আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির প্রার্থীরা নিজেদের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। ভোটের মাঠে নেমেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কর্মী-সমর্থকরা। তবে পিছু ছাড়ছে না উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
Advertisement
নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন এখনও সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাছাড়া হেভিওয়েট প্রার্থীদের প্রার্থিতা বতিলের শঙ্কাও রয়েছে।
বিষয়টি মাথায় রেখেই রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে দু’জন করে ১২ জন প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এদের একজন চূড়ান্ত প্রার্থী এবং অন্যজন বিকল্প। নির্বাচনে অংশ নিতে প্রত্যেকেই তাদের মনোনয়ন দাখিল করেছেন নির্বাচন দফতরে।
ভোটের মাঠে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন, রাজশাহী-১ আসনে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী-৪ (বাগামার) সাবেক সংসদ সদস্য আবু হেনা, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা ও রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে কেন্দ্রীয় সদস্য আবু সাইদ চাঁদ।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার পতন আন্দোলনে যায় বিএনপি। এ সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতার প্রেক্ষিতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করে। বিপুল সংখ্যক কর্মীও রয়েছেন মামলাগুলোর আসামির তালিকায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে গিয়ে মামলায় জড়িয়েছেন বিএনপি নেতারা। মামলাগুলোর কার্যক্রম রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে।
পুলিশের দেয়া নাশকতার দুটি মামলায় গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাজশাহী-৬ আসনের প্রার্থী আবু সাইদ চাঁদ। সব মিলিয়ে ২৫ মামলা ঝুলছে তার ওপরে। সর্বশেষ গত ২৬ নভেম্বর দুটি মামলায় তার করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়ে যায়। এরই মধ্যে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। কারাগারে থেকেই চাঁদ নির্বাচনে লড়বেন বলে জানিয়েছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা বাতিল হলে এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হবেন বাঘা উপজেলার সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক।
বাকি পাঁচ আসনের প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও এমন শঙ্কা মাথায় রেখেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে বিএনপি। অন্য বিকল্প প্রার্থীরা হলেন, রাজশাহী-১ আসনে আমিনুল হকের স্ত্রী আভা হক, রাজশাহী-২ আসনে বিএনপি নেতা সাহিদ হাসান, রাজশাহী-৩ আসনে জেলার সাধারণ সম্পাদক এএসএম মতিউর রহমান মন্টু, রাজশাহী-৪ আসনে জেলার সহসভাপতি আবদুল গফুর এবং রাজশাহী-৫ আসনে জেলার সহসভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। বিকল্প প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও ঝুলছে রাজনৈতিক মামলা।
এদিকে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়েছে এই অঞ্চলের পাড়া মহল্লায়। গত নির্বাচন বয়কটের পর ভোটের মাঠে নেমেছ বিএনপি জোট। ফলে নতুন মাত্রা পেয়েছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় শোডাউন করছেন বিএনপির প্রার্থীরা। বিকল্প প্রার্থীরাও বসে নেই। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবীড় যোগাযোগ রেখে এগিয়ে যাচ্ছে অনানুষ্ঠানিক প্রচার।
Advertisement
তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে গায়েবী মামলায় ততই বাড়ছে আতঙ্ক। পুলিশের হয়রানি ও গ্রেফতার থেমে নেই। আর এর প্রভাব পড়ছে বিএনপির ভোটে। কিন্তু এসবের পাত্তা দিচ্ছেন না বিএনপির প্রার্থীরা।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি সরকারবিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্বে রয়েছেন। মিনু বলেন, এই নির্বাচনে আমাদের জন্য দুটি রাস্তা। এর একটি হলো শহীদ হয়ে হলেও গণতন্ত্র রক্ষা এবং অন্যটি কারাগারে যাওয়া। হামলা-মামলা-নির্যাতন এগুলো আমাদের সহ্য হয়ে গেছে। এসবের আমরা পরোয়া করি না।
প্রত্যেক নির্বাচনী আসনে একাধিক প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে মিনু বলেন, গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণ সংঘবদ্ধ হয়েছে। এই সুদৃঢ় ঐক্যই আমাদের আগামী দিনের শক্তি। তাছাড়া বিএনপি একটি সংগঠিত দল। নেতাকর্মীরা দলের প্রতি প্রচণ্ড অনুগত। প্রার্থিতা নিয়ে দলের হাইকমান্ডের যেকোনো সীদ্ধান্ত মেনে নেবেন নেতাকর্মীরা।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আরআইপি