিলেন উপযুক্ত। রিয়াজ ও পূর্ণিমাকে বয়স ও জনপ্রিয়তার ভাটার দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে শাকিবের জনপ্রিয়তার লোভে যে স্বপ্ন অলিক দেখেছিলেন শেষপর্যন্ত সেটি অলীক হয়েই দেখা দিল। অলিক চাইলে পরীমনির সাথে একজন নতুন নায়ক নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করে ঝুঁকি নিতে পারতেন। তাছাড়া, ছবিতে অতিথি চরিত্রের সাহায্য নিয়ে হলেও নির্মাতা রিয়াজ ও পূর্ণিমাকে সংযুক্ত রেখে নিজের কম্বিনেশনটা ধরে রাখতে পারতেন।তবে সবকিছু ছাপিয়ে অলিকের ছবির ব্যর্থতার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ছবিটির ‘ট্রাজেডিক এন্ডিং’। অর্থাৎ ছবির শেষের দিকে শাকিব ও পরীর মৃত্যু গ্রহণ করেনি দর্শক। নিজেরা বিরক্ত হয়ে অন্যদের ছবিটি না দেখতে উৎসাহ দিয়েছেন। আর সে কারণেই প্রথম দিনে হাউজফুল হলেও দ্বিতীয় দিন থেকে দর্শক হারাতে শুরু করেছে ছবিটি। পরিসংখ্যান বলে, নায়ক হিসেবে ছবিতে মারা যাওয়ার পর সেই ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে এমন ইতিহাস একমাত্র অমর নায়ক সালমান শাহ’র দখলে। এর আগে নায়ক আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরো অনেক নায়ককেই ছবির শেষে মারা যেতে দেখা গেছে। কিন্তু দারুণ জনপ্রিয় নায়ক হওয়া সত্বেও তাদের ছবি সাফল্য পায়নি। এমনকি সালমানের পরবর্তী সময়ে তুমুল জনপ্রিয় নায়ক মান্নাও চেষ্টা করেছিলেন ‘বিষাদ সমাপ্তি’তে সাফল্য পেতে। কিন্তু পাননি। ঢাকাই চলচ্চিত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সম্পর্কে অলিক ওয়াকিবহাল ছিলেন কি না সে সন্দেহ চলচ্চিত্র পাড়ায়। সবাই বলছেন, অলিক কি সব জেনে শুনে বুঝেই নিজের পায়ে কুড়োলটি মারলেন? যদি তাই হয় তবে আরো ভালোবাসবো তোমায় ছবির ভরাডুবির দায়ভার নিতে হবে ক্যাপ্টেন এস এ হক অলিককেই।এলএ/আরআইপি
Advertisement