টেস্ট ক্রিকেটে আগমনের পর নিজের প্রথম দুই ইনিংসেই পঞ্চাশ ছাড়ানো স্কোর খেলেছিলেন মুমিনুল হক। নিজের চতুর্থ ম্যাচেই পেয়েছিলেন প্রথম সেঞ্চুরির দেখা। প্রথম সাত ম্যাচেই করে ফেলেছিলেন তিনটি সেঞ্চুরি। ফলে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমাটা তখনই গায়ে সেঁটে গিয়েছিল তার। অভিষেকের দুই বছরের মধ্যেই ৪টি সেঞ্চুরি হয়ে যায় মুমিনুলেল।
Advertisement
এরপরই মড়ক লেগে যায় মুমিনুলের সেঞ্চুরি ভাগ্যে। তখন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীলঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দায়িত্ব নিয়েই তখন ফর্মের তুঙ্গে থাকা মুমিনুল হককে তিনি আখ্যা দেন পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে নড়বড়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে।
নিজের কোচিং অধ্যায়ের পুরোটা সময়েই মুমিনুলকে অবহেলা করে যান হাথুরুসিংহে। কখনও বলেন, পেসের বিপক্ষে পারেন না মুমিনুল, কখনো বলেন অফস্পিনে দুর্বল মুমিনুল। হাথুরু আমলে চুপসে যায় মুমিনুলের ব্যাটও। লঙ্কান কোচ দায়িত্ব নেয়ার আগে তিন সেঞ্চুরি করা মুমিনুল, পরবর্তী তিন বছরে করেন একটি মাত্র সেঞ্চুরি।
নানাবীদ অজুহাতে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমা পাওয়া মুমিনুল হককে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টের স্কোয়াড থেকেই বাদ দিয়ে দেন হাথুরু। এ নিয়ে তখন জলঘোলা হয়েছে প্রচুর, মেলেনি সমাধান। রান পাননি মুমিনুলও; কিন্তু হাথুরু দায়িত্ব ছাড়তেই যেন দেখা মিলল সেই শুরুর ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’কে।
Advertisement
হাথুরু আমলে মাত্র একটি সেঞ্চুরি করা মুমিনুল, হাথুরু চলে যাওয়ার পর এরই মধ্যে করে ফেলেছেন চারটি সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে আট সেঞ্চুরি করে তামিম ইকবালের সাথে যুগ্মভাবে তিনি এখন দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান। এই যে হাথুরু আমল এবং তার পরবর্তী আমলে মুমিনুলের রানের ফোয়ারা, এ ব্যাপারটি তিনি নিজে কিভাবে দেখেন?
জানতে চাওয়া হলো খোদ মুমিনুলের কাছেই। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখানে (হাথুরুকে) দেখানোর কিছু নেই। হয়তো এটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। মানুষের জীবনে ছোট ছোট স্ট্রাগল আসে, ওই স্ট্রাগল থেকে যে যেভাবে পারে শিক্ষা নেয়। আমার কাছে মনে হয় ওই জিনিসটা আমার জন্য ভালো ছিল। আর ওইভাবে চিন্তা কোন সময় করিনি যে হাথুরুসিংহেকে দেখানোর জন্য ভালো খেলতে হবে। দিন শেষে আমাকেই মাঠে খেলতে হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। ওইভাবে চিন্তা না করে সবসময় দলের জন্য কিভাবে ভালো করা যায় সেই চিন্তাই করি।’
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি তিনবার দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসেরও মালিক মুমিনুল। কিন্তু একবারও দুইশ করতে পারেননি কক্সবাজারের এ তরুণ। সুযোগ ছিলো আজও। সেঞ্চুরি করার পরও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করছিলেন তিনি। কিন্তু হুট করেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি।
ফলে নষ্ট হয় ডাবল সেঞ্চুরি করার আরেকটি সুযোগ। ডাবল সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ থাকলেও ইতিবাচকই রয়েছেন মুমিনুল। তিনি মনে করেন যতো রানই করেন না কেন, আরও বেশি আক্ষেপ না থাকলে পরের ধাপে যাওয়া যায় না।
Advertisement
মুমিনুল বলেন, ‘সবসময় আক্ষেপ থাকবে (ডাবল সেঞ্চুরির)। আগের টেস্টেও যেমন ১৬০ করে আউট হয়েছি, তখনও ছিল। যখনই আক্ষেপ থাকবে না, তখন আপনি ওই একই জায়গায় থেকে যাবেন। আপনার যদি ক্ষুধা না থাকে পারফর্ম করার, তাহলে আপনি একই জায়গায় আটকে যাবেন। আক্ষেপ সবসময় থাকে। যখন শূন্য করে আউট হই বা যখন একশ করি তখনও আক্ষেপ থাকে।’
এসএএস/আইএইচএস/পিআর