পাঁচদিন পর উদযাপন করতেন নিজের ২৬তম জন্মদিন। সে দিনটিকে রাঙিয়ে রাখার সেরা পন্থা হতে পারতো ক্রিকেট মাঠে নিজের ২৭তম ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি করা। সে পথেই হাটছিলেন ২৫ বছর ৩৬০ দিন বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ফিল হিউজ। কিন্তু বাঁধ সাধল ‘বেরসিক’ এক বাউন্সার।
Advertisement
বেরসিক বলা ঠিক হচ্ছে না, আক্ষরিক অর্থেই ‘প্রাণঘাতী’ এক বাউন্সার। সেদিন আরও ১৯টি বাউন্সার খেলেছেন হিউজ। ভুল করেননি একটিতেও, কিন্তু ২০তম বাউন্সারটি আর সামাল দিতে পারেননি ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার ছোটখাটো গড়নের হিউজ। সোজা গিয়ে আঘাত হানে তার ঘাড়ে, মাঠের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।
সাথে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তৎক্ষণাৎ সার্জারি করানো হয় তার। কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি তখন, ফেরেনি আর কখনোই। দুই দিন কোমায় থাকার পর আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর সকালে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে, বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনের সবাইকে স্থবির করে দিয়ে পরপারে পাড়ি জমা ‘দ্য কিড’ খ্যাত ফিল হিউজ।
ক্রিকেটকে জীবনের সবকিছু হিসেবে বেছে নেয়া হিউজের জীবনের সমাপ্তিও ঘটে ক্রিকেট মাঠেই। সেদিন শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে বিখ্যাত সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিউ সাউথ ওয়েলসের মুখোমুখি হয়েছিল ফিল হিউজের দল সাউথ অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক জোহান বোথা।
Advertisement
স্বভাবতই ইনিংস সূচনা করেন হিউজ। খেলতে থাকেন বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেই। কাটিয়ে দেন প্রথম সেশন ও দ্বিতীয় সেশনের অর্ধেকের বেশি সময়। তখন চলছিল ম্যাচ ও দিনের ৪৯তম ওভার। ১৬০ বল খেলে ৬৩ রানে অপরাজিত হিউজ।
একের পর বাউন্সার দিয়েও হিউজের উইকেট নিতে পারছিল নিউ সাউথ ওয়েলসের বোলাররা। ততক্ষণে ইনিংসে ২২টি বাউন্সার করেছে তারা। যার ১৯টিই খেলেছেন হিউজ। ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ইনিংসে ২৩তম ও হিউজকে ২০তম বাউন্সারটি করেন শন অ্যাবট। আগের ১৯টি বাউন্সারের মতোই পুল করতে চেয়েছিলেন হিউজ।
কিন্তু হয়নি ব্যাটে-বলে, লেগে যায় কানের নিচে ঘাড়ের অরক্ষিত জায়গায়। কয়েক সেকেন্ড ব্যথায় মাথা নুইয়ে থাকেন, হঠাৎ করেই মুখ থুবড়ে উইকেটের ওপরেই আছড়ে পড়েন হিউজ। সেই যে জ্ঞান হারালেন, আর একবারও চোখ খোলেননি তিনি। দুইদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৭ নভেম্বর তারিখে নিজের ২৬তম জন্মদিনের তিন দিন আগে আজীবনের জন্য ৬৩ রানে নটআউট থেকে যান হিউজ।
অথচ ক্রিকেট মাঠে হিউজের শুরুটা ছিলো দুর্দান্ত। ২০০৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ৪০৮তম ক্রিকেটার হিসেবে পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের ব্যাগী গ্রিন ক্যাপটা। অভিষেক ইনিংসে শূন্য রানে ফিরলেও পরের ইনিংসেই করেন ৭৫ রান। আর দ্বিতীয় ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি (১১৫ ও ১৬০) করে ঢুকে যান একই ম্যাচের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করাদের ছোট্ট তালিকায়।
Advertisement
২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার সবশেষ টেস্ট খেলা হিউজ তার ক্যারিয়ারে খেলেছেন ২৬টি পাঁচদিনের ম্যাচ। ৩ সেঞ্চুরি ও ৭ হাফসেঞ্চুরিতে নামের পাশে রয়েছে ১৫৩৫ রান, সর্বোচ্চ ১৬০ রান। প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে হিউজের সেঞ্চুরি সংখ্যা ২৬টি। ছিলেন ২৭তম সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু ২৭ তারিখেই চিরকালের জন্য নটআউট হয়ে গিয়েছেন তিনি, পাওয়া হয়নি ২৭তম সেঞ্চুরিটি।
জীবনের শেষ ইনিংসে ৬৩ রানে নট আউট থাকা হিউজের,
ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান ২৪৩ নট আউটলিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান ২০২ নট আউটওডিআই ক্যারিয়ার এর সর্বোচ্চ রান ১৩৮ নট আউটটি-২০ ক্যারিয়ার এর সর্বোচ্চ রান ৮৭ নট আউট
সেদিন ৬৩ রানে মাঠ ছাড়ার পর আর কখনো মাঠে নামেননি হিউজ, বাড়াতে পারেননি নিজের রান। আজীবনের জন্য নটআউট থেকেই পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার পথে...
সেই ঘটনার ভিডিও:
এসএএস/জেআইএম