টানা এক দশক ক্ষমতায়। কার্যকর বিরোধী দল মাঠে না থাকায় সর্বেসর্বা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা (এমপি)। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অনেকেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন করে কোনো কোনো এমপি দলের মধ্যেই কোণঠাসা। অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। শতাধিক এমপির দুর্নীতির খবর এখন ওপেন সিক্রেট।
Advertisement
ক্ষমতাসীন দলটির সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সভায় ৭০ জন এমপি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন বলে আলোচনা হয়েছিল। ওই সভায় শতাধিক এমপি এবার ‘লাল কার্ড’ পেতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়ে ছিলেন। আর এবার এটিই ছিল আওয়ামী শিবিরে নির্বাচনী চমক। তবে চূড়ান্ত মনোনয়নে দেখা গেছে, পুরনোদের ওপরই আস্থা রেখেছে দলটি।
ওই কার্যনির্বাহী সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তিনি জাগো নিউজের কাছে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অর্ধশতাধিক এমপির কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ সভানেত্রী। শতাধিক আসনে চমক আসতে পারে। নেতৃত্ব তৈরির তাগিদেই বহু সংখ্যক প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।’
তবে ‘চমক’ যেন আলোচনাতেই আটকে থাকল। ‘মাশরাফি চমক’ এর বাইরে আপাতত আওয়ামী লীগের ঘরে নতুন মুখ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। নতুন যে ক’জন মনোনয়ন পাচ্ছেন, তারা আগের আলোচনা থেকেই গুরুত্ব পেয়ে আসছেন। দশম সংসদে যে ক’জন এমপি অধিক বিতর্কিত ছিলেন তাদের মধ্যে ইয়াবা কাণ্ডে বিতর্কিত আব্দুর রহমান বদি এবং খুনের আসামি আমানুর রহমান উল্লেখযোগ্য। আবার জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাছিমসহ যে ক’জন এমপি বাদ পড়েছেন, সে আলোচনাও চাপা পড়বে দিন কয়েক পরই।
Advertisement
ধারণা করা হয়েছিল, ২০১৪ সালে বিশেষ বিবেচনায় মনোনয়ন পাওয়া অথবা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এবার বাদ পড়তে পারেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য দু’দিন আগেও বলেছিলেন, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা এমপি হয়েছিলেন, তাদের অনেকের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা আছে। অযোগ্যদের ঠাঁই হবে না এবার।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রার্থী হওয়ার বাসনা সবার থাকতে পারে। তাই বলে তো আর সবাইকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। নেত্রী যাদের যোগ্য মনে করেছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। কেননা বিএনপি নির্বাচনে আসায় আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। এ কারণেই অভিজ্ঞ এবং জনপ্রিয়দের গুরুত্ব দিতে হয়েছে। তবে চমক তো থাকছেই। বেশ কয়েকজন নতুন মুখ আসছে। জোটগত আসন বণ্টন হয়নি এখনও। আরও সময় নিতে হবে চমক দেখতে।’
টাঙ্গাইলের একটি আসন থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক এক তরুণ নেতা। ওই আসনে বর্তমান এমপিকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, যার বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই নানা অভিযোগ আছে। মনোনয়নবঞ্চিত ওই তরুণ নেতা বলেন, ‘অবাক হয়েছি। আমি না পাই তাতে আফসোস নেই। কিন্তু আরও যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। অথচ বিতর্কিত ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেয়া হলো। ভোট সুষ্ঠু হলে এ সিদ্ধান্ত দলের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছি।’
নীলফামারী-১ আসন থেকে মনোনয়নবঞ্চিত এক নেতা বলেন, ‘তরুণরা পরিবর্তন চাইছে। এবার আড়াই কোটি নতুন ভোটার। এ ভোট টানতে হলে প্রার্থী বদলের কোনো বিকল্প ছিল না। এরপরও নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করেছেন, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।’
Advertisement
নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় প্রার্থীদের চিঠি দেয়া শুরু হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ চিঠি বিতরণ করেন। ৩০০ আসনের মধ্যে এদিন ‘২৩০টির মতো’ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীতদের চিঠি দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হবে সোমবার। বাকি আসন জোটের শরিকদের দেয়া হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।
এএসএস/এনডিএস/আরআইপি