খেলাধুলা

বাবার কথা মেনেই এত দূরে সাদমান

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন ২০১৪ সালে। তার সাথে সেবার বিশ্বকাপে খেলা সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজ, লিটন দাস কিংবা মোস্তাফিজুর রহমানরা রীতিমতো জাতীয় তারকা। কিন্তু তার শুরুই হলো চার বছর পরে। যদিও শুরুর দিনেই মুগ্ধ করেছেন দেশের ক্রিকেট বোদ্ধাদের, তবু সমসাময়িক প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে বড় হওয়ার চ্যালেঞ্জটা খুব একটা সহজ ছিলো না ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি সাদমান ইসলাম অনিকের জন্য। 

Advertisement

সাদমানের এ চ্যালেঞ্জের পথে পুরোটা সময় পাশে ছিলেন তার বাবা শহীদুল ইসলাম। যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভলপমেন্ট কমিটির সাথে যুক্ত রয়েছেন অনেক দিন ধরেই। স্বজনপ্রীতি করে নিজের পরিচয় কাজে লাগিয়ে চাইলেই অনেক আগে নিজের ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়ে আসতে পারতেন শহীদুল। 

কিন্তু বাবার মনে রয়েছে ছেলেকে ঘিরে অনেক বড় স্বপ্ন। দেশের টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট বিলিয়ে আসার মিছিল দেখে হতাশায় ভোগা শহীদুল তাই এর প্রতিকার সৃষ্টি করেছেন নিজের ঘরেই। তাও এমনভাবে যে সাদমানের সাথেই ক্রিকেট খেলে বড় হওয়া অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জানতে পারেননি শহীদুলের সাথে সাদমানের সম্পর্ক। 

ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা শহীদুল শুরু থেকেই চেয়েছেন তার ছেলে মারকাটারি ক্রিকেটের পুজারী না হয়ে, উদাহরণ হোক অভিজাত টেস্ট ক্রিকেটের ধৈর্য্য ও সৌন্দর্য্যের। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজের ছেলেকে ছোট থেকেই গড়েছেন নিজের মনের মধ্যে আঁকা পিউর টেস্ট ব্যাটসম্যান। বাবার বাধ্য ছেলে সাদমানও কখনো চাননি গ্ল্যামারাস কিছু হতে। সবসময় নিজের ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে মেনেছেন টেস্ট ক্রিকেটকেই। 

Advertisement

যার প্রমাণ তিনি রেখেছেন নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই। গড়েছেন অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। ১৯৯ বলে ৭৬ রামের ইনিংসের অর্ধেক ৩৮ রান করেছেন সিঙ্গেলস দিয়ে, ছয় বাউন্ডারিতে এসেছে ২৪ আর সাত ডাবলস থেকে ১৪, ৫১ টি স্কোরিং শটস। বাকি ১৪৮ বলে কোনো রান করেননি। অফস্টাম্পের বাইরে ও আশপাশে কিছু বল ছেড়ে দিয়েছেন। আর ৬০ ভাগ ডেলিভারি ডিফেন্স করেছেন। 

পুরো ইনিংসে সলিড ব্যাটিং করেছেন সাদমান। এমন রয়ে সয়ে ও টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজে বাবার ভূমিকার কথা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন সাদমান। তিনি বলেন, ‘বাবার ভূমিকা অবশ্যই আছে। আব্বু সব সময় ক্রিকেটে সহযোগিতা করেছেন। আমি সব সময় ক্যাম্পে যেতাম। অনূর্ধ্ব ১৫-১৭ ক্যাম্পে সব সময় আমাকে নিয়ে যেতেন। তখন আমি ছোট ছিলাম। তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল খেলোয়াড় হবো। যেভাবে আব্বু খেলার জন্য বলেছেন, আমি একাডেমি কিংবা স্কুল ক্রিকেট থেকে ওভাবেই তৈরি হয়েছি। আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন খেলার জন্য। কিভাবে খেলতে হয়, কিভাবে ক্রিকেটারদের লাইফ সেট করতে হয়- এসব আমাকে এখনও বলেন। চেষ্টা করি নিজেকে ওভাবে রাখার।’ 

এসময় নিজের অভিষেক ম্যাচের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সাদমান বলেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে। সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। ডেব্যু টেস্ট। আমি চেষ্টা করেছি আমার দলের জন্য  সেরাটা দেওয়ার। হয়তো আমি পুরোপুরি চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। যতটুকু হয়েছে, আশা করি পরবর্তীতে টিমের জন্য যেন কিছু করতে পারি।’

এসএএস/পিআর

Advertisement