তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কে শনিবার (১ ডিসেম্বর) বসেছে একটি নামফলক। নামফলক অনুযায়ী সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ‘মেয়র আনিসুল হক সড়ক’। প্রয়াত এই মেয়রের স্মরণে নামফলকের শুরুতেই লেখা আছে-‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে.. হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে...।’
Advertisement
শনিবার বিকেলে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মেয়র আনিসুল হক সড়ক এর নামফলক উন্মোচন করা হয়।
রাজনীতিতে কোনো দলে নাম না লেখানো আনিসুল হক ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে আলোচিত ও প্রশংসিত হন তিনি।
তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। পরে তারই চেষ্টায় এই সড়ক দখলমুক্ত করা হয়। রাতারাতি তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান। সেই সড়কেরই নামফলক মেয়র আনিসুল হকের নামেই হলো।
Advertisement
নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাইসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা এবং তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডন যান আনিসুল হক। সেখানে তিনি সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ) রোগে আক্রান্ত হন। ১৩ আগস্ট তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৩০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনিসুল হক।
জানা গেছে, শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের যানবাহনে রাস্তা দখল ছিল। ফলে দীর্ঘসময় যানজটে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, ঘোষণা দিয়েই মেয়র আনিসুল হক শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত রাস্তাকে গতিময় করে তোলেন।
Advertisement
বিভিন্ন এলাকার পার্কগুলো দখলদারদের কাছে চলে গিয়েছিল। আনিসুল হক একের পর এক সেসব পার্ক দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। শহরের পথচারীদের জন্য আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করেন। এজন্য মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি হয় আনিসুল হককে ঘিরে।
গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় বিশেষ রঙের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগ নেন প্রয়াত এই মেয়র।
এ ছাড়া ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন আনিসুল হক। তার নির্দেশে বনানীর ২৭ নম্বরে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি ‘বাগ এ মোনয়েম’র অবৈধ দখলে থাকা অংশ উদ্ধার করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে।
আনিসুল হকের জন্ম নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জে ১৯৫২ সালে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ’৮০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ নামে দুটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতেন আনিসুল হক। তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী।
১৯৮৬ সালে তার নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন। মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুল হকের তৈরি পোশাক ছাড়া বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজিযাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও তার ব্যবসায়ী গ্রুপের।
২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল এই সময়ে বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিআইপিপিএ’রও সভাপতি ছিলেন।
এএস/এসআর/এমএস