বই মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে। বই পড়ে কিংবা কিনে কেউ দেউলিয়া হয়েছে এমন কোন রেকর্ডও নেই। বইকে বলা হয় মানুষের জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মানুষের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে বই। এমনকি বই ভালো মানুষ হতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বই পড়ার ভালো দিকগুলো তুলে এনেছেন মরিয়ম আক্তার-
Advertisement
বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘সু শিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হলে মানুষকে বই পড়তে হবে। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই মানুষ তার জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করতে পারে। কারণ প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয় বই পড়ার মাধ্যমে। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি তার চিন্তাশক্তি, যুক্তি, বুদ্ধির জাগরণ ঘটে, যা একজন স্বশিক্ষিত মানুষের জন্য অপরিহার্য। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানের রাজ্যের সাথে পরিচিত হয়। শিক্ষার সর্বপ্রধান অঙ্গ হলো সাহিত্যচর্চা। আর সাহিত্যচর্চা করতে হয় বই পড়ে। বই পড়া ছাড়া উপায় নেই। মানুষ আনন্দসন্ধানী, কিন্তু জাগতিক জীবনকে বস্তুগত ভোগ কিছুতেই আনন্দ দিতে পারে না। বই-ই পারে সে আনন্দকে বাড়িয়ে তুলতে।
বস্তুত বই আনন্দের আধার, অমৃতের সুধাভান্ডার। পৃথিবীর বিখ্যাত দার্শনিক ও সাহিত্যিক টলস্টয়কে জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘জীবনে তিনটি বস্তু প্রয়োজন আর তা হলো বই, বই আর বই।’ বই পড়ার একমাত্র উদ্দেশ্য শুধু জ্ঞানী হওয়াই নয়, এটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করে, মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে। প্রাচীনকাল থেকে আনন্দ-অনুজাগরূপ মানুষের পাশে রয়েছে বই। জীবনের সব উপকরণ হারিয়ে যায়, ফুরিয়ে যায় কিন্তু বই রয়ে গেছে চিরনতুন, চিরযৌবনরূপে। কবি, দার্শনিক ওমর খৈয়াম মানব জীবনে বইয়ের স্থানকে নির্ধারণ করে বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্তযৌবনা- যদি তেমন বই হয়।’
> আরও পড়ুন- ৬৪ জেলার মাটি দিয়ে মানচিত্র বানালেন শুভঙ্কর
Advertisement
দার্শনিক ও নাট্যকার বার্ট্রান্ড রাসেল জীবনের রূঢ় বাস্তবতা ও জটিলতা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে বইয়ের মাঝে ডুব দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘মানুষ বই দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে।’
একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সাথে শত্রুতা করে, কিন্তু বই কখনো কারো সাথে শত্রুতা করে না। বই পড়া মানেই মহামনীষীদের সম্পর্কে জানা, তাদের সান্নিধ্য লাভ করা। যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শূন্য, তার ধনের ভান্ডারও শূন্য। তাই জ্ঞানার্জন আর ধনার্জন করার জন্য বই পড়া একান্ত প্রয়োজন। বইয়ের সঙ্গে মানুষের নিত্য কথা হয়। নিত্য কথা থেকেই জন্ম নেয় এক অনাস্বাধিতপূণ্য আনন্দের। বই তাই মানুষের অবসাদ ক্লিষ্ট মুহূর্তকে ভুলিয়ে দিতে পারে আনন্দের অমীয় ধারায় প্লাবিত করে দিয়ে। সারা বিশ্বের সাথে পরিচিত হতে হলে, স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে হলে বই পড়তে হবে। তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বিশাল বিশ্বের আয়োজন মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণে, সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণ বৃত্তান্ত আছে যাহে, অক্ষয় উৎসাহে।’
পৃথিবীতে রয়েছে হাজারো রকমের বিচিত্র বই। একেক ধরনের বই মানুষকে একেক রকম জ্ঞান দান করে, তথ্য দান করে। কিছু কিছু বই মানুষকে আনন্দ দান করে, হাসায়। মানুষ তার রুচি অনুযায়ী বই নির্বাচন করে থাকে। কিন্তু বই নির্বাচনের মধ্যেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ এমন বইও রয়েছে যা মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এসব বই পাঠ করে মানুষ ক্ষণিকের জন্য আনন্দ পায় ঠিকই কিন্তু তা সার্বিক বিচারে দেশ ও জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই আমাদের উচিত সুপাঠ্য ও নীতিমূলক বই পড়া। মনে রাখতে হবে, বই কিন্তু যুগ যুগ ধরে আমাদের সভ্যতাকে ধারণ ও লালন করে আসছে।
> আরও পড়ুন- নারীর হাতে নৌকার বৈঠা
Advertisement
আমাদের পড়া উচিত সেই সমস্ত বই, যেসব বই ব্যক্তির মনে খোড়াক জোগায়, মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। এসব বইয়ে আছে জীবনকে সুন্দর করার ভাষা। বই মানুষের নিঃস্বার্থ বন্ধু। বই পড়ার জন্য লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক। তাই বই পড়ার জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। জীবনে বড় হতে হলে ভালো কিছু মানুষের সাথে মিশতে হয়, ভালো কিছুর সংস্পর্শে থাকতে হয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালো কিছু বই পড়তে হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।
এসইউ/আরআইপি