আন্তর্জাতিক

যে কারণে মেয়েদের কাছে গোপনাঙ্গের ছবি পাঠায় পুরুষ

তিনদিন আগে শেষবার স্ন্যাপচ্যাটে একজন নারীকে নিজের পূর্ণ অবয়বের একটি ছবি পাঠিয়েছেন ব্রিটেনের বিগ ব্রাদার অনুষ্ঠানের সাবেক একজন প্রতিযোগী লুইস গ্রেগরী।

Advertisement

‘আমরা কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম, কথায় কথায় প্রসঙ্গ ওঠায় আমরা পরস্পরকে একটা-দুটা ছবি পাঠালাম’- লুইস বিবিসির ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানে বলেছেন।

‘‘মাঝেমধ্যে আমি একটু ‘ফ্লার্ট’ করতে চাইলে, মেয়েদের ছবি পাঠাতে বলি। কখনো তারাও পাঠাতে বলে। ধরুন, আমি হয়তো মেয়েটির গোসল করার সময়কার কোন ছবি পাই অথবা আমি নিজেই হয়তো ওই রকম একটা ছবি পাঠাই।’’

আরও পড়ুন : সৌদিতে নারী বন্দিদের যৌন হয়রানির অভিযোগ

Advertisement

গ্রেগরী বলছেন, তিনি এরকম ছবি যখন পাঠান, সেটা অবশ্যই হয় পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। কারো সম্মতি ছাড়া নিজের যৌনাঙ্গের ছবি আরেকজনকে পাঠানোটা ‘আজব’ এবং ‘বিকৃতমনস্ক’ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আমি সেটা কখনোই করবো না। তার পাঠানো ছবি নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোন নারী অভিযোগ জানাননি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সারা দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী-পুরুষ পরস্পরের কাছে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ ছবি পাঠিয়ে থাকেন।

কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ছবি বলতে অনেকেই মূলত যৌনাঙ্গের ছবি পাঠান, যা ‘ডিক পিক্স’ নামেও পরিচিত। বিশেষ করে নারীদের কাছে পুরুষদের এ ধরণের ছবি পাঠানো নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা রয়েছে। কেউ একে বিকৃত মানসিকতা বলেন। আবার কেউ বলেন, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে; উভয় পক্ষই নিজেদের পক্ষে যুক্তি দেন।

আগের মত চমকাই না

লেখক ও সাবেক মডেল স্টিনা স্যান্ডারস জানিয়েছেন, তিনি অপরিচিত পুরুষদের কাছ থেকে রোজ দুই-তিনটি আপত্তিকর ছবি পেয়ে থাকেন। গত তিন থেকে পাঁচ বছর যাবৎ তিনি এ ধরনের ছবি পেয়ে আসছেন এবং তিনি বলছেন, সেগুলো সবই ছিল ‘অনাকাঙ্ক্ষিত।’

Advertisement

আরও পড়ুন : প্রেমিককে জবাই করে মাংস রান্না করলেন প্রেমিকা

‘প্রথম যখন যখন এমন ছবি পেতে শুরু করি, সেটা ছিল খুবই অস্বস্তিকর এবং বিভীষিকাময়। কিছুতেই সেসব দেখতে চাইতাম না। কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, আগের মত আমি আর চমকে যাই না আপত্তিকর ছবি পেলে।’

স্যান্ডারস মনে করেন, তার কাজের ধরনের কারণেই হয়ত পুরুষেরা মনে করেন তাকে যৌনাঙ্গের ছবি পাঠানো যায়। আমি নারী-পুরুষ সম্পর্ক, ডেটিং এবং যৌন সম্পর্ক নিয়ে লেখালেখি করি, মানুষ হয়ত এটাকে ‘আমন্ত্রণমূলক’ অবস্থান বলে মনে করে। কিন্তু আদতে ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। স্যান্ডারস অনেক সময় পাল্টা মেসেজ পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, কেন তাকে এমন ছবি পাঠানো হয়েছে। অনেক পুরুষ জবাব দেননি, কিন্তু কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা কেবল ‘হ্যালো’ বলতে চেয়েছিলেন।

সচেতনতার ভীষণ অভাব

প্রতি তিনজন ব্রিটিশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে দু’জনই মনে করেন অপরিচিত কাউকে নিজের যৌনাঙ্গের ছবি পাঠানো একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। বিবিসির রেডিও ফাইভের করা এক জরিপে সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন : মেয়েদের দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করা সহজ করে দিল যে পদ্ধতি

ব্রিটেনের বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির প্রচলিত আইনে ইতিমধ্যে এর বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কনজারভেটিভ পার্টির এমপি মারিয়া মিলার বলেছেন, তিনি এ নিয়ে নতুন আইন চান। তিনি বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে না হয়ে যদি বাস্তবে এ ঘটনা ঘটতো, তাহলে সেটা ‘অশ্লীল ভঙ্গিমা’র অপরাধে শাস্তিযোগ্য হতো।

মিলার জানিয়েছেন, তাকে টুইটারে একজন পুরুষ নিজের যৌনাঙ্গের ছবি পাঠিয়েছে। কিন্তু তিনি চিন্তিত এ ধরনের ছবি শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর কেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নারী ও সমতা বিষয়ক কমিটির প্রধান মিজ মিলার বলছেন, ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে আপত্তিকর ছবি পাঠানো একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবং বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনে সচেতনতার ভীষণ অভাব রয়েছে।

‘এছাড়া আমাদের অনলাইনের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারো বয়স ১৮ কিনা তা বোঝার তো উপায় নেই। তবে স্কুলে এ বিষয় নিয়ে যদি শেখানো হয়, ছেলেমেয়েরা আরো সচেতন হবে। এজন্য যদি কোন অ্যাপ তৈরি করা যায়, আপত্তিকর ছবি পাঠানোর আগে হয়ত সেটি আপনাকে সাবধান করে দেবে যে এটি যথাযথ নয়।’

যারা এমন ছবি পাঠায়, তাদেরও বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখার দরকার। বিশেষ করে গ্রেগরীর মত যারা কেবল মজা করার জন্য আপত্তিকর ছবি বিনিময় করেন, তাদের উচিত নিজের কাজের পূর্ণ দায়িত্ব নেয়া।

এসআইএস/পিআর