বিনোদন

১৮ বছর পর ভোটাররা নৌকা পেল, মাঝি হয়েছি আমি : ফারুক

কৈশোরে দেখেছেন, মিশেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সেই কিশোরবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু তার নায়ক, আদর্শ, লিডার! তার উৎসাহেই রাজনীতিতে আসা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু খুন হবার পর থেকে আর কোনোদিন ১৫ আগস্ট নিজের জন্মদিন পালন করেন না। তিনি ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা ফারুক।

Advertisement

আলোচনার বিষয় যাই হোক, যদি বক্তাটি হন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা ফারুক তবে সেখানে শ্রদ্ধার সঙ্গে উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর নাম। যারা নায়ক ফারুককে চেনেন তাদের সবারই চেনা এই দৃশ্য। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ফারুক। তাকে অভিনন্দিত করছেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা। সক্রিয় রাজনীতিতে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন রাজনীতিবিদরা।

মনোনয়নের টিকিট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন মিয়াভাই খ্যাত নায়ক ফারুক। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে আবেগ হয়ে ঝরলো সেই উচ্ছ্বাস। লিখেছেন লিমন আহমেদ

জাগো নিউজ : অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আওয়ামী লীগের মনোননয় পেলেন। কেমন লাগছে? ফারুক : কেমন লাগছে, সে কথা বলে বোঝাতে পারবো না। ত্রিশ বছর ধরেই স্বপ্ন দেখেছি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করব। কিন্তু নানা কারণে হয়ে উঠেনি। এবার মনোনয়ন পেয়েছি। আর এমন এক আসনে বঙ্গবন্ধু কন্যা নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন যা আমার ত্রিশ বছরের আক্ষেপ মুছে দিলো এক নিমিষেই। ঢাকা-১৭ আসনটি আমার জন্য স্বপ্নের, বিশেষ উপহারের। আমি আবেগী মানুষ। নেত্রীর এই অসামান্য উপহারে কৃতজ্ঞতায় আমার চোখে বারবার পানি এসেছে। তিনি আমাকে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আসনে প্রার্থী করেছেন। ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমি এই উপহার ও বিশেষ আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।

Advertisement

জাগো নিউজ : মনোনয়ন প্রাপ্তির পর কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?

ফারুক : এত এত মানুষ আমাকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যে আমি অভিভূত। গেল দুইদিন ধরেই সারা দেশ থেকে বিভিন্নজনের কল এসেছে। সবাই বলছেন আমার নির্বাচনে আসাটা অনেক ইতিবাচক হয়েছে। চলচ্চিত্রের জন্য এটি বিশেষ অর্জন হয়ে থাকবে। এত লোক শুভেচ্ছা জানাচ্ছে মনে হয় যদি পাঁচটা আসন থেকে নির্বাচন করতাম হয়তো পাস করতাম। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে জানা ছিল না।

মনোনয়ন পাবার পর হাজার হাজার লোক আসছেন। বিশেষ করে তরুণরা ছুটে আসছে পাগলের মতো। বুকে নিচ্ছে, পা ছুঁয়ে সালাম করছে, এক হয়ে নৌকার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কী অপূর্ব উপহার দিলেন আমাকে নেত্রী।

জাগো নিউজ : নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে?

Advertisement

ফারুক : না, তিনি অনেক ব্যস্ত সময় পার করেছেন আজ (রোববার)। দেখা হবার কথা থাকলেও সিডিউল মেলানো যায়নি। তবে সোমবার তার সঙ্গে দেখা করবো। সামনে দাঁড়িয়ে তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। এমন একটা আসনে তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন আমার সারা শরীরের রক্ত তার হাতে তুলে দিতে পারলে বোধ করি তার কৃতজ্ঞতায় শান্তি পেতাম।

নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করব। যার আদর্শ বুকে নিয়ে আজকের এই নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছি সেই বঙ্গবন্ধু জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করে নতুন যাত্রা শুরু হবে আমার।

জাগো নিউজ : আপনি গাজীপুরের সন্তান। গাজীপুর-৫ আসনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পেলেন ঢাকা-১৭ আসনে। এখানে আপনি অতিথির মতো। এ বিষয়টি আপনার রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?

