বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মন্তব্যে দেশবাসী স্তম্ভিত ও হতবাক। কারণ তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য। অথচ বেগম খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে দেয়া দুর্নীতির মামলায় দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন এবং রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু সেই বিষয়ে আদালত এখনও সিদ্ধান্ত দেননি। আদালত আপিল গ্রহণ করেছেন কিন্তু কোনো প্রকার শুনানি হয়নি, আদালত কোনো প্রকার রুল বা আদেশ দেন নি। তাহলে তিনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) কীভাবে বললেন, বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’
Advertisement
বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম সচিব।
রিজভী বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করতে চাই মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিচারিক আদালতে সাজা হলেও আপিল চলমান অবস্থায় তারা নির্বাচন করেছেন কীভাবে?
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনিতো আওয়ামী লীগের নেতা, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাহলে আপনি কীভাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা থাকেন?’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নজির হলো আপিল করেই নির্বাচন করা যাবে। কারণ আপিলকে ধরা হয় চলমান বিচারের অংশ। আপিল বিভাগের রায় আছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কে যোগ্য বা অযোগ্য সেটা ঠিক করবে ইসি। অ্যাটর্নি জেনারেল যা বলেছেন, তা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার শামিল। এমনকি তার বক্তব্য আপিল বিভাগের রায় দ্বারা সমর্থিত নয়। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী যেকোনো রিটার্নিং অফিসার বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বৈধ বলে ঘোষণা দিতে পারেন। আইনে তাতে কোনো বাধা নেই।’
রিজভী বলেন, ‘ইসির নেয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা রিটে পরীক্ষা না করতেও আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে। বৈধতা পরখ করতে চাইলে ভোটের পরে করতে হবে, ভোটের আগে নয়। তফসিলের পরে এগুলো নির্বাচনী বিরোধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি দেখবেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্টের বিচারকদের নিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল অনধিক ৬ মাসের মধ্যে রায় ঘোষণা করবেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অতীত নজির হলো একই দণ্ডিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সকালে একরকম, আবার বিকেলে অন্য রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পরও আপিল করে সংসদ সদস্যপদ ও মন্ত্রীত্ব বহাল থাকার নজির আছে। দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেন। আর সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। তারপরও তারা এমপি-মন্ত্রীর পদে বহাল থেকেছেন। সুতরাং এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুধু দুরভিসন্ধিমূলকই নয় তিনি একজন চক্রান্তকারী। তিনি আদালতকে ভয় দেখিয়ে সরকারের হীন উদ্দেশ্য সাধনকারী। বিচারাঙ্গনে তার ভূমিকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্ত্রাসের উর্বর ক্ষেত্র বানাবে ক্ষমতাসীন দল। তার আলামতগুলো এখন ফুটে উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে জনগণের মধ্যে ততো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ ও ইসি’র পক্ষ থেকে এসব বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হলেও তথ্যগুলো যে সঠিক এটির বাস্তব প্রমান পাওয়া গেছে।’
Advertisement
কেএইচ/এমএমজেড/পিআর