বিশেষ প্রতিবেদন

আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের নজর বিদ্রোহীদের দিকে

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে। দলের হাইকমান্ডের কঠোর হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

Advertisement

দলীয় সূত্র জানায়, যারা দলের টিকিট পেয়েছেন তারাও বিদ্রোহীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। দল থেকেও বলা হয়েছে বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে কাজ করার। তবে দলের হাইকমান্ড হিসেব কষছেন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। কোন পদ্ধতিতে তাদের বসিয়ে একক প্রার্থী রাখা যায়।

এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়ে নিজেদের বিদ্রোহী হিসেবে প্রকাশ করতে নারাজ। তারা বলছেন, ‘ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার তাদের আছে। দলের নীতিনির্ধারকদের প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনারও দাবি জানিয়েছেন তারা। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। সুতরাং এর আগেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি বিদ্রোহীদের।

অপরদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রায় দুই শতাধিক নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ জানিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা তাদের সকলকে বুঝিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করতে বলেন। সেখান থেকে ফিরে কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, আবার কেউ কেউ বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।

Advertisement

ইতিপূর্বে শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের প্রতি হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক থেকে জানানো হয়, কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আগে কথা বলেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলের সিদ্ধান্তের কথা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। তবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করলে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না, কে বিদ্রোহী প্রার্থী।’

Advertisement

বিভিন্ন আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের খবর নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর-২ ডা. মানবেন্দ্র রায়, নীলফামারী-১ আমিনুল হোসেন সরকার, নীলফামারী-৩ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, আনসার আলী মিন্টু ও আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর, নীলফামারী-৪ আখতার হোসেন বাদল, ইঞ্জিনিয়ার সেকেন্দার আলী, আমেনা কহিনূর ও মো. আমিনুল ইসলাম সরকার, কুড়িগ্রাম-১ আসনে ওসমান গণি।

নওগাঁ-২ ড. ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম, নওগাঁ-৪ অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী ও আফজাল হোসেন, নওগাঁ-৬ আনোয়ার হোসেন হেলাল, নড়াইল-১ লে. কমান্ডার ওমর আলী, বগুড়া-২ মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা ও আবুল কাশেম ফকির, বগুড়া-৪ কামাল উদ্দিন কবিরাজ ও অধ্যাপক আহছানুল হক, বগুড়া-৫ তাহরিনা জামান হিমিকা, বগুড়া-৭ ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, রাজশাহী-৫ ওবায়দুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও খুরশিদ আলম বাচ্চু ।

মেহেরপুর-১ অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, জয়নাল আবেদীন, প্রফেসর আব্দুল মান্নান, অ্যাডভোকেট ইয়ামরুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান, মেহেরপুর-২ এমএ খালেক, আহমেদ আলী, মোখলেসুর রহমান মুকুল, নুরজাহান বেগম ও ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, যশোর-২ অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হক, যশোর-৫ কামরুল হাসান বারী, সাতক্ষীরা-১ ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান, সরদার মুজিবর রহমান, বিএম নজরুল ইসলাম, শেখ নুরুল ইসলাম ও বিশ্বজিত সাধু।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আব্দুল্লা আল কায়সার, নারায়ণগঞ্জ-৪ কাউসার আহমেদ পলাশ, নরসিংদী-৩ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, নরসিংদী-২ আলতামাস কবির মিশু, মুন্সীগঞ্জ-৩ চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন ও ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম।

ফেনী-১ খায়রুল বাশার তপন ও শেখ আব্দুল্লাহ, ফেনী-৩ আবুল বাশার, ইসতিয়াক আহমেদ ও হাজী রহিম উল্যাহ, কুমিল্লা-২ অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ, মাঈন উদ্দিন মঈন, হাজী মো. সফিউল্লাহ মিয়া, মো. আনিছুর রহমান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর হোসেন কাউছার, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, মো. মোখলেছুর রহমান ও মো. শাহজাহান আলম সাজু, চট্টগ্রাম-২ এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-৪ আসনে আবদুল্লা আল বাকের ভূঁইয়া।

বরিশাল-২ একে ফায়জুল হক রাজু, ইঞ্জিনিয়ার ওসমান ফারুক মনির, এম মোয়াজ্জেম হোসেন ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার, বরিশাল-৬ ইঞ্জিনিয়ার ওসমান হোসেন মনির ও মোহাম্মদ আলী তালুকদার।

সুনামগঞ্জ-৪ মতিউর রহমান ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।

ময়মনসিংহ-৩ ডক্টর অধ্যক্ষ একেএম আব্দুর রফিক, ডা. মতিউর রহমান, আলী আহাম্মদ খান পাঠান, সেলভী নাজনীন, আলম শরীফ হাসান অনু, সামিউল আলম লিটন ও মুর্শেদুজ্জামান সেলিম, ময়মনসিংহ-৮ সৌমেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, মাহমুদ হাসান সুমন, ময়মনসিংহ-৯ মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, ময়মনসিংহ-১০ ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল, ময়মনসিংহ-১১ অ্যাডভোকেট আশরাফুল হক, নেত্রকোনা-১ মোসতাক আহমেদ রুহী ও মো. এরশাদুর রহমান, নেত্রকোনা-৪ শফী আহমেদ।

এফএইচএস/এএইচ/পিআর