ফারুক : না। প্রশ্নই আসে না। ঢাকা-১৭ আসনের ভোটাররা আমাকে তাদের নেতা হিসেবে, প্রতিনিধি হিসেবে, কাছের মানুষ হিসেবেই গ্রহণ করেছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই সেটা টের পাচ্ছি। এখানকার মানুষ নৌকা মার্কা পেয়ে খুবই খুশি। এই এলাকার মানুষ নৌকা ভালোবাসে, বঙ্গবন্ধু ভালোবাসে। কিন্তু তারা নৌকায় ভোট দিতে পারে না। ১৮ বছর ধরে এখানে নৌকার কোনো প্রার্থী দেয়া হয় না। অবশেষে নৌকা এলো, যার মাঝি হলাম আমি।

গত দুইদিন ধরে সবার আগ্রহটা দেখেছি আমি। সবাই শুধু বলেছেন, আমরা এবার নৌকা চাই। উৎসব করে নৌকার ইলেকশন করতে চাই। আমাদের মাঝি হবেন সবার প্রিয় নায়ক ফারুক। মানুষের প্রত্যাশা দেখে বারবার কেঁদেছি আমি। আল্লাহকে বলেছি আমাকে এখানে নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হবার তৌফিক দাও।

নেত্রী আমার ও এই এলাকার মানুষের মনের কথাটা অনুধাবন করে আমাকে মনোনীত করেছেন। সেই খবর পেয়েই হাজার হাজার মানুষ আজ আমার কাছে এসেছেন। নৌকা নৌকা বলে চিৎকার করে হৈ চৈ করেছেন ১৮টি বছর পর। সবাই খুশি। তারা বলছেন, তাদের মাঝি সারা দেশের প্রিয় মানুষ। তাকে নির্বাচিত করে তার সম্মান রাখবেন। আমাকে নিয়ে তাদের এই যে ভালোবাসা, মূল্যায়ন ও প্রতিশ্রুতি এটাই আমার রাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ইতিবাচক ব্যাপার।

জাগো নিউজ : গাজীপুরবাসীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

ফারুক : আমার জন্মস্থান গাজীপুর। সেই এলাকার প্রতি আবেগটা অন্যরকম। সেটা চিরকাল থাকবেও। কিন্তু রাজনীতির মাঠে অনেক নেতাকেই নিজের এলাকার বাইরে গিয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। আমিও এসেছি ঢাকা-১৭ আসনে। এই খবরে গাজীপুরবাসীদেরও শুভেচ্ছা পেয়েছি। তারা উৎসাহ দিচ্ছেন।

তাছাড়া গাজীপুর-৫ আসনের মানুষদের দেখার অনেকেই আছেন। কিন্তু গুলশান-বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকার যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, নেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ লালন করেন তাদের জন্য কেউ ছিল না। তাদের প্রতিনিধি হওয়াটাকে আমি বিশেষ সম্মান ও দায়িত্ব মনে করছি।

জাগো নিউজ : নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে আপনাকে এলাকাবাসীদের কাছে যেতে হবে, নিয়মিতই এলাকায় থাকতে হবে। কিন্তু আপনি তো উত্তরায় থাকেন। এই দূরত্ব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না?

ফারুক : খুব শিগগিরই আমি গুলশান ও বনানীতে অফিস নিচ্ছি। যাদের প্রতিনিধি হতে যাচ্ছি, তাদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব থাকবে না। আমি রাখবো না। রোজ যেন সবার সঙ্গে দেখা হয়, নেতাকর্মীরা আমার কাছে আসতে পারেন সেই ব্যবস্থা করবো।

যারা আমাকে চেনেন আপনারা সবাই জানেন আমি মানুষ ভালোবাসি, মানুষের সঙ্গ ভালোবাসি। আমি সবার সঙ্গে মিলে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকা-১৭ আসনের জন্য সাফল্য আনতে চাই।

