পাঁচ দিনের ম্যাচ শেষ আড়াই দিনে। দুই দলের চার ইনিংস মিলে রান হয়েছে কেবল ৮৩৯ রান। চার ইনিংসের ৪০ উইকেটের মধ্যে স্পিনাররাই দখল করেছে ৩৪টি। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংসের ২০ উইকেটই ভাগাভাগি করেছেন বাংলাদেশের চার স্পিনার।
Advertisement
এমন ম্যাচের পরে স্বভাবতই বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে চট্টগ্রামের সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটের ব্যাপারে। জানুয়ারিতে শ্রীলংকা-বাংলাদেশের টেস্টে মাত্র ২৩ উইকেটের পতনে হয়েছিল সাড়ে পনেরশ রান, সেখানে ১০ মাসের ব্যবধানে ৪০ উইকেট হারিয়ে হলো মাত্র অর্ধেক রান।
নিশ্চয়ই গড়বড় রয়েছে উইকেটে- এমনটাই মত সমালোচকদের। কিন্তু ম্যাচ শেষে এমনটা মানতে রাজি হননি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি জানিয়েছিলেন উইকেট খুব স্বাভাবিকই ছিলো, খেলার অযোগ্য কিছু ছিল না চট্টগ্রামের উইকেটে।
উইকেটের ব্যাপারে ম্যাচ শেষের পরপর টাইগার কোচ স্টিভ রোডসের মন্তব্য পাওয়া না গেলেও, তার দেখা মিলেছে একদিন পরে। পাঁচ দিনের ম্যাচ দুই দিন আগেই শেষ হওয়ায় দুইদিন চট্টগ্রামের হোটেল র্যাডিসনেই কাটাতে হচ্ছে দুই দলের খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজম্যান্টের সদস্যদের।
Advertisement
বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে যাদের ঢাকায় বাসা আছে, তারা ফিরেছেন ঢাকায়। কিন্তু ইংলিশ কোচ রোডসসহ কোচিং স্টাফের প্রায় সবাই থেকে গিয়েছেন চট্টগ্রামে টিম হোটেলে। সেখানেই রোববার সন্ধ্যায় মুখোমুখি হলেন সংবাদমাধ্যমের, বিস্তর আলোচনা করলেন সিরিজের প্রথম টেস্টে তার দলের পারফরম্যান্স সম্পর্কে।
স্বভাবতই আলোচনার শুরুতেই চলে আসে সাগরিকার উইকেটের কথা। বিশেষজ্ঞ বা সমালোচকরা চট্টগ্রামের উইকেটের ব্যাপারে নানান তীর্যক মন্তব্য করলেও, সেসব মানতে রাজি নন টাইগার কোচ। তার মতে উপমহাদেশে যেমন উইকেট হয়, ঠিক তেমনই ছিল চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট।
এসময় তিনি জুন-জুলাইয়ের বাংলাদেশের উইন্ডিজ সফরের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জানান যে সেখানে বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছিল ‘এলিয়েন’ কন্ডিশনের বিপক্ষে। তিনি বলেন, ‘দেখেন, উপমহাদেশে খেলতে আসলে আপনাকে অবশ্যই স্পিনের কথা মাথায় রেখেই আসতে হবে। এটা কোনো সারপ্রাইজ বা নতুন কিছু নয়। এখন কলম্বোতে শ্রীলংকা-ইংল্যান্ডের ম্যাচ চলছে, সেখানেও এমন স্পিনিং উইকেট দেয়া হয়েছে। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক। এখানে খেলতে এলে এমন উইকেটের কথা আগেই ভাবতে হবে আপনার। এখানের উইকেট খানিক ভিন্নতর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের অ্যান্টিগা টেস্টের (সে ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল) কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। সে ম্যাচটা আমরা তো এলিয়েন কন্ডিশনে খেলেছি। সবুজ উইকেটে বল সুইং করছে সাপের মতো, কাঁধের কাছ দিয়ে সাঁই সাঁই বাউন্সার ছুঁটে যাচ্ছে, একটা এদিকে, আরেকটা ওদিকে। পুরোপুরি ভিন্ন ছিল আমাদের জন্য। কিন্তু আমি মনে করি এটাও সারা বিশ্বে ট্যুর করার মজা। অভিজাত এই ফরম্যাট খেলার নানান ভিন্ন তরিকা রয়েছে আর বাংলাদেশে খেলার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো স্পিনে ভালো করার প্রস্তুতি নেয়া।’
Advertisement
তবে স্পিনিং উইকেট বানিয়েই যে বাংলাদেশ জিতে যাবে বা যাচ্ছে- এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে জানান রোডস। কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও রয়েছে তিনজন ভালো স্পিনার। যে কারণে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশও দাঁড়াতে পারেনি ব্যাট হাতে। তাই শুধু স্পিনবান্ধব উইকেট বানিয়েই সাড়া নয়, ম্যাচে নিজেরা সতর্ক থাকাতেই মূলত নিজেদের পক্ষে ফল এসেছে বলে মনে করেন টাইগার কোচ।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এমন উইকেট বানালে ঝুঁকিও থাকে। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলেও তিনজন ভালো স্পিনার রয়েছে। এমনকি ম্যাচ শুরুর আগেই আমি তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম। আমি জানতাম আমাদের ব্যাটিং ভালো করতে হবে, বোলিং জায়গামত করতে হবে। আমি মনে করি আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্রেফ একটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছি, যেখানে গর্ব করার অনেক জায়গা রয়েছে।’
কিন্তু স্পিনিং উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠে জিতলেও, খাবি খেতে হবে যে বাইরে গেলে- সে ব্যাপারে কি ভাবছেন কোচ? রোডসের মতে জিম্বাবুয়ে সিরিজের দুই ম্যাচে বিদেশের মাটিতে খেলার একটা প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া আরও আলাদা প্রস্তুতিরও প্রয়োজন রয়েছে।
রোডসের ভাষ্যে, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো কোনো সাধারণ ঘটনা না যেটা আপনি প্রতিদিন করে থাকেন। বিশেষ করে আগে যেটা বললাম, অ্যান্টিগায় আমরা টস হেরে গিয়েছিলাম। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর আপনার কথায় ফিরলে বিদেশের মাঠে খেলার প্রস্তুতির ব্যাপারে বলবো যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচে সেটা খানিক হয়েছে। যদিও প্রথম ম্যাচে তেমন সুযোগ মেলেনি, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই পেসাররা নিজেদের মেলে ধরেছিল। ম্যাচটা সহজ ছিলো না।’
এসএএস/জেআইএম