খেলাধুলা

অন্যরকম ‘হ্যাটট্রিকের’ সামনে দাঁড়িয়ে সাকিব

খালি চোখে ঢাকা টেস্ট টাইগারদের সামনে হোয়াইটওয়াশের হ্যাটট্রিকের মিশন। শেরে বাংলায় শেষ হাসি হাসতে পারলে টেস্টে তৃতীয় বারের মত কোন দলকে ধবল ধোলইয়ের কৃতিত্ব অর্জিত হবে। এর আগে ২০০৯ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুই ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাওয়াশ করেছিল টাইগাররা।

Advertisement

কিন্তু জানেন, ঢাকা টেস্টে এক অন্যরকম কৃতিত্বর হাতছানি সাকিব আল হাসানেরও সামনে? ‘হোয়াইটওয়াশের হ্যাটট্রিক’ মিশনে অন্যরকম ‘হ্যাটট্রিকের’ সামনে দাড়িয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব!

সেটা আবার কি? বাংলাদেশ এর আগে যে দুটি সিরিজে প্রতিপক্ষ মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জিম্বাবুয়েকে ‘ধবলধোলাই’ করেছে, তার দুটিতেই ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।

আসুন খুব সংক্ষেপে ওই দুই সিরিজে সাকিবের পারফরমেন্সটা একটু দেখে নেই। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজে কিংসটাউনে হওয়া প্রথম টেস্টে ( ৯-১৩ জুলাই ২০০৯) বাংলাদেশ জিতেছিল ৯৫ রানে। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। আর দ্বিতীয় টেস্ট জিতিয়ে ম্যাচ সেরা এবং সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন সাকিব।

Advertisement

প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলে সাকিবের রান ছিল (১৭+৩০) = ৪৭। আর উইকেট ছিল ৫ টি ১১৫ রানে। (৩৫-১০-৭৬-২, ২৮.১-১১-৩৯-৩)। আর সেন্ট জর্জে বল ও ব্যাট হাতে সব্যসাচি সাকিবের চৌকশ নৈপুণ্যে ৪ উইকেটের অবিস্মরনীয় জয় পায় বাংলাদেশ।

অলরাউন্ডার সাকিব বল ও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে ১২৯ রানে ৮ উইকেট (৩/৫৯, ৫/৭০) শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৬ ও ৯৭ বলে ৯৬ রানে নট আউট থেকে হন ম্যাচ সেরা । তার ৯৬ রানের সংগ্রামি ও প্রত্যয়ী ইনিংসে ২১৫ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে টাইগাররা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটাই ছিল দেশে আর বাইরে মিলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রথমবার ২-০ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়। আর সে কৃতিত্বটা নিশ্চিত হয় সাকিবের ম্যাচ জেতানো ব্যাটিংয়ে। সিরিজ সেরার পারফরমারও তাই সাকিবকেই দেয়া হয়।

এরপর ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে তিন টেস্ট জয়ের নায়ক ও ম্যাচ সেরা তিনজন, তাইজুল (শেরে বাংলায়), সাকিব (খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে) আর মুমিনুল (চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে)।

Advertisement

শেরে বাংলায় প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ৩ উইকেটে জয়ের নায়ক তাইজুল। দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিন ঘূর্ণিতে জিম্বাবুইয়ানদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়া তাইজুল ১৬.৫ ওভারে ৭ মেডেন সহ ৩৯ রানে ৮ উইকেটের পতন ঘটিয়ে শুধু দলের জয়ের নায়ক বা রূপকারই হননি, নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারটিও করে দেখান। তার ওই ৩৯ রানে ৮ উইকেট নেয়ার ঘটনা যে টেস্টে এক ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদেরও হয়েও সেরা স্পেল!

