১৯০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শঙ্কা জেগেছিল, প্রথম দিনের শেষ সেশনেই না আবার লোয়ার অর্ডার বেরিয়ে পড়ে! তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে সেই শঙ্কা ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠেছে টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে দুই অভিজ্ঞ সেনানীর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে স্বাগতিক দল।
Advertisement
সাকিব আল হাসান তুলে নিয়েছেন তার ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফসেঞ্চুরি। ১১৩ বলের ধৈর্য্যশীল ইনিংসে মাত্র ১টি বাউন্ডারিতে ৫৫ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহরও ৫৯ বলের ইনিংসে চার মাত্র ১টি। তিনি অপরাজিত আছেন ৩১ রানে। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটি এখন পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানে। ওভার কাটিয়েছেন প্রায় ২৩টি।
ওপেনিংয়ে সমস্যা কাটাতে কম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের পর অবশেষে কি তাহলে একজন সলিড ওপেনারকে পেয়ে গেলো বাংলাদেশ? জবাবটা দিতে পারবে সময়। আগামী দিনে কি হয় সেটা না হয় সময়ের হাতেই তোলা থাকলো। তবে আপাত দৃষ্টিতে অভিষেকে যে ব্যাটিং করেছেন সাদমান ইসলাম, তাতে তাকে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী ভাবলেও হয়তো ভুল হবে না।
একে তো তামিম ইকবাল নেই। অন্য দিকে ওপেনিংয়ে ইমরুল কায়েসের ধারাবাহিকতাহীনতা, সঙ্গে তার ইনজুরি। ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলামের অভিষেক করানো ছাড়া উপায় নেই। সে সুযোগেই অভিষেক হয়ে গেলো ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান সংগ্রাহক সাদমান ইসলামের।
Advertisement
এবং ওপেনিংয়েই ঝলক দেখালেন তিনি। করলেন দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি। তবে, এই হাফ সেঞ্চুরিটাকে তিন অংকের ঘরে নিতে পারলেন না। ধরা খেয়ে গেলেন ক্যারিবীয় স্পিনার বেদেন্দ্র বিশুর হাতে। ৭৬ রান করে আউট হয়েছেন অভিষিক্ত ওপেনার সাদমান ইসলাম।
১৪৭ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান সাদমান। ৪টি বাউন্ডারির সাহায্যে এই মাইলফলক স্পর্শ করতে সক্ষম হন তিনি। শুরুতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়ার চেষ্টা ছিল সাদমানের। কিন্তু সৌম্য সেই জুটি গড়তে পারলে তো!
প্রথম ঘন্টা ভালোভাবে কাটাতে পারলেও ইনিংসের ১৬তম ওভারে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় সৌম্যর। রস্টোন চেজের হালকা ঝুলিয়ে দেয়া বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। উদ্বোধনী জুটি থামে ৪২ রানে।
তিনে নেমে মুমিনুল খেলছিলেন চলতি বছর নিজের ফর্মের ছাপ রেখেই। টার্নিং উইকেটের কথা ভাবা হলেও, ক্যারিবীয় বোলাররা তেমন কোনো ভয়ই তৈরি করতে পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মনে নিয়মিত সিঙ্গেলস-ডাবলসের পাশে একটি-দুইটি বাউন্ডারি মেরে দলের রানের চাকা সচল রাখেন সাদমান ও মুমিনুল।
Advertisement
দু’জনের জুটিতে ততক্ষণে যোগ হয়ে গেছে ৪৫ রান। লাঞ্চ ব্রেকের বাকি ছিলো এক ওভার। সে ওভারে বোলিংয়ে আসেন কেমার রোচ। ওভারের পঞ্চম বলে অফস্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে লেগসাইডে খেলতে গিয়ে অপ্রস্তুত এক পজিশনে পড়ে যান মুমিনুল। যে কারণে তার হাফ পুল ও হাফ ড্রাইভ শটটি জমা পড়ে মিডঅন ফিল্ডারের হাতে। আউট হওয়ার আগে তিনি দুই চারের মারে করেন ৪৬ বলে ২৯ রান।
তৃতীয় উইকেটে ভালোই একটু জুটি গড়ে উঠেছিল সাদমান ইসলাম আর মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে। যে জুটিতে উঠে গিয়েছিল ৬৪ রান। কিন্তু হঠাৎ করেই এই সময়ে দেবেন্দ্র বিশুর আবির্ভাব। পরপর তিনি তুলে নিলেন দুই উইকেট। ফিরিয়ে দিলেন মোহাম্মদ মিঠুন এবং সাদমান ইসলামকে। ২ উইকেটে ১৫১ রান থেকে ৪ উইকেটে বাংলাদেশ হয়ে গেলো ১৬১ রান।
দ্বিতীয় সেশনে এসে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন সাদমান। ৮৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পর মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ৬৪ রানের জুটি। এবার দেবেন্দ্র বিশুর ঘূর্ণি ফাঁদের শিকার হন মিঠুন। সরাসরি বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি দলীয় ১৫১ এবং ব্যক্তিগত ২৯ রানের মাথায়। ৬১ বল খেলে ২৯ রান করেন তিনি।
এরপর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সাদমানের জুটিটির বয়স হয় মাত্র ১০ রানের। ইনিংসের ৫৯তম ওভারের পঞ্চম বলে বিশুর ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাট প্যাড করতে পারেননি, বলটি লেগে যায় প্যাডে। আবেদন উঠতেই আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। ফলে ৭৬ রানেই শেষ হয়েছে সাদমানের অভিষেকের উজ্জ্বল ইনিংসটি।
দ্বিতীয় সেশনের শেষ মুহূর্তে কোনো উইকেট না হারানোটা ছিল একটা স্বস্তি। কিন্তু সেই স্বস্তিটা উধাও হয়ে গেছে তৃতীয় সেশনের শুরুতেই। কারণ, উইকেটে থাকা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহীম বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। মাত্র ২৯ রানের জুটি গড়েই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়েছে তাদের। শেরমন লুইসের বলে মাত্র ১৪ রানেই বোল্ড হন মুশফিকুর রহীম। তিনি যখন আউট হন তখন দলের রান ১৯০।
এমএমআর/পিআর