সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ জড়িত থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে রিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। মার্কিন রাজনৈতিক জগতে অবশ্য এই নীতি বদলের জন্য চাপ বাড়ছে। বুধবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
Advertisement
কিন্তু মঙ্গলবার ট্রাম্প এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। প্রতিবেদনে যাই থাকুক না কেন, তার প্রশাসন সৌদি আরব তথা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশেই থাকবেন। এমনকি যুবরাজ সালমান খাশোগি হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আগে থেকে জেনে থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নীতিতে কোনো রদবদল করবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘হয়তো তিনি এ কাজ করেছেন, হয়তো করেননি।’ প্রকৃত সত্য হয়তো কখনোই জানা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই সৌদি আরবের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের অবনতি চান না।
আরও পড়ুন : যে কারণে মেয়েদের কাছে গোপনাঙ্গের ছবি পাঠায় পুরুষ
Advertisement
এই গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কর্মসংস্থান নির্ভর করছে। তাই সে দেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে তিনি মার্কিন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
ট্রাম্প বলেন, এমন ‘বোকামি’ করলে আখেরে রাশিয়া ও চীনের লাভ হবে। এছাড়া ইরানের উপর সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে সে দেশ বিশ্ব বাজারে পেট্রোলিয়াম রফতানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থায় পেট্রোলিয়ামের মূল্য কম রাখতে সৌদি আরব উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তুত।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চাপালে সেই নিশ্চয়তা আর থাকবে না বলে মনে করেন ট্রাম্প। অতএব বিশ্ব অর্থনীতি ও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির স্বার্থে তিনি সৌদি আরবের প্রতি কোনো ‘বোকামি’ করবেন না বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন : প্রেমিককে জবাই করে মাংস রান্না করলেন প্রেমিকা
Advertisement
ট্রাম্প প্রশাসনের মূল্যায়নের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হচ্ছে, এমনটা ধরে নেয়া কঠিন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের একাধিক সংসদ সদস্য ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে যুবরাজ সালমানের প্রতি অন্ধ সমর্থন ত্যাগ করে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন। তারা সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত দ্বিতীয় একটি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্য ফ্রান্সিস রুনি সেইসঙ্গে ম্যাগনিটস্কি আইন প্রয়োগ করে খাশগজির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ডাক দিয়েছেন। এই আইনের আওতায় আমেরিকায় এমন ব্যক্তিদের বিষয়-সম্পত্তি আটক করা ও মার্কিন নাগরিকদের তাদের সঙ্গে ব্যবসা নিষিদ্ধ করা সম্ভব। এরই মধ্যে খাশোগি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ১৭ সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আরও পড়ুন : সৌদিতে নারী বন্দিদের যৌন হয়রানির অভিযোগ
অনেক সংসদ সদস্য অস্ত্র বিক্রির স্বার্থ সংক্রান্ত যুক্তিও মানতে নারাজ। তাদের মতে, সৌদি আরবের পক্ষে রাতারাতি আমেরিকার উপর এ বিষয়ে নির্ভরতা কাটানো সম্ভব নয়। এমন চাপের মুখেও ট্রাম্প আপাতত অটল রয়েছেন। তার প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ক্ষেত্রে সৌদি আরবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ট্রাম্পের জামাই ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও সৌদি যুবরাজ সালমানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ইসরায়েলের সঙ্গেও সৌদি আরবের সহযোগিতা বেড়ে চলেছে। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আমেরিকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনোরকম সমস্যা দেখা দিলে তিনি সৌদি আরবের বিষয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে প্রস্তুত। ডিডব্লিউ।
এসআইএস/পিআর