দেশজুড়ে

৬ বছর পর সন্তানসহ স্ত্রীর মর্যাদা পেলেন মুনজিলা

দীর্ঘ ছয় বছর পর সন্তানসহ স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন বগুড়ার শেরপুরের বাকপ্রতিবন্ধী মুনজিলা খাতুন (৩৬)। গত শনিবার বিকেলে আদালতের নির্দেশে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উত্তর পেচুঁল গ্রামে এক সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুনজিলা খাতুনকে স্ত্রীর মর্যাদা ও তার ছয় বছরের কন্যা ফজিলা খাতুনকে কন্যার স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলে নিতে বাধ্য হন ধর্ষক ফজলুর রহমান (৫৫)।

Advertisement

বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২-এর বিচারক আব্দুর রহিমের নির্দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্পেশাল এপিপি অ্যাডভোকেট তৃপ্তি বেগম, এপিপি অ্যাডভোকেট রেখা ও পরিদর্শক হিসেবে দৈনিক বাংলা বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তারেক হাসান শেখ উপস্থিত থেকে বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। পরে মুনজিলা খাতুনকে ফজলুর রহমানের বাসায় তুলে দেয়া হয়।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত ফজলুর রহমান স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। তিনি স্টক বিজনেসসহ সুদে টাকা দেয়ার ব্যবসা করেন। মুনজিলা খাতুনের পরিবারে বড় ভাই খলিলুর রহমান ছাড়া কেউ নেই। খলিলুর একটি দইয়ের কারখানার শ্রমিক। ফজলুর রহমানের বাড়ির পাশেই একটি ছাপড়া (বেড়া) ঘরে তারা থাকতো। সেখানে জোর করে প্রবেশ করে মুনজিলা খাতুনকে ধর্ষণ করেছিল ফজলুর।

আলোচিত এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২-এর স্টেনোগ্রাফার লিয়াকত আলী, সেরেস্তাদার এএসএম মিজানুর রহমান, আদালত সহকারী ইব্রাহীম হোসেন, সাহাদৎ হোসেন, ইমরান হোসেন, বিচারকের ব্যক্তিগত গানম্যান শ্রী মুকুল চন্দ্র ও ড্রাইভার শাহরিয়ারসহ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা।

Advertisement

বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল এপিপি অ্যাডভোকেট তৃপ্তি বেগম জানান, বাবা-মা হারা বাক প্রতিবন্ধী নারী মুনজিলা খাতুন প্রতিবেশী ফজলুর রহমানের ধর্ষণের শিকার হয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ধর্ষিত হয়ে ২৬ নভেম্বর একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। ধর্ষণের ঘটনার পর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে শেরপুর থানায় প্রথমে ধর্ষণ মামলা করা হয়। এরপর সেই রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হলে ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পরিবর্তন করে শুনানি শুরু করা হয়। পিতৃ পরিচয় ও সামাজিক স্বীকৃতির জন্য বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ আদালতে ১০৫/১৩ নারী শিশু মামলা দায়ের করেন ওই নারীর ভাই খলিলুর রহমান। কিন্তু আসামি তাকে স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ভিকটিম ও আসামিদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর কন্যার পিতৃত্ব নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর আদালতের নিদের্শে গত ১৯ নভেম্বর দেড় লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ধর্ষক ফজলুর রহমানের সঙ্গে বাকপ্রতিবন্ধী মুনজিলা খাতুনের বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর শনিবার বিকেলে আদালতের নির্দেশের অংশ হিসেবে আদালতের কর্মকর্তা, পরিদর্শক, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী মুনজিলা খাতুন (৩৬) ও তার কন্যা ফজিলা খাতুনকে (৬) ঘরে তুলে নেন মামলার আসামি ফজলুর রহমান। অসহায় এই মেয়ের বিয়েতে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের খাবারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

লিমন বাসার/আরএআর/আরআইপি

Advertisement