অর্থনীতি

মধুর ব্র্যান্ডিং মেইড ইন বাংলাদেশ নামে করার পরামর্শ

দেশে উৎপাদিত মধু আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত করতে হলে আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডিং না করে বাংলাদেশি মধু বা মেইড ইন বাংলাদেশ নামে ব্র্যান্ডিং করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রিজম প্রকল্পের আয়োজনে এ কর্মশালায় পরামর্শ দেয়া হয়।

Advertisement

কর্মশালায় শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বন বিভাগ, মধু প্রক্রিয়াজাতকারক-রফতানিকারক, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, গবেষক, বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন অধিদফতর, মৌচাষী এবং মৌচাষীদের সংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রিজম প্রকল্পের সিনিয়র এক্সপার্ট মিস মাতেজা ডামেস্টিয়া। তিনি মধুর বৈশ্বিক উৎপাদন-বাজার, বাংলাদেশে মধু চাষ এবং উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরেন। মাতেজা ডামেস্টিয়া বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ২৫ হাজার মৌচাষী আছে যা দিয়ে বছরে মাত্র ৩ হাজার টন মধু উৎপাদিত হয়। এ কারণে চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ মধু আমদনি হয়। তবে উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত করণে দক্ষতা বাড়ানো গেলে এই মৌচাষী দিয়ে বছরে ২৫ হাজার টন থেকে ১ লাখ টন পর্যন্ত মধু উৎপাদন করা সম্ভব।

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে তা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। এজন্য তিনি মৌ চাষীদের এলাকা ও ক্লাস্টারভিত্তিক সংগঠিত করে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং নীতিগত সহায়তা দেবার কথাও সুপারিশ করেন।

Advertisement

মধু আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত করাতে আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডিং না করে বাংলাদেশি মধু বা মেইড ইন বাংলাদেশ নামে ব্র্যান্ডিং করার পরামর্শ দিয়ে মাতেজা ডামেস্টিয়া জানান, স্লোভানিয়া থেকে বাংলাদেশ থেকে মধু আমদানি করে তা পরিশোধন করে মেইড ইন স্লোভেনিয়া নামে মধু বাজারজাত করে যা ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়।

ভারতও বাংলাদেশ থেকে মধু আমদানি করে নতুন মোড়কে তা আবার বাংলাদেশেই রফতানি করে। বাংলাদেশ যদি তাদের একক নামে ব্র্যান্ডিং করে তাহলে তারাও এ বাজার ধরতে পারবে।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে মাতেজা ডামেস্টিয়া জানান, চীন বছরে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করে। তুরস্কে ১ লাখ মেট্রিক টন, যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ হাজার এবং ভারতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদিত হয়। উৎপাদনের পাশাপাশি মধু রফতানিতেও শীর্ষে আছে চীন। দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৩শ ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধু রফতানি করে।

এ ছাড়া, নিউজিল্যান্ড ২শ ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জার্মানী ১শ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, স্পেন ১শ ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর্জেন্টিনা ১শ ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ইউক্রেন ১শ ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধু রফতানি করে। অন্যদিকে সবচাইতে বেশি মধু আমদানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশটি বছরে প্রায় ৫শ ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধু আমদানি করে। এ ছাড়া, জার্মানি ২শ ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, স্পেন ১শ ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্য ১শ ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ফ্রান্স ১শ ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধু আমদানি করে।

Advertisement

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিসিকের চেয়ারম্যন মুশতাক হাসান মুহা, ইফতিখার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, বিসিকের নকশা ও বিপনন বিভাগ এবং প্রিজম প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুর রহমান, বিসিকের পরিচালক (উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ) জীবন কুমার চৌধুরী, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ শাখওয়াত হোসেন, প্রিজম প্রকল্পের টিম লিডার আলী সাবেত, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের পরিচালক মালা খান, বিসিকের মৌচাষ প্রকল্পের পরিচালক মো. আমিনুজ্জামান।

এসআই/এমআরএম/পিআর