খেলাধুলা

চট্টগ্রামের মত টার্ন নেই, ক্যারিবীয়দের চাপে ফেলতে চাই বড় স্কোর

একাদশে চার চারজন জেনুইন স্পিনার। একজন পেসারও নেই। আটজন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান। কারো কথা বা বক্তব্য জানার, শোনার দরকার নেই। বাংলাদেশের এই একাদশই বলে দিচ্ছে স্বাগতিকরা আসলে কি চায়, ঢাকা টেস্টে টাইগারদের লক্ষ্য কি?

Advertisement

ড্র নয়, জিততে চায় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পর শেরে বাংলায় জিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশই লক্ষ্য সাকিব বাহিনীর। দিবা-রাত্রির একদিনের ম্যাচ নয়। পাঁচদিনের টেস্ট। যার শুরু সকাল সাড়ে নয়টায়। আর এখন অঘ্রানের মাঝামাঝি, শিশির ভেজা সকাল। এ সময় টেস্টে একজন পেসারও নেই, মানে নতুন বলে বল করার কেউ নেই!

খাপছাড়া লাগে বৈকি। দেখতে ও শুনতেই কেমন যেন বিদঘুটে মনে হয়। শুধু বৈসাদৃশই ঠেকেনি, একটা অন্যরকম রেকর্ডও এটা। সেই উনবিংশ শতাব্দি থেকে বিংশ শতাব্দির প্রথম ভাগের (১৮০০ থেকে ১৯৩০-১৯৪০) কথা লিখাযোখা নেই। তখন অনেক কিছুই হয়েছে, যার আসলে দালিলিক প্রমাণ নেই।

তবে যখন থেকে ক্রিকেট কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ, সেই সময়ের হিসেব ধরলে জেনুইন পেসার ছাড়া টেস্টে চার চারজন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামার রেকর্ডটি ভারতের। ১৯৬৭ সালে বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে চার বিশ্ব খ্যাত স্পিনার বিষেণ সিং বেদী, বালা সুব্রমানিয়াম চন্দশেখর, এরা পল্লি প্রসন্ন আর আর ভেঙ্কটরাঘবনের সাজানো বোলিং নিয়ে স্বাগতিক ইংলিশদের বিপক্ষে টেস্টে নেমেছিল ভারত।

Advertisement

তবে বাংলাদেশ দলে যেমন সৌম্য সরকার আছেন, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় নিয়মিতই পেস বোলিংয়ে হাত ঘোরান, ভারতের ঐ দলেও তেমন একজন ছিলেন। নাম ভেঙ্কটারামন সুব্রামানিয়া। কর্নাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালোরের ঐ ক্রিকেটার মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং ডান হাতে পেস বোলিংটাও করতেন।

তবে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, টেস্টে সৌম্য সরকারের চেয়ে তিনি অনেক বেশি বা নিয়মিত বল করেছেন। নয় টেস্ট খেলা ভেঙ্কটারাম সুব্রামানিয়া আট টেস্টেই বল করেছেন। ১৯৬৭ সালে এজবাষ্টনে ভারতের হয়ে সাত নম্বরে ব্যাটিং নামা সুব্রামানিয়া বোলিংয়ের সূচনাও করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ১০ ওভার বোলিং করে দুই মেডেনসহ ২৮ রান দিয়ে উইকেট পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসেও সুব্রামানিয়া বোলিংয়ের সূচনা করেন, ৪ ওভারে ২১ রানে পান এক উইকেট। সেখানে সৌম্য টেস্ট খেলেছেন ১১টি। বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন হাতে গোনা ক‘বার। উইকেট মোটে একটি।

মানা গেল, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাকিব-তাইজুল, মিরাজ ও নাইমের স্পিন ঘূর্নিতে বেসামাল ক্যারিবীয়রা। চার স্পিনার খেলানোর স্বার্থকতা মিলেছে। একমাত্র পেসার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম ইনিংসে ২১ ওভার বল করে উইকেটশুন্য। পরের ইনিংসে ১০ ওভারে উইকেট জমা পড়েছে একটি মাত্র। তার মানে ৩১ ওভার বল করে এক উইকেট। তাই হয়তো শেরে বাংলায় পেসার ছাড়া শুধু চার স্পিনার নিয়ে নেমে পড়া।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এবার কি সে লক্ষ্য পূরন হবে? শেরে বাংলার পিচ কিন্তু বরাবরই ‘আনপ্রিডিক্টেবল।’ কারো কারো ভাষায় দূর্বোধ্য। আজ প্রথম দিনে পুরো ৯০ ওভার শেষে একবারের জন্য মনে হয়নি শেরে বাংলার পিচ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মত ‘স্পিনবান্ধব’।

