বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, গতকাল নির্বাচন ভবনে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নির্দেশগুলো এবং উপস্থিত কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে মনে হয় উভয় পক্ষই সরকারের অনুকূলে একতরফা নির্বাচনেরই একটা গোপন ছক তৈরি করে রেখেছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ও পুলিশে কর্মরত বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করলে সিইসি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সভায় বলেছেন, কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা হবে না। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে বিতর্কিতদের সরানোর আহ্বানের বিপরীতে সিইসির এ ধরনের বক্তব্য দলবাজ কর্মকর্তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে।’
আজ (শুক্রবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। এই ব্যবহার হচ্ছে বেপরোয়া ও নির্বিচারভাবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক’ সদস্য ব্যাংকগুলোর কাছে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় একশো কোটি টাকার কম্বল দাবি করেছে। গত ২০ নভেম্বর ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে আগামী ২৭ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নমুনা কম্বল এবং পরের ১৫ দিনের মধ্যে পুরনো ব্যাংকগুলোর কাছে ৫০ হাজার এবং নতুন ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১৫ হাজার কম্বল চাওয়া হয়।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ত্রাণের নামে ব্যাংকগুলোর কাছে কম্বল দাবি নির্বাচনী আচরণবিধির পুরোপুরি লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে ব্যাংক মালিকগুলোর কাছে চিঠি পাঠানোর ফলে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছে না। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পারিবারিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছে প্রধানমন্ত্রী। আমরা এর নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।’
রিজভী বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে গতকাল নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ কর্মকর্তারা একজোট হয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের আলোচনায় মনে হয়-বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন থেকে কিভাবে দমন করে চাপিয়ে রাখা যায়, তারই মহাপরিকল্পনা হয়েছে সেখানে। তাদের আলোচনায় এটি অত্যন্ত সুষ্পষ্ট যে, দলীয় চেতনায় সাজানো পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনো নড়চড় করবে না নির্বাচন কমিশন। অর্থাৎ সরকারের অনুকূলেই সমতল ভূমি নির্মাণ করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে ইসি। আর সেইক্ষেত্রে পুলিশ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হয়। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ঐক্যফ্রন্টের বিজয় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশজুড়ে গ্রেফতার, হামলা নির্যাতন থামছেই না। এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে মাঠে ময়দানে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে, নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। গতকাল আপনারা দেখেছেন নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান বিশাল প্রচারণা সভা করেছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নাজমুল হাসান পাপনের পক্ষে মাইকিং করে সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া সকল জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মিছিল করে, সমাবেশ করে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় যেতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঘরোয়া বৈঠক করতে চাইলে সেখানে চলছে সশস্ত্র হামলা। বিএনপির লোক ঘরের ভিতর সভা করতে পারছেন না অথচ আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের চোখের সামনে বড় বড় সমাবেশ করছে, নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে সারাদেশ আওয়ামী লীগের ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে।’ কেএইচ/এনএফ/এমএস
Advertisement