জাগো নিউজ : সিনেমার মানুষ। অভিনেতা ফারুক অনেক শ্রদ্ধেয়, সম্মানের। রাজনীতির নেতা হিসেবে দলীয় বিবেচনা আসবে, আদর্শের বিভাজন আসবে। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

ফারুক : আমার কথা ভাই সহজ। দেশের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। দেশের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে রাজনীতিতে এলাম। সিনেমার মানুষ। সিনেমা করে কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা কুঁড়িয়েছি। এবার মানুষের উন্নয়নে কিছু করতে চাই।

অভিনয় আমার পেশা, নেশা। কিন্তু রাজনীতিও আমাকে চিরকাল মুগ্ধ করেছে। রাজনীতিকে আমি সমাজ ও দেশের জন্য সরাসরি কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যম হিসেবে দেখি। আর রাজনীতিতে নানা দল থাকবে, মতের অমিল থাকবে। কিন্তু নায়ক ফারুক বা মানুষ ফারুক নিয়ে কোনো বিভাজন নেই। আমি এই বিভাজনহীন রাজনীতির কবিতাটাও লিখতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমি কাউকে হতাশ করবো না। হিংসা, রক্তাক্ত রাজনীতির বদলে হবে ভালোবাসার রাজনীতি। আর ভালোবাসার রাজনীতিই সেরা সেটা প্রমাণ হয়েছে বহুবার। ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন, তাদের সেবার দায়িত্ব দেবেন এটাই আমার বিশ্বাস।

জাগো নিউজ : নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে কী পরিকল্পনা আপনার?

ফারুক : নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে এবং দলের যা পরিকল্পনা আছে সেভাবেই এগিয়ে যাবো। এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজেরও কিছু পরিকল্পনা থাকবে। নির্বাচনে জিততে চাই। দলের আস্থার প্রতিদান দিতে চাই আমি। সেই মিশন নিয়েই মাঠে নামছি।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্র পরিবারের অভিভাবক আপনি। আপনার মনোনয়নপ্রাপ্তির খবরে আনন্দের হাওয়া চলচ্চিত্রপাড়ায়। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে?

ফারুক : এখনও কথা হয়নি। সারাদিন নির্বাচনী ব্যস্ততা ছিল। আজকালের মধ্যেই এফডিসি যাবো, সবার সঙ্গে কথা হবে।

দেখুন, চলচ্চিত্র আর আমি প্রেমিক প্রেমিকার মতো। এই চলচ্চিত্রই আমাকে ফারুক বানিয়েছে। যেখানেই যাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে বিচ্ছেদ হবে না। সুযোগ হলে অনেক কিছু করতে চাই এই শিল্পটির জন্য।

আমি নানা কারণ ও অভিমানে সিনেমা থেকে দূরে সরে ছিলাম। চলচ্চিত্রের মানুষেরা আমাকে আবার ভালোবেসে ডেকেছে। তাদের অভিভাবক হিসেবে আমাকে চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক করেছে। এটা অনেক বড় সম্মান আমার জন্য।

কতটুকু কী করতে পারছি জানি না। তবে দেশ ও নিজেদের ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে সবাইকে নিয়ে এক নীতিতে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের মানুষেরা। আমার রাজনীতিরও অনুপ্রেরণা তারা।

বিশেষ করে আমার অনেকগুলা ছোটভাই আছে, রিয়াজ, ফেরদৌস, মিশা সওদাগর, জায়েদ, সাইমন আরও অনেকে। সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসে। সাহস দেয়। আরও যারা আছে চলচ্চিত্র পরিবারের অন্যান্য সমিতির সবাইকে ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য। আরও অনেক পথ বাকী। মূল লড়াইয়ের মঞ্চে কেবল নেমেছি। সেখানে জয়ী হতেও সবার সমর্থন, পরামর্শ, উৎসাহ চাই।

জাগো নিউজ : ভক্তদের জন্য কিছু বলতে চান?

ফারুক : ভোট তো চাই ভোটারের। কারণ ভোটারের হাতেই আমার নৌকা পার হওয়া না হওয়ার ভাগ্য। কিন্তু সমর্থন ও দোয়া চাই সবার। দেশের সব মানুষের কাছে।

এলএ/জেএইচ