দেশজুড়ে

তাজরীন ট্রাজেডির ৬ বছর : আহতদের মানবেতর জীবন

আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ছয় বছর পূর্ণ হল আজ। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পোশাক কারখানাটিতে আগুন লাগে। এতে সরকারি হিসেবে তখনি প্রাণ হারায় ১১৩ জন। আহত হয় আরও শত শত শ্রমিক। আহতদের মধ্যে এক বছর পর আরও এক শ্রমিক মারা যান। এখনও আহতদের অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Advertisement

যখন আগুনের সূত্রপাত তখন ৯ তলা বিশিষ্ট কারখানাটিতে কাজে নিয়োজিত ছিল তিন থেকে চার হাজার শ্রমিক। আগুন লাগার পর মুহূর্তেই আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয় পোশাক কারখানাটি। সেই আগুন ছিল অপ্রতিরোধ্য । দমকল বাহিনীর বিশাল বহর সেই আগুনের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। আগুন জ্বলতেই থাকে। সব কিছু পুড়ে ছাই করে দিয়ে প্রায় চার দিন পর আগুন নিভে যায়। তারপর যে দৃশ্য সামনে আসে তাতে শুধু বাংলাদেশই নয় পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে পড়ে। নিহত শ্রমিকের মধ্যে ১০১ জনের আগুনে পুড়ে যাওয়া নিথর দেহ বের করে আনা হয় অগ্নিগর্ভ থেকে।

কী হয়েছিল সেদিন? আয়েশা বেগম নামের তাজরীন ফ্যাশনের একজন আহত শ্রমিক জানালেন, সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে একবার ফায়ার বেল বেজে ওঠে কারখানায়। তখন শ্রমিকরা বের হয়ে যেতে চান। কিন্তু কিছুই হইনি বলে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন উৎপাদন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে কারখানার নিচ তলার তুলার গোডাউনে আগুন লাগে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই আবার শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে বাহিরে বের হতে চান। কিন্তু এবার নির্দয়ের মত কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে দাউ দাউ করে। প্রাণে বাচঁতে শ্রমিকরা সিড়ি বেয়ে কারখানার ছাদে ওঠেন। ছাদ থেকে লাফিয়ে এবং দেয়াল বেয়ে অনেকেই নামতে সক্ষম হন। কিন্তু এদের মধ্যে শত শত শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করেন। আয়শা বেগমও তাদের মধ্যে একজন।

আয়শা বেগমের মত আহত শ্রমিকরা বলছেন, সময় মত শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের হতে দিলে এত প্রাণহাণির ঘটনা ঘটতো না। একই সঙ্গে ইন্সুরেন্সের টাকা পেতে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন শ্রমিক সংগঠনগুলো।

Advertisement

এর ভিত্তিতে কারখানার মালিক তোবা গ্রুপের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এই মামলায় মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ কারখানাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গ্রেফতারও করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বিচার শেষ হইনি মামলার। সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় এই মামলার বিচার কাজ এখনও থেমে রয়েছে।

উপার্জন সক্ষম একজন মানুষের সারাজীবনের আয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে এক লক্ষ করে টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ তাদের কোনো কাজেই লাগেনি। ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ উৎঘাটনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হইনি।

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের সাভার-আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, তাজরীনের ঘটনায় অনেক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুনর্বাসন করলে তারা ভয়কে জয় করে নতুন করে বাঁচতে শিখতে পারবে। তাই সরকার দ্রুত আহত শ্রমিকদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

আল-মামুন/আরএআর/এমএস

Advertisement