আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধ : ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক শাসন জারি

প্রথমবারের মতো মার্শাল ল’ অনুমোদন দিয়েছেন ইউক্রেনের আইনপ্রণেতারা। তবে এ আইন শুধু রাশিয়া-সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় প্রয়োজ্য হবে। রাশিয়া তাদের অধিকৃত ক্রিমিয়া উপকূলে ইউক্রেন নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ জব্দ ও ২৪ নাবিককে আটক করার পর ইউক্রেন এ পদক্ষেপ নিল। পার্লামেন্টের ২৭৬ জন সদস্য মার্শাল ল’র পক্ষে মত দেন। খবর সিএনএন

Advertisement

বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালে শুরু হওয়া সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের এই দুই সদস্য রাষ্ট্রের বিরোধের জের ধরে প্রথমবারের মতো মার্শাল ল’ অনুমোদন দিল ইউক্রেন।

আইনপ্রণেতারা এই আইন অনুমোদন দেয়ার ফলে ইউক্রেন সরকার নাগরিক সমাজের ওপর অধিকতর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারবে। আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে এই আইনের প্রয়োগ শুরু হবে, যা টানা ৩০ দিন পর্যন্ত চলবে।

বর্তমানে আযোভ, কৃষ্ণ সাগর এবং মালদোভার ট্রান্সনিস্ত্রিয়া অঞ্চলের একটি অংশে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।

Advertisement

এক টুইটবার্তায় দেশটির প্রেসিডেন্ট পেট্রো পরোশেঙ্কো জানিয়েছেন, শুধুমাত্র রাশিয়া সীমান্ত অথবা যেসব সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন রয়েছে, সেসব এলাকায় তাদের প্রতিহত করতেই মার্শাল ল’ প্রয়োগ করা হবে।

ইউক্রেনের নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ বলছে, রাশিয়ার সীমান্তরক্ষীরা কৃষ্ণসাগরে তাদের একটি টাগবোটে হামলা চালিয়েছে যা প্রকাশ্য আগ্রাসী তৎপরতা। দুটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি টাগবোট আযোভ সাগরের মারিওপোল বন্দরে যাওয়ার সময় তাদের ওপর হামলা করে রুশ সীমান্তরক্ষীরা। রাশিয়া ওই এলাকাতে দুটো যুদ্ধবিমান এবং দুটো হেলিকপ্টার ডেকে আনে।

ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার একটি জাহাজ ইউক্রেনের একটি টাগবোটকে (এক ধরনের জাহাজ) জোরপূর্বক সরিয়ে দিচ্ছে।

রাশিয়ার এফএসবি নিরাপত্তা বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সীমান্ত টহল বোটগুলো কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেন নৌবাহিনীর জাহাজগুলো জব্দ করেছে এবং সেগুলো থামাতে অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

Advertisement

রাশিয়ার দাবি, রোববার ইউক্রেনের তিনটি জাহাজ ক্রিমিয়ার সমুদ্রসীমায় ঢুকে পড়ে। এর মাধ্যমে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনের ১৯ ও ২২ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে ইউক্রেন। তাই তাদের জাহাজগুলো আটকে দিয়েছে রুশ নৌবাহিনী।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তারা ইউক্রেনের সামরিক অভিযান চালানো ওইসব জাহাজকে থামতে বললেও কথা শোনেনি তারা।

এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে আজ জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের জাহাজ জব্দ করার ঘটনাকে রাশিয়ার আরেকটি ‘অবিবেচক পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আটক নাবিকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

কয়েক মাস ধরেই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। ২০০৩ সালে চুক্তি অনুসারে মস্কো এবং কিয়েভ কের্চ স্ট্রেট এবং আযোভ সাগরের আঞ্চলিক পানি ভাগাভাগি করবে। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দর হতে আসা বা তার উদ্দেশে যাত্রা করা সমস্ত নৌযান পরিদর্শন শুরু করে। রাশিয়র এই আচরণে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কের্চ স্ট্রেট-এ চলাচলের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি ‘চরম’ সংযমের সাথে যেকোনো কাজ করার জন্য সবাইকে তাগিদ দিয়েছে।

ন্যাটো বলেছে, তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা, আঞ্চলিক জলসীমায় তার ন্যাভিগেশন অধিকারকে সমর্থন দেয়।

এসআর/জেআইএম