Advertisement

চট্টগ্রামে প্রথম দিনই বল লাটিমের মত ঘুরেছে। আর ঢাকায় তা হয়নি। বল মাঝে মধ্যে টার্ন করেছে। তবে অনেক আস্তে। ব্যাটসম্যান পিছনের পায়ে গিয়ে খেলার পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে ‘শার্প টার্ন’ বলে, তা হয়নি। এখন সামনের দিনগুলোয় বল ঘুরলে ভিন্ন কথা। তবে আজ প্রথম দিন দেখে উইকেটকে স্পিনিং ট্র্যাক মনে হয়নি। এটা আসলে ‘টিপিক্যাল’ শেরে বাংলা উইকেট। হঠাৎ কিছু বল ঘুরেছে। মূলতঃ স্লো অ্যান্ড লো।

এই উইকেটে ব্যাটসম্যান ভুল না করলে আউট করা কঠিন। এখন সামনের দিনগুলোয়ও যদি পিচ এমন থাকে, তাহলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করবে ম্যাচের ভাগ্য। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ২৫৯।

প্রথম ইনিংসে ৪০০ বা তার বেশি করতে পারলে পিচে বল ঘুরুক আর নাই ঘুরুক, ক্যারিবীয়দের চাপে ফেলা যাবে। কিন্তু স্কোর সাড়ে তিনশো‘র কম হলে পিচের সাহায্য লাগবে।

চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম দিন বল ব্যাটে এসেছে, তাই মুমিনুল দারুণ ফ্রি খেলতে পেরেছেন। ঢাকায় তা হয়নি। বল থেমে এসেছে। একটু নিচেও থেকেছে। তাই স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল ব্যাটিং একটু হলেও কঠিন ছিল। তবে এর মধ্যে সাদমান অনেকটা সময় (পৌনে চার ঘন্টা) উইকেটে কাটিয়ে গেছেন। আর শেষ সেশনে অবিচ্ছন্ন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। এই দুই অভিজ্ঞ ও পরিণত ক্রিকেটার নিজেদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খেলে এখনো উইকেটে।

ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রান যোগ করা সাকিব নট আউট ১১৩ বলে ৫৫ রানে। আর অধিনায়ককে সঙ্গ দেয়া মাহমুদউল্লাহ ক্রিজে ৩১ রানে (৫৯ বলে)। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর একজন লম্বা ইনিংস খেলে ফেললেই ক্যারিবীয়দের রানের চাপে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

আগের দিন টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব বলেছিলেন, ফিঙ্গার স্পিনাররা অনুকূল পরিবেশ বা স্পিন সহায় পিচ ছাড়া বল ঘোরাতে পারেন কম। তাদের আসলে উইকেটের সহায়তা লাগে। কিন্তু রিষ্ট স্পিনারদের তা লাগে না। ক্যারিবীয় লেগি দেবেন্দ্র বিশুর সাফল্য সে সত্যই জানান দিল। বাংলাদেশের যে ৫ উইকেটের পতন ঘটেছে, তার ২টি পেয়েছেন দুই ফাস্টবোলার কেমার রোচ আর শেরমন লুইস। একটি অফস্পিনার রস্টন চেজের।

লেগস্পিনার দেবেন্দ্র বিশুর ঝুুলিতে জমা পড়েছে বাকি দুই উইকেট। সারা দিনের সেরা ব্যাটিং পারফরমার সাদমান আর মোহাম্মদ মিঠুনকে ফিরিয়ে দিয়েছেন এই লেগস্পিন গুগলি বোলার। তার গুগলি ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে বোল্ড হয়েছেন মিঠুন (২৯)। আর উইকেটে ওয়েলসেট সাদমান ৭০ ‘র ঘরে ফিরে গেছেন বিশুর কম টার্নের ডেলিভারিকে লেগব্রেক ভেবে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে। বল প্যাডে না আসায় লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়ান অভিষেকে ৭৬ রানের দারুন পরিপাটি ইনিংস উপহার দেয়া বাঁহাতি সাদমান।

বাংলাদেশের তেমন বোলার নেই। লেগস্পিনার ছাড়াই দীর্ঘদিন খেলে আসছে টাইগাররা। এই পিচে বল না ঘুরলে ক্যারিবীয়দের আউট করা তাই কঠিনই হবে সাকিব-তাইজুল-মিরাজদের জন্য। সেক্ষেত্রে নিরাপদে থাকতে চাই প্রথম ইনিংসের একটি নিরাপদ সংগ্রহ। উইকেটে থাকা সাকিব-মাহমুদউল্লাহ আর পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের কাছে সেটাই চাওয়া থাকবে দলের।

এআরবি/এমএমআর/পিআর