টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ জেট ফাইটার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপুর প্রথম জানাজা শনিবার পাবনার ঈশ্বরদীতে তার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে।
Advertisement
দুপুর ১২টায় উপজেলার জগন্নাথপুর মাদরাসা ও গোরস্থান মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ ঈশ্বরদী আলহাজ স্কুলমাঠে আনা হয় এবং সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে আনা হয় জগন্নাথপুরে।
জানাজা শেষে দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারেই তার মরদেহ আবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। দিপুর নামাজে জানাজায় বিমান বাহিনীর এয়ার কমোডর মো. ইউসুফ, র্যাব-১২ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আব্দুল আহাদ, নিহত দিপুর সহকর্মী উইং কমান্ডার তৌহিদ, পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান মিন্টু, পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহম্মদ হোসেন ভূঁইয়া, পাবনা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সর্বস্তরের মানুষ শরিক হন।
এসময় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারও উপস্থিত ছিলেন। নিহত উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দীপু ঈশ্বরদী পৌরসভার শের শাহ রোডের মৃত আফজাল হোসেন বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত আফজাল হোসেনের ১ ছেলে এবং ২ মেয়ের মধ্যে দিপু ছিলেন সবার বড়। দিপুর এক বোন স্বামীসহ কানাডা প্রবাসী এবং সবার ছোট বোন মায়ের সঙ্গে ঈশ্বরদী পৌর এলাকার শের শাহ রোডের বাড়িতে থাকেন। ছোট বোন এখনও অবিবাহিত। এছাড়া তিনি বিধবা স্ত্রী অন্তরা (৩৬) মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ইশিকা (১০) এবং ছেলে ৩য় শ্রেণির ছাত্র ইশামকে (৪) রেখে গেছেন।
Advertisement
উইং কমান্ডার দিপু পাবনা ক্যাডেট কলেজের কৃতি ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বিমান বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি বিমান বাহিনীর সোর্ড অব অর্নারপ্রাপ্ত ছিলেন। বিমান বাহিনীর এই মেধাবী অফিসার আমেরিকা, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
এদিকে নিহত দিপুর মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছলে আত্মীয়, বন্ধু-স্বজন, প্রতিবেশীদের কান্নায় সেখানে এক বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার মরদেহ এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকেই গ্রামের বাড়িতে এবং আলহাজ মাঠে শত শত নারী-পুরুষ জড়ো হন। কিন্তু মরদেহ দেখার কোনো অনুমতি না থাকায় তারা কেউ তা দেখতে পারেননি।
জানাজার আগে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, শুধু পাবনাবাসী নয়, দেশ একজন কৃতি সন্তানকে হারাল।
দিপুর সহকর্মী উইং কমান্ডার তৌহিদ বলেন, এমন মেধাবী এবং পেশাদারিত্বের অধিকারী অফিসার বিরল। তিনি ছিলেন সদালাপি এবং কো-অপারেটিভ। সবার কাছে তিনি ছিলেন প্রিয়ভাজন।
Advertisement
ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান মিন্টু বলেন, এই কৃতি অফিসার বেঁচে থাকলে একদিন হয়ত বিমান বাহিনীর সর্বোচ্চ স্থানেও যেতে পারতেন। তার মৃত্যুতে যে ক্ষতি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। পাবনা ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তণ ছাত্র দিপুর সহপাঠি এবং স্কয়ার ফার্মার ম্যানেজার এইচআর তানজিরুল ইসলাম দিপুর স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, এত মেধাবী এবং চৌকষ অফিসার বিরল। দিপুর ব্যক্তিগত আচরণও ছিল অমায়িক। সে ছিল ধার্মিক। গত বছর সে পবিত্র হজ্ব পালন করে আসেন। এই মেধাবী সন্তানের মৃত্যুতে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে টাঙ্গাইল জেলার রসুলপুরে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ জেট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট আরিফ আহমেদ দিপুু নিহত হন। তিনি একাই ওই বিমানে ছিলেন। এ দিকে উইং কমান্ডার দিপুর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন দুদকের সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও বিসিবির পরিচালক সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, সাধারণ সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমনসহ বিভিন্ন মহল।
একে জামান/এমএএস/আরআইপি