কিন্তু জানেন, সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিবও (২৪.৫-৫-৫৯-৬) স্পিন জাদুতে বশ করেন জিম্বাবুয়াইনদের। তার ঝুলিতেও জমা পড়ে ৬ উইকেট। এরপর খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টটি ছিল সাকিবময়। যা তার টেস্ট ইতিহাসে সেরা হিসেবেই পরিগনিত হয়ে আছে। ওই ম্যাচে ব্যাট হাতে অনবদ্য শতরানের পাশাপাশি বল হাতে ১০ উইকেট শিকারের দূর্লভ ও অনন্য কৃতিত্ব দেখিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেন সাকিব।

বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবালের (১০৯) সাথে সাকিবের ১৩৭ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে দেখায় ম্যাচ জয়ের পথ। এরপর সাকিব দুই ইনিংসে (৫/৮০ আর ৫/৪৪) সমান ৫ উইকেটের পতন ঘটিয়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। মূলতঃ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার সেরা অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সে বাংলাদেশ পায় ১৬২ রানের বড় জয়।

এরপর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ টেস্টেও ১৮৬ রানে বিশাল জয় সঙ্গী হয় টাইগারদের। ওই ম্যাচে বল হাতে তেমন কার্যকর অবদান রাখতে না পারলেও প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল (১০৯) আর ইমরুল কায়েস (১৩০)-এর জোড়া শতকের পর সাকিব ব্যাট হাতে ৭১ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকেও আসে দারুন শতরান (১৮৯ বলে ১৩১*)। ওই নান্দনিক শতরানের জন্য মুমিনুল হন ম্যাচ সেরা; কিন্তু তিন ম্যাচেই কার্যকর অবদান রেখে সাকিব আল হাসান হন সিরিজ সেরা।

এবার তাই সাকিবের সামনে তৃতীয়বার ধবলধোলাইয়ের মিশনে সিরিজ সেরা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। এবার খেলবো না খেলবো না করেও শেষ মুহূর্তে শারীরিকভাবে পুরোপুরি ফিট না হয়েও তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট খেলতে নামলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। হাতের আঙ্গুলের ইনজুরির কারণে প্রায় দুই মাস (এ বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচ খেলার পর, ২২ নভেম্বর চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে মাঠে নামা) খেলা হয়নি।

টেস্ট খেলার আগে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচদিনের অনুশীলন। শারীরিকভাবে শতভাগ ফিটনেস আসেনি। ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি মানে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনও কম করেছেন। মোটকথা, প্রথম টেস্টে ছিলেন অপ্রস্তুত সাকিব। এমন অবস্থায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ফিট ও প্রস্তুতি হয়েতো আর ম্যাচ জেতানো পারফরম করা যায়নি। তারপরও নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি বল ও ব্যাটে ( ৩৪+১ = ৩৫ রান আর, ৩/৪৩+১/৩০) দলের সাফল্যে অবদান রাখেন সাকিব।

শুক্রবার থেকে যে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু, তাতে নিজেকে আরও ফিট এবং প্রস্তুত মনে হচ্ছে সাকিবের। তাইতো টেস্ট শুরুর ২৪ ঘন্টা আগে আজ দুপুরে প্রেস কনফারেন্সে বসে মুখে এমন কথা, ‘আগের টেস্টের তুলনায় একটু বেটার হওয়া উচিত। ম্যাচ খেলার মাধ্যমে খুব একটা ফিট হওয়ার সুযোগ থাকে না। বডি বরং টায়ার্ড হতে থাকে। তবে তিন দিনে টেস্ট শেষ হওয়ার রিকভারির টাইম ছিল। আরেকটু ফিটনেসের কাজ করার টাইম ছিল। যেটা আমি ইউজ করার চেষ্টা করেছি। আমি খুবই সিউর যে, আগের টেস্টের চেয়ে ফিজিক্যালি বেটার অবস্থায় থাকবো আমি।’

শারীরিকভাবে ‘বেটার’ সাকিব মানেই বেটার পারফরমার সাকিবের দেখা মেলার সম্ভাবনা। আজ অনুশীলন ও দুপুরে সংবাদ সন্মেলনে কথোপকোথনে মিললো চপল ও স্বপ্রতিভ সাকিবের দেখা। দেখা যাক, কাল থেকে সামনের পাঁচদিন শেরে বাংলায় সেই দুরন্ত, দূর্বার পারফরমার সাকিবের দেখা মেলে কি না?

আর যদি সাকিব এ ম্যাচের হিরো হয়ে ম্যাচ সেরা বনে যান, তাহলে দেশের তিন-তিনটি হোয়াইটওয়াশ মিশনের স্বার্থক রূপকারও হয়ে থাকবেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর